মুন্সিগঞ্জ, ৬ মার্চ, ২০২২, শিহাব আহমেদ (আমার বিক্রমপুর)
এত বড় আকৃতির মিষ্টি কুমড়া বাংলাদেশের অন্য কোথাও দেখা যায় না। নানা পদ্ধতিতে নানাভাবে এই সাইজের কুমড়া চাষের চেষ্টা করলেও আজ পর্যন্ত সফল হতে পারেননি কেউ।
এমনকি কোন কৃষিবিদও এই রহস্য ভেদ করতে পারেননি। এই বিশালাকৃতির কুমড়া নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে রয়েছে নানারকম কল্পকাহিনী।
স্থানীয় চাষীদের মধ্যে এই বড় সাইজের কুমড়া নিয়ে নানারকম মিথ প্রচলিত রয়েছে। যেগুলোর বাস্তবিক কোন ভিত্তি নেই।
শ্রীনগর উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, প্রাকৃতিক জীববৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ আড়িয়াল বিলের মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার গাদিঘাট, আলমপুর, শ্রীধরপুর, বাড়ৈখালি সহ বিলের বিভিন্ন অংশে চলতি বছর প্রায় ১৪৫ হেক্টর জমিতে কোনরকম পরিচর্যা ছাড়াই প্রাকৃতিক উপায়ে প্রতিবছর এই দানবাকৃতির মিষ্টি কুমড়া উৎপাদন হয়েছে।
ভিডিও প্রতিবেদন:
তবে গেল ডিসেম্বরে ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদ পরবর্তী বৃষ্টিপাতের কারনে আড়িয়াল বিলে আবাদকৃত কুমড়া সহ অন্যান্য সবজির চাষাবাদ কোন কোন জায়গায় আংশিক আবার কোন জায়গায় সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এ কারনে এবছর আড়িয়াল বিলে কুমড়া উৎপাদন গত বছরের চেয়ে কম হয়েছে।
আড়িয়াল বিলের একেকটি বড় সাইজের কুমড়ার ওজন ১০ কেজি থেকে ১৫০ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে। প্রতিবছর শুষ্ক মৌসুমে আড়িয়াল বিলের বিস্তীর্ণ উর্বর উচু ভূমিতে কুমড়া চাষের পর তা বিক্রি করে স্থানীয় চাষীরা জীবিকা নির্বাহ করেন।
এখানকার কুমড়ার সাইজ দেখে মনে হতে পারে এই কুমড়া চাষে নানা উদ্ভাবনী পন্থা বোধহয় রয়েছে কৃষকের। আসলে তা নয়- আড়িয়াল বিলের মাটি ভূ-প্রকৃতিগতভাবে উর্বর হওয়াতে এই আলাদা বৈশিষ্ট্য কুমড়াগুলোর। দেখতে রিষ্ট-পুষ্ট হলেও আড়িয়াল বিলে কুমড়া চাষে কৃষকের বিনিয়োগ সাধারণ কুমড়া চাষীদের চেয়েও কম।
গতবছরের চেয়ে এবছর কুমড়ার মান ও উৎপাদন কম হলেও পূর্বের তুলনায় বাজারে দাম ভালো পাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন একাধিক চাষি ও পাইকাররা।
ভোর সকাল থেকেই আড়িয়াল বিলে কুমড়া আহরণে বেড়িয়ে পড়েন চাষিরা। বিকালে এসব কুমড়া পাইকারদার হাত ধরে চলে যায় ঢাকার বিভিন্ন হাট-বাজারে। স্থানীয়রা কুমড়াকে মিষ্টি লাউ নামেও ডেকে থাকেন।
পাইকারদের কাছে ১৫-১৮ টাকা কেজি দরে প্রতিটি কুমড়া বিক্রি করেন স্থানীয় চাষিরা। পাইকাররা হাটে নিয়ে খুচরা বিক্রেতাদের কাছে এই কুমড়া বিক্রি করেন ২০-২৪ টাকা কেজি। খুচরা পর্যায়ে কুমড়াগুলো বিক্রি হয় ৪০-৫০ টাকা কেজিতে।
শ্রীনগর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কর্মকর্তা শান্তণা রানি জানান, বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় বীজ পাঠিয়ে আড়িয়াল বিলের অনুরুপ আকৃতির কুমড়া উৎপাদন করার চেষ্টা করা হলেও সফল হতে পারেননি কেউ। এই সাইজের কুমড়া অন্য জমিতে উৎপাদন সম্ভব না।
তিনি জানান, আড়িয়াল বিলে ৬-৮ মাস পানি থাকে। তখন পানির নিচে নানা প্রজাতীর জলজ উদ্ভিদ জন্ম নেয়। যখন পানি শুকিয়ে যায় তখন এই উদ্ভিদগুলো পচেঁ মাটির সাথে মিশে উৎকৃষ্টমানের জৈব সারে রুপান্তরিত হয়। আমরা মনে করি- মিষ্টি কুমড়ার এত বড় সাইজের রহস্যের পেছনে আড়িয়াল বিলের মাটির গুনাগুনের মূখ্য ভূমিকা রয়েছে।