২রা ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
সোমবার | বিকাল ৫:৫৮
Search
Close this search box.
Search
Close this search box.
ফ্যাশন দুনিয়ার গোপন কথা
খবরটি শেয়ার করুন:

ফ্যাশন সচেতন হতে কে না ভালোবাসে? যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নিত্য নতুন বাহারী ফ্যাশনে নিজেকে সাজাতে চান সকলেই। ফ্যাশন দুনিয়ার অলিখিত নিয়মে নিজেকে ‘আপডেট’ করতে চান আধুনিকতার দোহাই দিয়ে। কিন্তু ফ্যাশন দুনিয়ার এমনও সব তথ্য আছে যা জানলে নিজেকে ‘ফ্যাশনেবল’ বলে দাবি করবেন না অনেকেই। ভাবতে বাধ্য হবেন- আমরাই ফ্যাশন সচেতন হই? নাকি ফ্যাশন দুনিয়াই তৈরি করছে তথাকথিত সচেতনতা?

ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিতে কৃত্রিম তুলার ব্যবহার সর্বত্র৷ জেনেটিক্যালি মডিফায়েড কটন বা বিটি কটন দিয়েই এই বিপুল পরিমাণ উৎপাদনের চাকা সচল রাখতে হয়৷ একদিকে এই তুলার যেমন কিছু সুবিধা আছে, তেমন ক্ষতিকর দিকটাও কম নয়। মানব শরীর ও প্রাকৃতিক পরিবেশ ব্যপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এই ধরনের তুলার কারণে। তুলার ব্যবহার বাড়ছে, দিন দিন বেড়েই চলছে এ ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা।
বেশীরভাগ পোশাক কারখানায় শিশুশ্রমিকদের দিয়ে কাজ করানো হয়৷ আমাদের দেশও তার ব্যতিক্রম নয়৷দৈনিক অল্প মজুরীতে বাচ্চাদের দিয়ে কাজ করিয়ে মােটা অংকের লাভ করে কারখানাগুলো। মানবাধিকার কিংবা নৈতিক প্রতিবন্ধকতা ভেঙে নারীদের দিয়েও করানো হয় স্বল্প বেতনের ভারী কাজ।
পোশাক এমনভাবে বানানো হয়, যাতে বেশীদিন না টেকে৷ সুতো থেকে রঙ- কারসাজি এমন থাকে, কিছুদিনের পরই পোশাক ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়ে। রঙ উঠে গেলে কিংবা সুতা ফেঁসে গেলে ফ্যাশন সচেতনতা ছাড়াই কিনতে হবে নতুন পোশাক।
নিত্যনতুন স্টাইল আমদানি করে ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রি আসলে বোঝাতে চায় যে, আপনার ব্যবহৃত জিনিসটি আর ট্রেন্ডি নয়৷ আসলে পুরোটাই বাজারের তৈরি করা চাহিদা ও ধারণা৷ বিশ্বের তথাকথিত ‘আপডেট’ মানুষ বিশেষত তরুণদের মধ্যে এ ধারণা ছড়াতে পারলেই সফল তারা।
অতি উৎপাদনের ফলে বর্জ্য পদার্থের পরিমাণও বেশি৷ সমীক্ষায় দেখা গেছে প্রায় ২ মিলিয়ন বর্জ্য পদার্থ তৈরি হয় এই ইন্ডাস্ট্রি থেকেই৷ প্রয়োজনমাফিক উৎপাদন হলে এই বিপুল পরিমাণ বর্জ্য থাকত না। দিন দিন বেড়ে চলছে বর্জ্যের পরিমান- পৃথিবীকে তৈরি হচ্ছে মহাবিশ্বের ভাগাড় স্বরূপ।

ডিসকাউন্ট বলে যা দেওয়া হয় তা আসলে শুভংকরের ফাঁকি ছাড়া কিছুই নয়৷ ফ্যাশন বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, দ্রুত উৎপাদনের ফলে পোশাকের গুণমান অনেকটাই কমেছে৷ সেই পোশাকের উপরেই ব্র্যান্ডভ্যালুতে নির্ধারিত বেশি দামের উপর ডিসকাউন্ট থাকছে৷ তাই মূল্য হ্রাস, ছাড় কিংবা একটি কিনলে আরেকটি ফ্রির সংবাদে উচ্ছসিত হওয়ার কিছু নেই ।
ফ্যাশন সচেতন- শব্দটি নেগেটিভ নয়। তবে ‘সচেতন’ শব্দটি নিয়ে সত্যিই সচেতন হতে হবে। তবেই এই বিষয়গুলো পরোক্ষভাবে ফ্যাশন সচেতন হতে ইন্ধন যোগাবে। আর ফ্যাশন শুধু ব্র্যান্ড, দাম, নতুনত্ব কিংবা স্বাতন্ত্র নয়- নিজেকে যথাযোগ্য করে উপস্থাপনই সচেতনতা। ব্যক্তিত্বের বহিঃপ্রকাশই ফ্যাশন, সঠিক ভাবে উপস্থাপন করাই সচেতনতা।
প্রতিনিয়ত নিজেকে ফ্যাশন সচেতন রাখার তাগিদে উপরের কারণগুলিতেও পরোক্ষভাবে ইন্ধন দিয়ে চলেছেন আপনি। আর কে না জানে, ফ্যাশন মানে স্রেফ নানা রকমের পোশাই নয়, নিজেকে সঠিকভাবে ক্যারি করতে পারা, প্রেজেন্ট করতে পারাও।

error: দুঃখিত!