করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে যেখানে ইউরোপের বেশিরভাগ দেশে লকডাউন চলছে, সেখানে সুইডেনের অধিকাংশ নাগরিকই কীভাবে অনেকটা স্বাভাবিক জীবনযাপন চালিয়ে যেতে পারছেন তা নিয়ে দেখা দিয়েছে প্রশ্ন। এরই মধ্যে সুইডেনের বিভিন্ন পানশালায় মানুষের ছবি থেকে শুরু করে আইসক্রিমের দোকানের সামনে মানুষের দীর্ঘ লাইনের ছবি সামাজিক মাধ্যমে শেয়ার হয়েছে। শুধু তাই নয়, অন্য অনেক দেশে বন্ধ থাকলেও সুইডেনে অনূর্ধ্ব-১৬ বছর বয়সীদের স্কুলগুলো খোলা রাখা হয়েছে, যাতে অভিভাবকরা নিজেদের কাজ চালিয়ে যেতে পারে। এতে প্রশ্নটা আরও বড় আকারে দেখা দিচ্ছে অনেকের মধ্যে।
বিবিসির প্রতিবেদন বলছে, সামাজিক মাধ্যমে দেখা ছবি থেকে সুইডেনে পুরোপুরি স্বাভাবিক জীবনযাপন চলছে- এ ধারণা করা ঠিক হবে না। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, সুইডেনে হয়তো লকডাউনের পরিধি খুব সামান্য, কিন্তু আছে। দেশটির বিভিন্ন তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এখানকার জনসংখ্যার বেশিরভাগই স্বেচ্ছায় সামাজিক দূরত্ব মেনে চলছেন। এ কারণে সুইডেনে ভাইরাস সংক্রমণ তুলনামুলকভাবে কম। এছাড়া করোনা সংক্রমণের শুরু থেকেই সুইডেনের নাগরিকরা আরও কিছু ব্যবস্থা মেনে চলেছেন। যেমন- দেশটিতে গণপরিবহন ব্যবহারের পরিমাণ কমেছে। জনসংখ্যার একটা বড় অংশ ঘরে থেকে কাজ করছেন । এছাড়া বেশিরভাগ নাগরিকই ইস্টারের ছুটিতে কোথাও ভ্রমণ করেননি।
করোনার প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে সুইডেন সরকার বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয়। যেমন- ৫০ জনের বেশি মানুষ একসঙ্গে জমায়েত হওয়া এবং বৃদ্ধনিবাসে যাওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
নোভাস নামের একটি জরিপ পরিচালনা করা প্রতিষ্ঠানের সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে, প্রতি ১০ জন সুইডিশের ৯ জনই অন্য ব্যক্তির চেয়ে অন্তত এক মিটার দূরত্ব বজায় রাখেন।
নোভাস নামের একটি জরিপ পরিচালনা করা প্রতিষ্ঠানের সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে, প্রতি ১০ জন সুইডিশের ৯ জনই অন্য ব্যক্তির চেয়ে অন্তত এক মিটার দূরত্ব বজায় রাখেন।
দেশটির বিজ্ঞানীরা লকডাউনের পরিবর্তে দেশটিতে এই কৌশলটি চালু করেছেন। দেশটির সরকারও এটিকে সমর্থন করেছে। যদিও সুইডেনের সব ভাইরোলজিস্ট এখনও এই কৌশল নিয়ে পুরোপুরি আশ্বস্ত নন। অনেকেই এই কৌশল নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
দেশটির মহামারি বিশেষজ্ঞ আন্দ্রেস টেগনেল বলেন, ‘আমরা যা অর্জন করতে চেয়েছিলাম তার অনেকটাই পেরেছি। সুইডেনের স্বাস্থ্য বিভাগ যদিও যথেষ্ট চাপের মধ্যে তাদের কাজ করে যাচ্ছে, কিন্তু তাদের এখনও কোনো রোগীকে ফিরিয়ে দিতে হয়নি।’
সুইডেনের বৃহত্তম মেডিকেল গবেষণা প্রতিষ্ঠানের একজন মহামারি বিশেষজ্ঞ ও সমালোচক ক্লডিয়া হ্যানসন মনে করেন, করোনা প্রতিরোধে লকডাউনের ব্যাপারে সরকারের আরও কঠোর পদক্ষেপ নেয়া উচিত ছিল।
চলতি সপ্তাহে প্রকাশিত দেশটির স্বাস্থ্য সংস্থার এক প্রতিবেদনে মে মাসের শুরুতে সুইডেনের ২৬ শতাংশ মানুষের মধ্যে ভাইরাস সংক্রমণ হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে অনেক খ্যাতনামা বিজ্ঞানীই ধারণা করছেন, দেশটিতে মৃত্যুর হার আরো অনেক বেশি হবে।
বিশ্লেষকদের মতে, সুইডেনের পরিস্থিতি কী হতে পারে তা নির্ভর করছে সেদেশের মানুষ সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার নিয়মকানুন মানছে কিনা, তার ওপর।
সুইডেনে থাকা অনেকে বিশ্বাস করছেন, সংকটের সবচেয়ে খারাপ ধাপ পার হয়ে গেছে। এ কারণে মানুষ ধীরে ধীরে সামাজিক দূরত্ব মানার ব্যাপারে আগ্রহ হারাচ্ছে। তবে দেশটির প্রধানমন্ত্রী স্টেফান লভরেন সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার বিষয়টি নিয়ে বারবার জনগণকে সতর্ক থাকতে বলেছেন। সেই সঙ্গে পরিবারের সঙ্গে বেশি বেশি সময় কাটাতে আহ্বান জানিয়েছেন।
এ পর্যন্ত সুইডেনে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ১৮ হাজার ১৭৭ জন। এর মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ২ হাজার ১৯২ জনের।