১৮ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
বুধবার | সন্ধ্যা ৬:২৩
‘আমাকে জিজ্ঞেস করে বাংলাদেশে কোথায় আপনার বাড়ি’
খবরটি শেয়ার করুন:

সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের ছবিতে তার করা গান থাকছেই। তার নিজের দেশের চেয়ে বাংলাদেশে কাজের ব্যস্ততা একটু বেশি বটে! জন্ম ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বহরামপুরে। প্রথমে ছিলেন ঔষুধ কোম্পানীর ম্যানেজার। ২০০৩ সাল থেকে গান করেন। একটি ব্যান্ড থেকে ‘সুইটি’ নামে একটি অ্যালবাম বের হয়েছিল তার। টাইটেল গানটি তাকে অনেক জনপ্রিয় করে তোলে। একসময় চাকরি ছেড়ে মুম্বাই গিয়েছিলেন ভাগ্যান্বেষণে। ভাগ্য তাকে আবার কলকাতায় ফিরিয়ে নিয়ে আসে।

আকাশ সেন। তিনি কলকাতার সঙ্গীত পরিচালক। ‘আমি শুধু চেয়েছি তোমায়’-এর ‘বাংলাদেশের মেয়ে’ গানটি দিয়ে এদেশে তার পরিচিতি। এরপর এদেশের ‘মোস্ট ওয়েলকাম-২’, ‘রোমিও ভার্সেস জুলিয়েট’, ‘স্বপ্ন যে তুই’, ‘মেন্টাল’ ও ‘অগ্নি-২’তে গান করেছেন। ‘অগ্নি-২’র প্রচারণার জন্য বাংলাদেশে এসেছেন ৭ জুলাই। জাজের অফিসে কথা হল তার সাথে।

কতদিন আছেন বাংলাদেশে?

ঈদের পর পর্যন্ত আছি। ‘অগ্নি-২’ এর প্রচারণায় সারা বাংলাদেশ ঘোরার ইচ্ছে আছে। আর প্রথমবার বাংলাদেশে এলাম বিখ্যাত জায়গায়গুলোতে সময় পেলে বেড়াতে যাব। এছাড়া বিভিন্ন টিভি চ্যানেলের ঈদ কনসার্টে অংশ নেব।

আপনার শুশুরবাড়ি তো এখানে, যাবেন?

হ্যাঁ, চট্টগ্রামের পটিয়ায়। যদিও আমার বউ বড় হয়েছে ওখানেই। কিন্তু আমার শশুরমশায় তো বাংলাদেশে আসার কথা শুনে খুব উত্তেজিত ছিলেন। আমাকে বলেছিলেন, ‘তুমি কিন্তু অবশ্যই চট্টগ্রাম থেকে ঘুরে আসবে।’

কলকাতার চেয়ে বাংলাদেশে বেশি জনপ্রিয় আপনি, কতটুকু সত্য?

সত্য কিনা জানি না। তবে ‘বাংলাদেশের মেয়ে’ গানটি হিট করার পর অনেকে আমাকে বাংলাদেশের মনে করে। এমন হয়েছে এক কনসার্টে মাইকে ঘোষণা করা হচ্ছে, ‘কলকাতার জনপ্রিয় সঙ্গীত পরিচালক বাংলাদেশের আকাশ সেন এখন মঞ্চে আসবে।’ আমি ধমক দিলাম এটা কেন? তারা বলল তারা নাকি জানতো আমি এখানকার ছেলে। এখনও অনেকে আমাকে জিজ্ঞেস করে বাংলাদেশে কোথায় আপনার বাড়ি?

‘অগ্নি-২’তে চারটা গান আপনার করা। কোন বিষয়টিকে মাথায় রেখে গানগুলো করেছেন? টার্গেট শ্রোতা কারা?

এখানে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে ‘অগ্নি’ জাজ ও মাহির ‘টার্নিং পয়েন্ট’। যার কারণে প্রচুর গান বানাতে হয়েছে। প্রায় পনেরটি গান থেকে মাত্র চারটি গান বাছাই করা হয়েছে। যদিও বাকি গানগুলো অন্য ছবিতে আমার কাজে লেগেছে। কিন্তু মানের ক্ষেত্রে কোন ছাড় ছিল না। আর ‘টার্গেট শ্রোতা বা দর্শক’ হচ্ছে বাণিজ্যিক ছবির দর্শক। আর ‘অগ্নি-২’ এর ফুল অ্যালবাম একটা লাভলি প্যাকেজ।

আপনাকে ‘হিট মেশিন’ বলা হচ্ছে। কিন্তু আপনি কি মনে করেন আপনার করা গানগুলো আজ থেকে ৫০ বছর পরও আপনাকে বাঁচিয়ে রাখবে মানুষের মাঝে?

