মুন্সিগঞ্জের মিরকাদিম পৌরসভার বিএনপি মনোনীত প্রার্থী শামসুর রহমানের মনোনয়নপত্র বৈধ বলে ঘোষণা করেছে নির্বাচনী আপিল কর্তৃপক্ষ। আজ বৃহস্পতিবার মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কক্ষে অনুষ্ঠিত হওয়া আপিল শুনানি শেষে শামসুর রহমান প্রার্থিতা ফিরে যান।
প্রার্থিতা ফিরে পাওয়ার পর শামসুর রহমান জানান, পৌরকর অনাদায়ের অভিযোগে মিরকাদিম পৌরসভার রিটার্নিং কর্মকর্তা তাঁর মনোনয়নপত্র বাতিল করে দিয়েছিল। বাতিলের বিপক্ষে আপিল করলে আজ শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। শুনানিতে অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হওয়ায় প্রার্থিতা বহাল রেখেছে আপিল কর্তৃপক্ষ।
বিএনপির এই মেয়র পদপ্রার্থী বলেন, ‘তারা যে আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছিল, সেটি সম্পূর্ণভাবে প্রমাণিত হয়েছে। আমার বিরুদ্ধে নির্বাচনী অ্যাপিলাট অথরিটি ও জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম বাদলের কাছে মিথ্যা কাগজ দাখিল করেছিল তারা। তখন জেলা প্রশাসক তাদের কাগজপত্র নিয়ে আসতে বলে। তারা কাগজ দেয়। ডিসি সাহেব দেখেন, সেটি মিথ্যা, বানোয়াট। তখন তিনি আমার মনোনয়নপত্র বৈধ বলে ঘোষণা করেন।’
এর আগে সকাল সাড়ে ১০টা থেকে মুন্সীগঞ্জ ও মিরাকাদিম পৌরসভার মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র বাতিলের বিরুদ্ধে করা আপিলের শুনানি হয়। শুনানি শুরু হয় মিরকাদিম পৌরসভার ১০টি আপিলের শুনানির মাধ্যমে।
এর মধ্যে বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থীর আপিল ছাড়া বাকি নয়টি আপিল খারিজ হয়ে যায়। অন্যদিকে মুন্সীগঞ্জ পৌরসভার মোট ১১টি আপিল রয়েছে বলে জানিয়েছে আপিল কর্তৃপক্ষ।
‘হোল্ডিং’ নিয়ে বিএনপি প্রার্থী-ইসির দ্বন্দ্ব
মিরকাদিম পৌরসভায় বিএনপির প্রার্থী শামসুর রহমানের মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ের পর বাতিল করে দিয়েছিলেন নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা।
বাতিলের কারণ হিসেবে বলা হয়, পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের গোপালনগর এলাকায় ‘৮৪ নম্বর হোল্ডিংয়ে’ বাড়িটির মালিক শামসুর রহমান। সেই বাড়ির কর বাবদ তিন হাজার ৪৫৬ টাকা বকেয়া রয়েছে। সে কারণেই তাঁর মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে।
তবে শামসুর রহমানের দাবি, ‘৮৪ নম্বর হোল্ডিং’ নামে ওই এলাকায় কোনো হোল্ডিং নেই। তিনি ওই বাড়ির মালিকও নন। অথচ ষড়যন্ত্রমূলকভাবে তাঁকে নির্বাচন থেকে সরানোর জন্যই এটা করা হয়েছে, যার পেছনে রয়েছেন বর্তমান পৌর মেয়র শহীদুল ইসলাম শাহীন।
মনোনয়ন বাতিলের ব্যাপারে শামসুর রহমান বলেন, ‘৮৪ নম্বর হোল্ডিংয়ের বাড়ির বকেয়া কর দেখিয়ে আমার মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। কিন্তু ৮৪ নম্বর হোল্ডিং কোনটা? আমার ৮৪ নম্বর হোল্ডিংয়ে কোনো বাড়ি নাই। বাড়ি নাই তো কর আসল কই থিকা। এটা গভীর ষড়যন্ত্র। বর্তমান মেয়র শহীদুল ইসলাম শাহীন নির্বাচনে হারবেন বলে নতুন ফন্দি করে বকেয়া কর দেখিয়ে যাচাই-বাছাইকালে আমার মনোনয়নপত্র বাদ করিয়েছেন।’
‘এর বিরুদ্ধে আপিলে আমি রিটার্নিং কর্মকর্তাকে বলেছি, ৮৪ নম্বর হোল্ডিং যে আমার সেটার দলিল দেখাক, পর্চা দেখাক। পারবে না। ক্ষমতার অপব্যবহার আর পৌরসভাকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করল’, যোগ করেন শামসুর রহমান।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মিরকাদিম পৌরসভার সচিব বলছেন, কাগজে এই হোল্ডিং আছে। পৌরসভা বাড়ির মালিকের কাছে কর পাওনা আছে।
এ বিষয়ে ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. তাহের মুডো বলেন, ‘ভাই, আমি মুন্সীগঞ্জ শহরে যাচ্ছি। ৮৪ নম্বর হোল্ডিংয়ের বিষয়টি পৌরসভার লেজার দেখে বলতে হবে। এলাকায় হাজার হোল্ডিং আছে। সব কি মনে আছে?’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ২ নম্বর ওয়ার্ডের (পালবাড়ী) আশপাশের একাধিক দোকানদার বলেন, ৩০ বছর ধরে তাঁরা এখানে আছেন। কিন্তু কোনোদিন ৮৪ নম্বর হোল্ডিংয়ের ব্যাপারে তাঁরা কিছু জানেন না।
সরেজমিনে দেখা যায়, পালবাড়ীতে আগে শামসুর রহমান থাকতেন। এখন সেটা মেয়র শাহীনের শ্বশুর হাজি বছিরের বাড়ি। তিনি যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন।
পালবাড়ীর ভেতর ঢুকে দেখা যায়, বাড়িটি তিন ভাগে বিভক্ত। একটি অংশে থাকেন হাজি বছিরের চাচাতো ভাই মো. নাছির। তিনি বলেন, ‘আমরা দুই ভাই দুই বাড়িতে থাকি। আর পাশেরটা চাচাতো ভাই হাজি বছিরের। বাড়ির পৌরকর দেওয়া। আমার হোল্ডিং তো মনে নাই, ১০৪ বা ১০৫ হবে। তবে ৮৪ নম্বর হোল্ডিং এটা না।’
‘৮৪ নম্বর হোল্ডিং’ না থাকার ব্যাপারে মিরকাদিম পৌরসভার সচিব মো. বজলুর রহমান বলেন, ‘কাগজে আছে। ট্যাক্স পাই। আপনি রিটার্নিং অফিসারের কাছে যান, কাগজ দেখেন।’
অ্যাসেসমেন্ট কাগজ ও ট্যাক্স এন্ট্রি লেজার বুক দেখতে চাইলে পৌর সচিব বলেন, ‘অফিস নিয়মকানুন আছে। আবেদন করেন। সব দেব। তবে সময় লাগবে। কাজের চাপ আছে।’
মিরকাদিম প্রথম শ্রেণির পৌরসভা। দায়িত্বরত মেয়র শহীদুল ইসলাম শাহীন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন। এবার তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছন।