কাজী সাব্বির আহমেদ দীপুঃ মুন্সিগঞ্জ জেলার ৬টি উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে চলছে আলু রোপণের মহোৎসব। কৃষকের ব্যস্ততা দেখে বোঝার উপায় নেই, গত কয়েক মৌসুমে তারা লাখ লাখ টাকার লোকসানের কবলে পড়ে আর্থিক ক্ষতির শিকার হয়েছেন। চলতি মৌসুমের শুরু থেকেই কৃষকদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে মুন্সিগঞ্জের আবাদি জমিতে আলু রোপণ করে যাচ্ছেন বিভিন্ন জেলা থেকে আগত লক্ষাধিক পুরুষ ও নারী শ্রমিক। তারা দিন ভিত্তিতে ও চুক্তি হিসেবে কৃষকের জমিতে আলু রোপণ করে যাচ্ছেন। নভেম্বরে শুরু হওয়া আলু রোপণ কাজে ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যস্ত থাকবেন কৃষকরা। সেসঙ্গে বাড়ির আঙিনায় কৃষকদের সহযোগিতায় সার্বক্ষণিক কাজ করে যাচ্ছেন বাড়ির গৃহিণীরাও। টঙ্গিবাড়ীর ধামারণ গ্রামের বাবুল মিয়ার স্ত্রী পারভিন আক্তার জানান, এবারও তারা জমিতে আলু রোপণ করছেন। এ জন্য কৃষক স্বামী নুরুল ইসলামকে সাহায্য করতে নিজ বাড়ির উঠানে বসে আলুর বীজ কেটে দিচ্ছেন। প্রতিবেশী গৃহবধূরাও মজুরি পাওয়ায় আশায় এ কাজে যুক্ত হয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলার ৭৫ থেকে ৮০ হাজার কৃষক পরিবার আলু আবাদের সঙ্গে জড়িত। তাই পরিবারগুলো এখন আলু রোপণ করে লাভের আশায় নতুন স্বপ্ন বুনছে। বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, সদর উপজেলার চরাঞ্চলের চরকেওয়ার, বাংলাবাজার, মোল্লাকান্দি, শিলই ও আধারা ইউনিয়নের সর্বত্র, টঙ্গিবাড়ী উপজেলার আলদী, ধামারণ, কাঠাদিয়া, শিমুলিয়া, যশলং, ধীপুরসহ বিভিন্ন গ্রামে এবং সিরাজদীখান, লৌহজং, গজারিয়া ও শ্রীনগর উপজেলাজুড়েও আলু রোপণ কাজে কৃষকের ব্যস্ততার দৃশ্য। তাদের সঙ্গে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন বিভিন্ন জেলার শ্রমিকরা।
কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আলু আবাদের মৌসুম এলে রংপুর, দিনাজপুর, গাইবান্ধা, নীলফামারী, ময়মনসিংহ, কুড়িগ্রামসহ উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে এসে শ্রমিকরা রোপণ কাজে নিয়োজিত হন। জেলার ৬টি উপজেলায় লক্ষাধিক শ্রমিক বর্তমানে কৃষকের সঙ্গে আলু রোপণ কাজে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। রংপুর জেলা থেকে আগত শ্রমিক আব্বাস মিয়া জানান, কোথাও চুক্তি অনুযায়ী আবার কোথাও দিনভিত্তিতে মজুরি নিয়ে তারা কৃষকের জমিতে আলু রোপণ কাজ করছেন। রোপণ কাজ শেষে ফিরে যাওয়ার পর আলু উত্তোলনের সময় তারা আবারও আসবেন মুন্সিগঞ্জ জেলায়। কৃষকরা শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি দেওয়ায় তারাও খুশি মনে আলু রোপণ কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
মুন্সিগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা আল মামুন জানান, চলতি মৌসুমে জেলায় ৩৯ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে আলু আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। শীতের শুরুতেই মুন্সিগঞ্জ সদর, সিরাজদীখান, লৌহজং, টঙ্গিবাড়ী, গজারিয়া ও শ্রীনগর উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে আলু আবাদের উৎসব শুরু হয়েছে। সবচেয়ে বেশি আলু আবাদ হচ্ছে জেলা সদরেই। গত মৌসুমে জেলায় ৩৯ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে আলু আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও ৩৮ হাজার ৫৫০ হেক্টর জমিতে আলু আবাদ হয়েছিল।