যদি পুরো ছবির অ্যালবাম করতে দেওয়া হয় তাহলে আমি মিক্সড ধরনের গান করার চেষ্টা করি। সাথে দু-একটা মেলোডিয়াস গান রাখার চেষ্টাও থাকে। ‘বানজারা’, ‘তোকে খুঁজি’, ‘আল্লাহ জানে’ অনেকদিন মানুষের মাঝে থাকবে। যদিও ‘একখান চুমু’ ,‘বাংলাদেশের মেয়ে’ এগুলোও ব্যাপক জনপ্রিয়। কিন্তু এগুলোর চেয়ে ‘বানজারা’, ‘আমার মত কে আছ বল’ গানগুলোর ‘রিকল ভ্যালু’ অনেক।

কিন্তু ‘বানজারা’ তো দুটো গানের সুর ভেঙ্গে বানানো। এ নিয়ে আপনার সমালোচনাও হচ্ছে।

‘আমার মত কে আছে বল’, ‘বানজারা’ দুটো গানই আমার করা এবং মানুষ আজীবন মনে রাখার মত। দুটো গানকে আলাদা গান করতে গিয়ে একটু দুটো লাইন কখনও কখনও এক হতেই পারে। আমার সুর যেটা একটা প্রজেক্টে গেছে সেটা ভাল হলে অন্য জায়গায় আমি ব্যবহার করতেই পারি। এটাতে ভারাক্রান্ত হবার কিছু নেই। আর শচিন দেববর্মন, সলীল চৌধুরী থেকে শুরু করে জিৎ গাঙ্গুলী তাদের বাংলা গানগুলো হিন্দিতে করেছেন। এটা তাদের ‘সিগনেচার’ বিধায় তারা অন্যত্রও ব্যবহার করছেন।

কলকাতার চেয়ে আপনার বাংলাদেশে ব্যস্ততা বেশি মনে হচ্ছে

যদি হয়ে থাকে আমি আনন্দিত। কারণ টলিউডে কলকাতার বাংলা ফিল্ম একমাত্র ফিল্ম না। ওখানে হিন্দি, ভোজপুরী, তামিলসহ অনেক ছবির সাথে প্রতিযোগিতা করতে হয়। ঢালিউড একমাত্র ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি যেখানে আমার মাতৃভাষা বাংলায় কাজটা হয়। তাই হয়তো কাজটা বেশি হয়ে যাচ্ছে।

‘কলকাতার বাংলা ছবিতে বাণিজ্য নেই’- কলকাতার বিখ্যাত পত্র-পত্রিকার খবর। টালিউডে কাজ করা একজন হিসেবে আপনার কাছে প্রশ্ন- আসল সত্য কী?

বাণিজ্যর ভাল খারাপ নির্ভর করে আপনি কত টাকা খরচ করছেন আর কত টাকা রিটার্ন আসছে। ৭ কোটি টাকার মার্কেটে যদি আপনি ১০কোটি টাকা খরচ করে ছবি বানান তাহলে কিন্তু রিস্ক থাকে। কিন্তু যারা প্রপার কস্টিং করে ছবি বানাচ্ছে তারা কিন্তু ঠিকই টাকা তুলে আনছে। তা না হলে প্রতি মাসে ৪-৫টা ফিল্ম কিভাবে রিলিজ হচ্ছে? আর তারা এত বোকা না যে টাকা না উঠলে বিনিয়োগ করবে।

কাকে গুরু মানেন?

আরডি বর্মন থেকে শুরু করে সবাই আমার গুরু। আমার কলিগ স্যাভিও আমার গুরু। কারণ তার একটা গান হিট করলে কেন হিট করল এটা জানা আমার জরুরি। এখানকার জেমস, এলআরবি’র গান আমার প্রিয়। তারাও আমার গুরু।

তাদের সাথে যোগাযোগ কিংবা পরিচয় আছে?

না তা নেই। কিন্তু তোমাদের ইমরানের সাথে পরিচয় আছে।

‘বাংলাদেশের বাংলা ও কলকাতার বাংলা’- বলার ধরণের মাঝে পার্থক্য আছে। দুদেশের জন্য গান তৈরির সময় এটাকে সমন্বয় করেন কিভাবে? সমস্যা হয় না?

কথ্য বাংলায় পার্থক্য আছে একটু-আধটু। বাংলাদেশের বাংলাটা অনেক মিষ্টি। কিন্তু গায়কি তুমি যে ভাষায় গাও না কেন কোনো পার্থক্য নেই। তবে একটা শব্দে পার্থক্য আছে। যেমন ‘অগ্নি-২’র ‘আল্লাহ জানে’ গানটায় ‘তুই আমার ল্যায়লা’ বলা হয়েছে। ইউটিউবে দেখলাম তোমাদের এখানে ‘লায়লা’ বলে- তাই অনেকে কমেন্ট করছে ‘লায়লা’ হলে ভাল হত।

ভবিষ্যত স্বপ্ন কী?

মরার আগ পর্যন্ত কাজ করে যেতে চাই। ইন্ডাস্ট্রি যেন আমাকে শেষ দিন পর্যন্ত মনে রাখে।