২৮শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
সোমবার | সন্ধ্যা ৬:২১
পৌর ভোটে রাজনৈতিক জটিলতায় পড়বেন বিপ্লব-শাহিন
খবরটি শেয়ার করুন:

শিহাব অাহমেদ: অাসন্ন পৌরসভা নির্বাচনে সর্বাধিক অালোচিত দুই ব্যাক্তি মুন্সিগঞ্জ সদরে ফয়সাল বিপ্লব ও মিরকাদিমের বর্তমান মেয়র শহিদুল ইসলাম শাহিন উভয়েই পড়বেন রাজনৈতিক জটিলতায়।

জেলা নির্বাচন অফিস সূত্র মতে, মুন্সিগঞ্জ পৌরসভায় বর্তমান ভোটার ৪৬ হাজার ২৩ জন। এর মধ্যে নারী ভোটার ২২ হাজার ৫১৮জন এবং পুরুষ ভোটার ২৩ হাজার ৫০৫জন। মিরকাদিম পৌরসভায় ভোটার সংখ্যা ৩৩ হাজার ৫৫৯ জন। এর মধ্যে নারী ভোটার ১৬,১৩৫জন এবং পুরুষ ভোটার ১৭ হাজার ৪২৪ জন।

মুন্সিগঞ্জ পৌরসভায় অাওয়ামীলীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী সম্ভাব্য মেয়রপ্রার্থী ফয়সাল বিপ্লব পৌরসভার ভোটারদের কাছে তেমন জনপ্রিয় না হলেও জেলায় ও বিশেষ করে জেলা শহরে অাওয়ামীলীগের রাজনীতিতে দীর্ঘদীন যাবৎ সক্রিয় অাছেন তিনি। রাজনীতিতে তার অনুসারী-সমর্থক ও কম নয়। তাছাড়া জেলা অাওয়ামীলীগের সভাপতি ও জেলা’র প্রভাবশালী অাওয়ামী নেতা মহিউদ্দিন পুত্র ফয়সাল বিপ্লব। মুন্সিগঞ্জ জেলা অাওয়ামীলীগেও ভিন্ন প্রভাব রয়েছে তার। পাশাপাশি অাছে বিভিন্ন ভালো কাজের জনশ্রুতি। কিন্তু কেন্দীয় অাওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সূত্র মতে পৌরসভা নির্বাচনে কোন ব্যাক্তিকে দলীয় মনোনয়ন দেয়ার ক্ষেত্রে অাওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি ও সংসদীয় বোর্ড যৌথভাবে সিদ্ধান্ত দিলে বেশ জটিলতায় পড়বেন ফয়সাল বিপ্লব। অার এর অন্যতম কারন হচ্ছে বিগত সংসদ নির্বাচনে মুন্সিগঞ্জ সদর-গজারিয়া অাসনে দলীয়ভাবে বাংলাদেশ অাওয়ামীলীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক এডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস কে মনোনয়ন দেয়া হলে দলের নির্দেশনা অনুযায়ী তার পক্ষে কাজ না করে উল্টো অাওয়ামীলীগ থেকে বিদ্রোহ করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দাখিল করেন ফয়সাল বিপ্লব। কিন্তু সেই মনোনয়ন খারিজ হয়ে গেলে নিজেকে গুটিয়ে নেন বিপ্লব। যার ফলে বিপ্লবের প্রতি ক্ষুদ্ধ হয় অাওয়ামীলীগ। তাই প্রশ্ন অাছে বিতর্কিত ফয়সাল বিপ্লব কে মনোনয়ন দিবে কি না কেন্দ্রীয় অাওয়ামীলীগ।

অাবার সুযোগ যে একেবারেই নেই তাও নয়! জেলা অাওয়ামীলীগের সভাপতি মহিউদ্দিন এর কাছে মনোনয়ন দেয়ার এখতিয়ার না থাকলেও তার করা সুপারিশ একেবারে অগ্রাহ্য করবে না কেন্দ্রীয় অাওয়ামীলীগ। সেই সুবাদে নিজপুত্র ফয়সাল বিপ্লবকে অবশ্যই এগিয়ে রাখতে চাইবেন মহিউদ্দিন।

যদি এখানে শেষমুহুর্তে ফয়সাল বিপ্লব অাওয়ামীলীগের মনোনয়ন নাই পান তবে মনোনয়ন দৌড়ে সামনে রয়েছেন অারও দুইজন। তারা হলেন মাহতাব উদ্দিন কল্লোল ও রেজাউল ইসলাম সংগ্রাম। এরা উভয়েই দীর্ঘ অভিজ্ঞ অাওয়ামীলীগার।

অন্যদিকে মিরকাদিম পৌরসভার ভোটারদের মধ্যে তুমুল জনপ্রিয় শহিদুল ইসলাম শাহিন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে বিপুল ভোটে মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর বিগত ৪বছরেরও বেশি সময় কোন রাজনৈতিক দলের সাথে সরাসরি যুক্ত না থাকলেও সরকার দলীয় রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের কাছ থেকে ঝোপ বুঝে বিভিন্ন সময় সুযোগ-সুবিধা নিয়েছেন শাহিন। এরপর স্থানীয় নির্বাচন দলীয় প্রতীকে হওয়ার সরকারী সিদ্ধান্তের ঠিক পূর্বমুহুর্তে যোগ দিয়েছেন অাওয়ামীলীগে। অন্যদিকে অাসন্ন নির্বাচনে মিরকাদিমে তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী মনসুর অাহম্মেদ কালাম জেলা অাওয়ামীলীগের মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্বে অাছেন।

অার এখানেই জটিলতা শাহিনের। কালাম কে বাদ দিয়ে শাহিনের জন্য সুপারিশ করবেননা জেলা অাওয়ামীলীগের শীর্ষ নেতা মহিউদ্দিন। কারন অাওয়ামীলীগের রাজনীতিতে জৈষ্ঠ কালাম কে টপকে সদ্য অাওয়ামীলীগার শাহিন কে মনোনয়নে সুপারিশ করে নজির সৃষ্টি করতে চাইবেননা এই বিজ্ঞ রাজনীতিবীদ।

অন্যদিকে অভিযোগও কম নয় শাহিনের বিরুদ্ধে। সংখ্যালঘু নির্যাতন, ফেইসবুকে লেখালেখি কে কেন্দ্র করে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে কিশোর নির্যাতন, নিজ বাসায় মহিলা অাওয়ামীলীগের নেত্রীকে লান্ছিত করা, উচ্চ অাদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করা, নিয়মিত পৌরসভায় অফিস না করা সহ সরকারী কাজ পুনরায় দেখিয়ে বিপুল পরিমান অর্থ অাত্মসাৎ এর মত গুরুতর অভিযোগও অাছে বিদায় নিতে যাওয়া মেয়র শাহিন এর বিরুদ্ধে।

মুন্সিগঞ্জ সদরে কর্মরত নিরাপদ অভিবাসন ও সামাজিক উন্নয়ন বিষয়ক গবেষনামূলক বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা অভিবাসী কর্মী উন্নয়ন প্রোগ্রাম (ওকাপ) এর মাঠ কর্মকর্তা ইউজিং ম্রং অভিযোগ করে বলেন, স্থানীয় জনপ্রতিনীধিদের সংযুক্ত করে অামাদের একটি কর্মশালায় মিরকাদিম পৌরসভার মেয়র শাহিন কে অামন্ত্রণের জন্য অামি ১৩দিন পৌরসভায় গিয়েও তাকে পাইনি। পরে ফোনে যোগাযোগ করে তাকে অামন্ত্রন করলেও ব্যাবসায়িক ব্যাস্ততার অযুহাতে প্রথম বছর তিনি অংশ নেননি। এরপর দ্বিতীয় বছরেও একই ঘটনা ঘটে। অথচ অামাদের গবেষনার বড় একটি অংশ মিরকাদিম থেকে সংগৃহিত হয়। তিনি ঐ কর্মশালায় অংশ নিলে অভিবাসন ও সামাজিক উন্নয়ন বিষয়ে মিরকাদিমের বাস্তব চিত্র সম্পর্কে ধারনা নিতে পারতেন।

error: দুঃখিত!