মুন্সিগঞ্জ, ২৪ এপ্রিল, ২০২০, শিহাব আহমেদ (আমার বিক্রমপুর)
অনেকটা দেরিতে হলেও ১৩৬ বর্গকিলোমিটারের আড়িয়াল বিলের ২৪ হাজার একর জমির ধান কাটতে আসতে শুরু করেছে ধান কাটার শ্রমিকরা।
বিশেষ ব্যবস্থায় তাদের আনা হয়েছে মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার আড়িয়াল বিলের ধান কাটতে। তবে বৃষ্টিপাতের কারনে ধান ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার শঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। আর ৪০ হাজার টন ধান উৎপাদনের যে লক্ষ্যমাত্রা তার কতটুকু পূরন হবে তা নিয়েও অনেকটা চিন্তিত স্থানীয় প্রশাসন থেকে শুরু করে সরকারের উচ্চমহল।
বৃহস্পতিবার (২৩ এপ্রিল) আড়িয়াল বিলে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বৃষ্টি শুরু হওয়ায় ধান কাটার ফাকে বিলের ধারে ছোট ছোট টিনের ঘরে অবস্থান নিয়েছেন শ্রমিকরা। সেখানেই কয়েকজন শ্রমিকের সাথে কথা হয় এই প্রতিবেদকের।
তারা জানান, টানা ৭-৮ বৎসর যাবৎ বৈশাখের আগে তারা ধান কাটতে আসেন আড়িয়াল বিলে। ১৫-২০ দিন এখানে তারা কাজ করেন। তবে এবার করোনা পরিস্থিতিতির কারনে দেরিতে আসতে হয়েছে তাদের। এর মধ্যে থেমে থেমে চলছে বৃষ্টিপাত। এখন কতদিন কাজ করতে পারবেন ঠিক বুঝে উঠতে পারছেন না তারা।
শ্রমিক রাজ্জাক মিয়া (২৬) জানান, সারাদিন ধান কাটলে তাদের মজুরি হিসেবে ১ মণ ধান দেয় জমির মহাজনরা। ১ মণ ধানের বাজারমূল্য প্রায় ৭০০ টাকা। তারা এই ধান বিক্রি করেন না। বাড়িতে নিয়ে যান। সারা বছর এই ধান দিয়ে তাদের সংসার চলে।
যদি প্রতিজন ২০ দিন ধান কাটতে পারেন মজুরি হিসেবে প্রত্যেকে পাবেন ২০মণ ধান। যার বাজার মূল্য ১২-১৪ হাজার টাকা।
ধান কাটতে আসলে ধান ক্ষেতের মালিকরাই তাদের থাকা ও খাবারের ব্যবস্থা করেন। তবে অসুস্থ হয়ে পড়লে চিকিৎসা করতে হয় নিজের টাকা খরচঁ করে। মজুরি হিসেবে পাওয়া ধান বাড়ি পর্যন্ত নিয়ে যেতে তাদের নিজেদের খরচ করতে হয় বাড়তি টাকা।
তারা বলছেন, সারাদিন ধান কেটে মজুরি হিসেবে ১ মণ ধান তাদের ‘পোষায় না’।
শ্রমিক ছগির হোসাইন (৩০) বলেন, এই বছর ধান কাটতে আসায় দেরি হওয়ার কারনে তাদের কিছুটা সমস্যা হবে। তারা মজুরি হিসেবে ধান কম নিয়ে যেতে পারবেন। তবে আর্থিক অস্বচ্ছলতা তাদের সারাবছরই থাকে। অর্থনৈতিক দুরবস্থা তাদের সয়ে গেছে।
চলাচলে বিভিন্ন বিধি-নিষেধ এর কারণ তারা যানতেন না। করোনাভাইরাসের নাম বিভিন্নভাবে শুনলেও সেটা কিভাবে ছড়ায় জানেন না এই শ্রমিকরা।
শ্রমিকদের সর্দার (যিনি তাদের কাছে একরকম নেতা) আবুল হাশেম (৩৬) বলেন, করোনা পরিস্থিতির কারনে আড়িয়াল বিলের ধান কাটতে আসতে তাদের যাতে রাস্তায় সমস্যা না হয় সেজন্য তারা নাম-ঠিকানা দিয়ে আগেই ছাড়পত্র নিয়ে এসেছেন।
শ্রীনগর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা রুনা লায়লা বলেন, আড়িয়াল বিলের ধান কাটতে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে। দ্রুত যাতে ধান কেটে শেষ করা যায় এজন্য আধুনিক মেশিনের ব্যবস্থাও করা হচ্ছে।
মুন্সিগঞ্জের জেলা প্রশাসক মনিরুজ্জামান তালুকদার বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে মুন্সিগঞ্জ জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আড়িয়াল বিলের কৃষকদের সকল ধরনের সহযোগিতা করতে প্রশাসন কাজ করছে। শ্রমিকদের নিরাপত্তা ও সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির বিষয়টিও প্রশাসনের পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে।