ভাষাসৈনিক, শিক্ষক ও শিক্ষানুরাগী আফজাল হোসেন ভূইঁয়া আর নেই। তিনি বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টার দিকে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মুন্সীগঞ্জ শহরের মালপাড়া কর্মস্থলে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। (ইন্না লিল্লাহি ওয়াইন্নইলাহির রজিউন)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৮২ বছর। রাত সাড়ে ৮টায় নামাজে জানাযা শেষে দেওভোগ কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
স্থানীয় সূত্র জানান, ভাষাসৈনিক আফজাল হোসেন ভূইয়া নিজ কর্মস্থল কিশলয় কিন্ডারগার্টেন স্কুলের অভ্যন্তরীন মিটিং শেষে নিজ কক্ষে অবস্থান কালে অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাকে মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। আফজাল হোসেন ভূইঁয়া ১৯৩৩ সালের ৩০ শে ডিসেম্বর মুন্সীগঞ্জ পৌরসভার রনছ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বাবার নাম মোজাফফর হোসেন ভূইয়া। তিনি ছিলেন চিরঅকৃতদার। শেষ বয়সে ছোট ছোট শিশুদের মানুষ করতে শহরের মালপাড়া এলাকাস্থ কিশলয় কিন্ডার গার্টেন স্কুলের প্রিন্সিপাল হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
ভাষা সৈনিক আফজাল হোসেন ভূইঁয়ার কর্মজীবন শুরু হরগঙ্গা কলেজের প্রভাষক হিসেবে ১৯৫৯ সালে। এরপর ১৯৬৭ সালে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় কে. কে. গভ. ইনস্টিটিউশনে যোগদান করেন। পরবর্তীতে এ.ভি.জে.এম বালিকা বিদ্যালয়ে চাকরি শেষ করে ১৯৯১ সালে অবসর গ্রহণ করেন। ১৯৯১ সালে দেশ সেরা বিজ্ঞান শিক্ষক হন।
আফজাল হোসেন ভূইয়া ১৯৭১ সাল থেকে অদ্যবধি মুন্সীগঞ্জের প্রাচীন পাঠাগার হরেন্দ্রলাল পাবলিক লাইব্রেরির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ভাষা আন্দোলনের উত্তাপ শুরু থেকেই আফজাল হোসেন ভূইঁয়া জড়িয়ে পড়েন আন্দোলনে। ফজলুল হক মুসলিম হলের হাউজ টিউটর ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর একিউএমবি করিমের উৎসাহে ১৯৫০ সাল থেকেই ভাষার পক্ষে হাতে লেখা পোস্টার, দেয়াল লিখনে মধ্যদিয়ে আন্দোলনে অংশগ্রহণ তার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, হরগঙ্গা কলেজ ও মুন্সীগঞ্জে বিভিন্ন প্রতিবাদ সভা ও মিছিলে অংশগ্রহণ করেছেন এবং নেতৃত্ব দিয়েছেন।
পরবর্তীতে মুন্সীগঞ্জ ও হরগঙ্গা কলেজের ছাত্রদের ভাষা আন্দোলনে পক্ষে সার্বিক সহযোগিতা করার কারণে আফজাল হোসেন ভূইয়া ১৯৫৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্রেপ্তার হয় এবং একমাস ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে কারাবন্দি ছিলেন। ২০১০ সালে ভাষা আন্দোলনে অবদানের জন্য সংশোধনী পুরস্কার লাভ করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লেখাপড়া শেষে করে শ্রীলঙ্কার প্যারেদেনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চ শিক্ষাগ্রহণ করেন।