মুন্সিগঞ্জ, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, নিজস্ব প্রতিনিধি (আমার বিক্রমপুর)
মুন্সিগঞ্জের গজারিয়ায় কাজে যাওয়ার পথে অসুস্থ হয়ে মারা গেছেন জেলা জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ৩ এর অফিস সহায়ক মিজানুর রহমান (৪৫)।
পরিবারের দাবি, গতকাল (মঙ্গলবার) দায়িত্ব পালনকালে তীব্র অসুস্থতা বোধ করায় আদালতে বিচারকের দায়িত্বে থাকা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. শহিদুল ইসলামের কাছে ছুটি চান তিনি। তবে ছুটি না দিয়ে উল্টো মৃত অফিস সহায়ক মিজানুরকে শারিরীক হেনস্তা করা হয়।
পরিবার জানায়, আজ বুধবার সকাল ৮টার দিকে উপজেলার ইমামপুর ইউনিয়নের চর কালিপুরা (বেরু মোল্লাকান্দি) এলাকায় নিজ বসতবাড়ি থেকে তীব্র অসুস্থতা নিয়ে আদালতের উদ্দেশ্যে বের হন মিজানুর। পথে ষোলআনী ঝাপটা সড়কে বুক ব্যাথায় ঢলে পড়েন তিনি। আশপাশের লোকজন ধরাধরি করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়ার পথে মৃত্যু হয় তার।
মিজানুর ওই এলাকার মৃত নুরুল ইসলাম মোল্লার পুত্র এবং এক ছেলে (অটিজম আক্রান্ত) ও ২ মেয়ে সন্তানের জনক। তিনি গেল ১৬ বছর যাবৎ অফিস সহকারি হিসাবে মুন্সিগঞ্জ জেলা জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে কাজ করতেন।
মৃত মিজানুর রহমানের স্ত্রী ফাতেমা তুজ জোহরা অভিযোগ করে বলেন, ‘এক সপ্তাহ যাবৎ আমার স্বামী অসুস্থ, তিনি শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন। গতকাল অফিসে যাওয়ার সময়ই আমি তাকে মানা করি। কিন্তু তিনি শোনেননি। পরে আদালতে গিয়ে তিনি ওই বিচারকের কাছে মৌখিকভাবে ছুটির আবেদন করেন। কিন্তু দায়িত্বপ্রাপ্ত আদালতের বিচারক মো. শহিদুল ইসলাম বিষয়টি আমলে না নিয়ে উল্টো আমার স্বামীকে নানাভাবে হেনস্তা করেন। একপর্যায়ে বিচারক আমার স্বামীকে দীর্ঘক্ষণ দাড় করিয়ে রাখেন। এসময় ‘আট তলা থেকে ফেলে দিবো’, ‘চামড়া ছিলে লবণ দিয়ে দিবো’ ইত্যাদি মন্তব্য করে তাকে আরও মানসিক চাপের মধ্যে ফেলে দেন। বাসায় ফিরে আমার স্বামী এসব কথা আমাকে জানান।’
তিনি বলেন, ‘আজ সকালে বাসা থেকে বের হওয়ার সময় আমার স্বামীকে অসুস্থতা নিয়ে কাজে যেতে মানা করেছিলাম। কিন্তু তিনি আমাকে বলেন- ‘না গেলে লাল কালি দিয়া দিবে।’ বিচারকের দায়িত্ব ছিলো আমাার স্বামীকে সঠিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করা। কিন্তু তিনি সেটি তো করলেনই না উল্টো তার ছুটি মঞ্জুরও করেননি। একজন বিচারক কিভাবে এমন আচরণ করেন, আমি তার শাস্তি চাই।’
দায়িত্বশীল সূত্রে জানা যায়, মিজানুর রহমান জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ৩-এ অফিস সহায়ক হিসেবে কর্মরত ছিলেন, যার দায়িত্বে ছিলেন বিচারক নাজনীন আক্তার। তিনি মাতৃত্বকালীন ছুটিতে থাকায় অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছিলেন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ৪ এর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. শহিদুল ইসলাম।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. শহিদুল ইসলামকে একাধিক গণমাধ্যম কর্মী কয়েক দফায় ফোন করলেও তিনি সাড়া দেননি।