মুন্সিগঞ্জ, ২৩ জুন ২০২৪, নিজস্ব প্রতিনিধি (আমার বিক্রমপুর)
মুন্সিগঞ্জের গজারিয়ায় উপজেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত দলটির প্লাটিনাম জয়ন্তী উদযাপন অনুষ্ঠানে ব্যানারে নাম না দেয়াকে কেন্দ্র করে বিবদমান দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে সাংবাদিকসহ দুই জন আহত হন।
রোববার বিকাল সাড়ে ৫ টার দিকে উপজেলার ভবেরচর ইউনিয়নের আনারপুরা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
আহতরা হলেন, স্থানীয় সাংবাদিক সোলায়মান শিকদার (৩২) ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মনসুর আহমেদ খান জিন্নাহ সমর্থক মোহাম্মদ হোসেন (২২)। এরা গজারিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পূর্ব বিরোধ ও ব্যানারে নাম না দেয়াকে কেন্দ্র করে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আমিরুল ইসলাম পক্ষের ডা. মাজহারুল হক তপনের লোকজনের সাথে সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান মনসুর আহমেদ খান জিন্নাহর সমর্থকদের মধ্যে এ সংঘর্ষ হয়।
গজারিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আমিরুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন আহমেদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সোহানা তাহামিনা ও প্রধান বক্তা ছিলেন মুন্সিগঞ্জ ৩ আসনের সংসদ সদস্য মোহাম্মদ ফয়সাল বিপ্লব।
জানা যায়, সম্প্রতি অনুষ্ঠিত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করে পরাজিত হন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আমিরুল ইসলাম, নির্বাচনে জয়ী সাধারণ সম্পাদক মনসুর আহমেদ খান জিন্নাহ গ্রুপের সাথে এ নিয়ে বিরোধ রয়েছে।
আওয়ামী লীগের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে রোববার বিকালে উপজেলার আনারপুরা এলাকায় আলোচনা সভায় দুই গ্রুপের নেতাকর্মীরা উপস্থিত হন।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও গজারিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মনসুর আহমেদ খান জিন্নাহর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠান শুরু করার প্রাক্কালে ব্যানারে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দাবিদার সরকারি কর্মকর্তা ডা. মাজহারুল হক তপনের নাম না থাকায় ও তার জন্য চেয়ার নির্ধারিত না রাখায় সাথে আসা নেতা-কর্মীরা ক্ষুব্ধ হয়ে আমন্ত্রিতদের সামনেই নানা স্লোগান দিতে থাকেন।
এসময় মনসুর আহমেদ খান জিন্নাহ সমর্থক মোহাম্মদ হোসেন তাদের শান্ত হতে বললে তাকে বেধড়ক মারধর করে ডা. মাজহারুল হক তপন সমর্থকরা। পুরো ঘটনাটি ফেসবুকে লাইভ করতে গিয়ে হামলার শিকার হন ফাল্গুনী টিভি নামে একটি আইপি টিভির সাংবাদিক সোলায়মান শিকদার। হামলাকারীরা তাকে পিটিয়ে আহত করে। এসময় উভয় পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি ও অর্ধশত চেয়ার ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ ও সংসদ সদস্য ফয়সাল বিপ্লবের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও গজারিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মনসুর আহমেদ খান জিন্নাহ বলেন, ‘সরকারি চাকরি বিধি অনুযায়ী মাজহারুল হক তপন সরাসরি দলীয় রাজনীতি করতে পারেন না। তিনি সবজায়গায় নিজেকে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দাবি করেন। আসলে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি তাকে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক করে কোন চিঠি দেননি। আজকের যেই সংঘর্ষের ঘটনা সেটি তার কারণেই হয়েছে।’
বক্তব্য জানতে অধ্যাপক ডা. মাজহারুল হক তপনের সাথে যোগাযোগ করা হলে বিষয়টি নিয়ে তিনি পরে কথা বলবেন বলে জানান।
গজারিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক কামরুন নাহার বলেন, ‘সন্ধ্যা পৌনে ছয়টার দিকে আমাদের হাসপাতালে দুজন রোগী নিয়ে আসা হয়। তাদের মধ্যে হোসেনের মাথায় আঘাত এবং সোলেমান শিকদারের গালে ও গায়ে আঘাত রয়েছে। তাদের চিকিৎসা চলছে।’
গজারিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাজিব খান বলেন, ‘সমাবেশস্থলে আমাদের সদস্য মোতায়েন ছিলো। তবে হঠাৎ করেই হট্টগোল হয়। এসময় দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে পুলিশ। পরবর্তীতে অনুষ্ঠান ভালোভাবে সম্পন্ন হয়। কোন পক্ষ আমাদের লিখিত অভিযোগ করেনি এখনো।’