মুন্সিগঞ্জ, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, বিশেষ প্রতিনিধি, (আমার বিক্রমপুর)
মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার মোল্লাকান্দি ইউনিয়নের মহেশপুর গ্রামের প্রবাসী ব্যবসায়ী ও স্থানীয়ভাবে আওয়ামী লীগের নেতা হিসেবে পরিচিত ইউসুফ হাসানকে ইয়াবা দিয়ে ফাঁসানোর অভিযোগ করে ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন করেছে ইউসুফের পরিবার।
তাদের অভিযোগ, মোল্লাকান্দি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রার্থী হওয়ায় প্রতিপক্ষরা তাকে ‘র্যাব’ দিয়ে ফাঁসিয়েছে।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে র্যাব।
বাহিনীটি বলছে, ইউসুফ একজন পরিচিত মাদক ব্যবসায়ী। তার বিরুদ্ধে থানায় বেশ কয়েকটি মামলাও আছে। উল্টো তার (ইউসুফ) দলবল র্যাবের গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়ার হুমকি ও হামলা চালিয়েছে।
বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টায় বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনে এক সংবাদ সম্মেলনে এই অভিযোগ করেন ইউসুফ হাসানের স্ত্রী রুমি আক্তার।
রুমি বলেন, ‘আমার স্বামী ইউসুফ হাসান দীর্ঘদিন যাবত কাতারে পোশাকের ব্যবসা করে আসছেন। তিনি প্রতি মাসেই কাতারে ব্যবসায়িক কাজে আসা-যাওয়া করেন। তিনি এলাকার গরিব-দুঃখী মানুষসহ সর্বস্তরের মানুষের বিপদ-আপদে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন। সেই সুবাদে তিনি মুন্সিগঞ্জের সবার কাছে একজন জনপ্রিয় লোক। গত তিন মাস আগে মোল্লাকান্দি ইউনিয়ন এবং জেলার আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের অনুরোধে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি পদপ্রার্থী হন তিনি।’
‘তিনি ছোটবেলা থেকেই ছাত্রলীগ, পরে যুবলীগ এবং বর্তমানে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তবে কখনোই কোনো পদ পদবির লোভ করেননি এবং তিনি নিতেও চাননি।’
ইউসুফের স্ত্রী বলেন, ‘গত ৪ সেপ্টেম্বর মোল্লাকান্দি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সম্মেলন হওয়ার কথা ছিল এবং সেই সম্মেলনে আমার স্বামী ইউসুফ হাসানকে সভাপতি মনোনীত করার সব কাজ চূড়ান্ত করেছিলেন উপজেলা এবং জেলা আওয়ামী লীগের নেতারা। সম্মেলন উপলক্ষে ৩ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার সন্ধ্যায় উপজেলা এবং ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ, যুবলীগ এবং ছাত্রলীগের সাবেক এবং বর্তমান নেতাদের উপস্থিতিতে আমার নিজ বাড়িতে একটি সভার আয়োজন করা হয়।’
‘এতে ইউনিয়ন চেয়ারম্যান কল্পনা আক্তার এবং ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি ফরহাদ খা উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু সন্ধ্যা ৭টার সময় র্যাব-১১ এর একটি দল সাদা পোশাক পরিহিত অবস্থায় আমার বাসায় ঢুকে। তারা আমার বাসা থেকে আমার স্বামীকে ছাড়া বাকি সবাইকে জোরপূর্বক বের করে দেয়। কোনো কারণ ছাড়া র্যাব আমার স্বামীকে হেনস্থা করে এবং তাকে বের করে নিয়ে যেতে চাইলে স্থানীয় জনগণ মানবপ্রাচীর তৈরি করে ব্যারিকেড দেয়।’
রুমি আক্তার বলেন, ‘পরে র্যাব সদস্যরা তাদের নির্ধারিত পোশাক পরিধান করে এবং আমার স্বামীকে আমার বাড়ি সংলগ্ন নদীর পাড়ে নিয়ে যায়। আমার এলাকার জনগণ সেখানেও র্যাবকে ঘেরাও দেয়। উপায় না দেখে র্যাব এলাকার পুরুষ মহিলাসহ দুই শতাধিক মানুষকে পিটিয়ে আহত করে। পরে ইউসুফ হাসানকে র্যাব কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। এলাকার মানুষ সেখানে গিয়েও তার মুক্তির দাবিতে রাতভর বিক্ষোভ করে।’
এ সংক্রান্ত প্রকাশিত কিছু প্রতিবেদনঃ ১. যেভাবে র্যাব আটক করে ইউসুফকে ২. মোল্লাকান্দির ইউসুফ র্যাবের হাতে আটক ৩. কে এই ইউসুফ? কি কারনে তাকে আটক করলো র্যাব? ৪. মোল্লাকান্দির ‘কিং’ র্যাবের জালে, ব্যাপক তান্ডব ৫. ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রার্থী ছিলেন ইউসুফ
৪ সেপ্টেম্বর মুন্সিগঞ্জ সদর থানায় তাকে হস্তান্তর করেন। পরে ইউসুফ হাসানের বিরুদ্ধে মাদক এবং ভাঙচুরের মিথ্যা মামলা দায়ের করেন র্যাব কর্মকর্তা নবী হোসেন। এ মামলাগুলো সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
ইউসুফের স্ত্রী বলেন, ‘আমার স্বামী একজন প্রতিষ্ঠিত বস্ত্র ব্যবসায়ী। তিনি কখনো মাদক সেবন করেননি এবং তার জীবনের কোনো পর্যায়েই মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। এমন কোনো অভিযোগ কোথাও নেই এবং কোনো থানায়ও কোনো মামলা নেই।’
রুমি আক্তার সংবাদ সম্মেলনে আরও জানান, ঘটনার একদিন পরে আমরা জানলাম বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে আসা কিছু লোক এবং আওয়ামী লীগের একটি অংশ র্যাবকে ম্যানেজ করে এমন ঘটনা ঘটিয়েছে। এমনকি র্যাব এলাকায় খুনি পরিবার নামে খ্যাত এমন একজন আছান মাঝিকে সাক্ষী করেছে। পিন্টু মিয়া নামে অন্য একজনকে সাক্ষী করেছে যিনি জানেনই না তাকে সাক্ষী করা হয়েছে।
রুমি বলেন, ‘আমার স্বামী একজন হার্টের রোগী। হার্টে দুইটি রিং বসানো আছে। আমার নিরপরাধ স্বামীকে মুক্তি ও ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রধানমন্ত্রী ও বিশ্ব মানবতার মা শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করছি।’
অভিযোগ বিষয়ে র্যাব-১১ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল শমসের উদ্দিন বলেন, ‘র্যাবের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করা হচ্ছে তা ভিত্তিহীন। আমরা তাকে ফাঁসাতে আটক করিনি। দীর্ঘদিন ধরেই আমাদের কাছে অভিযোগ ছিল তিনি (ইউসুফ) ইয়াবার ব্যবসা করছেন। পরে অভিযান চালিয়ে তাকে ইয়াবাসহ আটক করা হয়।’
‘অভিযানে র্যাবের ওপর হামলা ও গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হচ্ছিল। এসব অভিযোগে তার বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা করা হয়েছে। গ্রেপ্তার ইউসুফের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় চারটির বেশি মামলা আছে। এক সময় কাতারে ব্যবসা করলেও সেখানে তার বিরুদ্ধে মামলা হওয়ায় পালিয়ে দেশে চলে এসেছে বলে র্যাব জানতে পেরেছে।’