মুন্সিগঞ্জ, ২০ অক্টোবর, ২০২০, বিশেষ প্রতিনিধি (আমার বিক্রমপুর)
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার মহাকালি ইউনিয়নের ‘চৌধুরী বাজার মঠ’।
এর চারিদিকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে নানান প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। যা দেখতে মুন্সিগঞ্জের বিভিন্ন এলাকা ও বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রতিদিনই পর্যটকরা ভিড় করছেন।
মুন্সিগঞ্জ জেলার সদর উপজেলার মহাকালি ইউনিয়নের কেওয়ার গ্রামে অবস্থিত চৌধুরী বাজার মঠ। মুন্সিগঞ্জ সদর হতে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই মঠটি। এ মঠটি এখনও অক্ষত অবস্থায় রয়েছে।
এক সময় এই জনপদে হিন্দু সম্প্রদায়ের একক আধিপত্য ছিল। এলাকায় সেই সময় শ্রীনাথ চৌধুরী প্রভাবশালী ব্যক্তি ছিলেন।
এলাকায় জনশ্রুতি আছে যে, শ্রীনাথ চৌধুরী তার পিতার সমাধি স্থলের ওপর এ মঠটি নির্মাণ করে ছিল।
শ্রীনাথ চৌধুরীর সাথে ময়মনসিংহ জেলার মুক্তাগাছার কৃষ্টপুর এলাকার ভূপতি জমিদারের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল।
আর সেই ধারণা মতে, মুক্তাগাছার রাজা জগৎ কিশোর আচায্য চৌধুরীর পরিবারের সাথে তার পারিবারিক সম্পর্ক ছিল। এই রাজ পরিবারের শ্রীনাথ চৌধুরীর “খুব সুন্দরী” এক কন্যাকেও বিয়ে দেন।
রাজা জগৎ কিশোর আচায্য চৌধুরী বহুবারই এ বিক্রমপুরে এসেছিলেন এবং এ মঠটির যাবতীয় ব্যয় ভার রাজা জগৎ কিশোর আচায্য চৌধুরী বহন করেন। তিনি চৌধুরী বাড়ি হতে নদীর তীর পর্যন্ত একটি রাস্তাও তৈরি করে দেন। সে রাস্তাটি আজো আছে।
চৌধুরী বাজার মঠ ও মন্দিরের সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন প্রয়াত কেদারেশ্বর চৌধুরী। ওরফে জলা মোক্তার। তিনি পেশায় একজন অভিজ্ঞ মোক্তার ছিলেন। এলাকায় তিনি জলা মোক্তার নামে পরিচিত। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাক বাহিনীর দালালরা জলা মোক্তার সহ চৌধুরীবাড়ি থেকে ধরে এনে ১৭ জনকে হত্যা করে।
মঠের নিচে যে মন্দির ছিল, সেখানে কয়েকটি কষ্টি পাথরের বিষ্ণু মূর্তি ছিল। এ মূর্তিগুলো স্বর্ণের চোখে অলংকৃত ছিল। এগুলো ’৭১-এর যুদ্ধের আগেই চুরি হয়ে যায়। মঠটির আনুমানিক উচ্চতা ২০০ ফুট।
মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার সর্ববৃহৎ উচ্চতা বিশিষ্ট মঠ এটি। অযত্ন অবহেলায় মঠটির নিম্নভাগের প্লাস্টার খসে পড়েছে, কিন্তু উপরিভাগ অক্ষত অবস্থায় আছে। বর্তমানে মঠটির নিম্নভাগে নতুন করে প্লাষ্টার করা হয়েছে। মঠটির ভেতরে একটি কালী প্রতিমা রয়েছে। তবে প্লাষ্টার করে গেট করে দেয়ায় সেটি বাইরে থেকে সাধারণ মানুষের দেখার সুযোগ নেই।
স্থানীয় হিন্দুরা এখনো কালীপূজার সময় এখানে পূজা দেন বলে ধারনা পাওয়া যায়। মঠটির চতুর্দিকে ছোট্ট ছোট্ট ছিদ্র থাকায় নানা ধরণের পাখি বর্তমানে বসবাস করছে। মঠের উপরিভাগে বেশ কিছু টিয়া পাখি হইচই করতে দেখা যায়।
পাখির কলকাকলির শব্দে বিকেলে অন্য রকমের পরিবেশ সৃষ্টি হয়। এখানে আগত দর্শনার্থীদের জন্যে এটা খুবই আনন্দদায়ক ও মনোরম দৃশ্য।