মুন্সিগঞ্জে প্রতি বছরের মতো চলতি মৌসুমের আলু উত্তোলনের মহোৎসব শুরু হয়েছে।
এ জেলার ৬টি উপজেলার প্রধান অর্থকরী ফসল এটি হওয়ায় এবং তা উত্তোলনের সময় ঘনিয়ে আসায় কৃষকরা এখন ৬টি উপজেলার বিস্তীর্ন এলাকা জুড়ে রোপন করা আলু জমি গুলো এখন কৃষকের পদচারনায় মুখর হয়ে উঠছে। এ বছর আলুর বাম্পার ফলন হবে বলে কৃষককূল আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।
গতকাল রবিবার দুপুরে সরেজমিনে মুন্সিগঞ্জের লৌহজংয়ের নওপাড়া বাজার সড়ক সংলগ্ন জমিতে আলু উত্তোলনের পর বাড়ীর আঙিনায় নিতে উত্তর হাটী গ্রামের কৃষক হারুন মিয়াও তার ছোট ভাই রমিজ মিয়াকে ব্যস্ত সময় কাটাতে দেখা গেছে। এ সময় তাদের সঙ্গে কথা হলে এবার তাদের জমিতে রোপন করা আলুর ফলন ভালো হয়েছে বলে সাংবাদিককে জানিয়েছেন।
অন্যদিকে আলু উত্তোলন শুরু হওয়ায় কৃষকের বাড়ির গৃহীনি ও শিশুরা জমিতে নেমে আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে উঠেছেন।
সেই সঙ্গে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আগত হাজার হাজার শ্রমিকরাও কৃষকের সঙ্গে চুক্তি করে আলু উত্তোলন করতে বিভিন্ন গ্রাম ও হাটবাজার গুলোতে জড়ো হচ্ছেন। তারা কৃষকের নির্দেশনা মতো আলু উত্তোলন, জমি থেকে হিমাগারে ও বাড়ির আঙ্গিনায় পৌছে দেওয়ার কাজ করবেন।
উপজেলার লৌহজংয়ের খিদির পাড়া গ্রামের কৃষক রবিউল হোসেন জানান, এবার তিনি ৫৪০ শতাংশ জমিতে আলু রোপন করেছেন। সব খরচ মিলিয়ে প্রতি কানি অর্থাৎ ১’শ ৪০ শতাংশ জমিতে আলু আবাদের ব্যয় হয়েছে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা। গত বছরের মতো এবারও আলু আবাদে লাভবান হওয়ার আশবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
তেওটিয়া ইউনিয়নের কৃষক আজিজুল সিকদার জানান, তিনি ৫ কানি জমিতে এবার আলু রোপন করেছেন। চলতি ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ সপ্তাহে তিনি আলু উত্তোলন করতে শ্রমিক নিয়োগ করেছেন। তার মতো জেলার বিস্তীর্ন এলাকা জুড়ে আলু উত্তোলনের মহোৎসব উদযাপন করতে কৃষকরা এখন ব্যস্ত সময় কাটানোর লক্ষ্যে সকল প্রস্তুুতি সম্পন্ন করতে মহাব্যস্ত। গত দুই মৌসুমে আলু ফলন ভালো হওয়া এবং বিক্রিতে লাভবান হওয়ায় মুন্সীগঞ্জের কৃষকরা এবারও আলুর বাম্পার ফলন হওয়ার আশবাদ ব্যক্ত করেছেন।
মাকহাটী গ্রামের কৃষক নজরুল মোল্লা জানান, তিনি ৪৪ শতাংশ জমিতে আলু রোপন করেছেন। আলুর ফলন ভালো হবে এমন আশায় গত এক মাস ধরে প্রতিদিনই শ্রমিকদের নিয়ে ইঞ্জিন চালিত মেশিন দিয়ে জমিতে পানি ছিটানোর কাজে ব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন।
টঙ্গিবাড়ী উপজেলার ধামারণ গ্রামের বাদশা মিয়া জানান, যে সব এলাকায় জমি উচুঁ এবং আগে রোপন করেছেন তারা এখন আলু উত্তোলন করে নিজ বাড়ীর আঙিনায় নিতে শুরু করেছেন। পাশাপাশি তা সংরক্ষনের জন্য বিভিন্ন কোল্ড স্টোরেজ গুলোতে যোগাযোগ করছেন। তিনি আরও জানান, তার রোপন করা জমিতে আলুর ভালো ফলনের আশায় গত তিন সপ্তাহ ধরে ভাড়া করা মেশিন দিয়ে পানি ছিটিয়ে আলু গাছের পরিচর্যা করেছেন। কয়েক দিনের মধ্যে তিনিও আলু উত্তোলন শুরু করতে প্রস্তুুতি নিচ্ছেন।
মুন্সিগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর সূত্র জানায়, চলতি মৌসুমে মুন্সিগঞ্জ জেলায় ৩৮ হাজার ৫৫০ হেক্টর জমিতে আলু আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয়। গত মৌসুমে ১৩ লাখ ৫১ হাজার ১২৯ মেট্রিক টন আলু উৎপাদন হয়েছিল। এর মধ্যে ৬০ থেকে ৬৫ হাজার মেট্রিক টন আলু বীজ হিসেবে সংরক্ষন করা হয়েছিল।