মুন্সিগঞ্জ, ২ এপ্রিল, ২০২১, বিশেষ প্রতিনিধি (আমার বিক্রমপুর)
মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলায় সালিসে ছুরিকাঘাতে তিন জনকে হত্যার ঘটনার অন্যতম আসামী আলভী মুনতাসিম ওরফে অভিকে (২০)গ্রেপ্তার করেছে মুন্সিগঞ্জ ডিবি পুলিশ।
আজ শুক্রবার (২ এপ্রিল) বিকেলে এ তথ্য নিশ্চিত করে ডিবি। এর আগে শুক্রবার ভোরে ঢাকার পুরানো পল্টন এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার অভি এ হত্যা মামলার ৬ নম্বর আসামি।
মুন্সিগঞ্জ ডিবি পুলিশ পরিদর্শক মোজাম্মেল হক জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারি আসামি অভি ঢাকার পুরানো পল্টন এলাকায় অবস্থান করছে। সেখানে অভিযান চালিয়ে অভিকে গ্রেপ্তার করা হয়। আসামিকে বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। আসামি মামলা সংক্রান্তে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদান করেছে। যা তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
এদিকে ঘটনার ১০ দিন পেরিয়ে গেলেও সরাসরি ঘটনার সাথে জড়িত অন্য আসামিরা ধরা না পড়ায় উদ্বেগ দেখা দিয়েছে নিহতের পরিবার ও জনমনে।
স্থানীয়রা বলছেন, মুন্সিগঞ্জের ইতিহাসে একসাথে তিন খুন এটিই প্রথম। চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকান্ডে যারা মূল আসামিদের মধ্যে অন্যতম অভি ধরা পড়েছে। তবে সৌরভ, সিহাব, শামীম, শাকিবরা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে আছে। এসব ভয়ঙ্কর আসামিরা যদি ধরা না পড়ে,আইনের মাধ্যমে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা না হয়, তাহলে তারা যেখানেই থাকুক এর চাইতে আরো বড় ঘটনা ঘটাতে পারে। এজন্য দ্রুত তাদেরকে আইনের আওতায় এনে সর্বোচ্চ শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
নিহত সাকিবের বাবা বাচ্চু মিয়া বলেন, ঘটনার দিন শামীম প্রধানই আমার চোখের সামনে, আমার ছেলেকে প্রথম আঘাত করেছিল। চোখের সামনে একমাত্র ছেলেকে হত্যা করলো।এ ঘটনায় শামীমের দুই ভাই সিহাব প্রধান ও শাকবি প্রধান সরাসরি জড়িত। তারা এখনো গ্রেপ্তার হয়নি। আমি আমার ছেলেসহ তিন খুনের সাথে যারা জড়িত সবার ফাঁসি চাই।
মুন্সিগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবুবক্কর সিদ্দিক জানান, রিমান্ডে আসামিদের জবানবন্দি নেওয়া হচ্ছে। শুক্রবার সব আসামিদের ৫ দিনের রিমান্ড শেষ হচ্ছে। আসামিদের আদালতের মাধ্যমে আবারো রিমান্ড চাওয়া হবে।রিমান্ডে থাকা আসামিদের কাছ থেকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিদিন অভিযান চালানো হচ্ছে। এ মামলার অন্য আসামিদের গ্রেপ্তার করতে পুলিশের একাধিক দল কাজ করছে। আশা করছি খুব শীঘ্রই ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে।
ডিবি পুলিশ জানায়, দ্রুত অগ্রগতির জন্য মামলাটি শনিবার ডিবি পুলিশের কাছে হস্তান্তর করার কথা রয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ২৪ মার্চ বুধবার বিকেলে উত্তর ইসলামপুর এলাকায় দুটি কিশোর গ্যাং এর মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। সেখানে হাতাহাতির ঘটনাও ঘটে। সমস্যার সমাধান করতে সেদিন রাত ১০ টার দিকে দুই পক্ষকে নিয়ে সালিসে বসা হয়। সেখানে সৌরভ,সিহাব,শামীম পক্ষের ছুরিকাঘাতে প্রাণ যায় অপর পক্ষের মো. ইমন হোসেন (২২), মো. সাকিব হোসেন (১৯) ও মিন্টু প্রধান (৪০)। এ দুই পক্ষের সবার বাড়ি উত্তর ইসলামপুর এলাকায়।
নিহত মিন্টু প্রধানের স্ত্রী খালেদা আক্তার বাদী হয়ে ঘটনার পরদিন ২৫ মার্চ বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১২ টার পর একটি হত্যা মামলা করে। মামলায় ১২ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরো ১০-১৫ জনকে আসামী করা হয়। সে মামলার এজহার নামীয় জামাল হোসেন (৫২), মো.জাহাঙ্গীর হোসেন (৫০), মো.রনি (৩২), মো.ইমরান হোসেন (২০), রাহুল প্রধান (২২)। এবং সন্দেহভাজন হিসবে জামালের স্ত্রী নাসরিন বেগম (৪০)কে গ্রেপ্তার করা হয়। আসামিদের ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হয়। গত রোববার বেলা ১২ টার দিকে আমলি আদালত-১ এর বিচারক অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কাজী কামরুল ইসলাম এজহারনামীয় পাঁচজনকে ৫ দিন ও এক নারীকে তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।