৯ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
রবিবার | বিকাল ৪:১৩
দৃষ্টি নেই নাটেশ্বরে, ডুবে গেছে নিদর্শন (ভিডিও)
খবরটি শেয়ার করুন:

শিহাব অাহমেদঃ মুন্সিগঞ্জের টঙ্গিবাড়ি উপজেলার নাটেশ্বর গ্রামে গবেষণা প্রতিষ্ঠান অগ্রসর বিক্রমপুর এর প্রচেষ্টায় অাবিস্কৃত প্রাচীন বাংলার বৌদ্ধদের স্মৃতিচিহ্ন নাটেশ্বর দেউল অযত্ন-অবহেলায় পড়ে অাছে। বর্ষার পানিতে ডুবে গেছে নিদর্শনটির এক তৃতীয়াংশ। বাকি অংশ পেচিয়ে রাখা হয়েছে পলিথিন দিয়ে। এতে ফিরে যেতে হচ্ছে দূর-দুরান্ত থেকে অাসা দর্শনার্থীদের। অন্য দিকে সামিয়ানা না থাকায় দিনদিন ভিজে খয়ে পড়ছে ইট।

সরেজমিন দেখা যায়, ঐত্যিহ্য বহন করা এই প্রাচীন নিদর্শনের চারিদিকে কোন বাউন্ডারি নেই। নেই কোন সামিয়ানা। স্থানীয়রা এখানে তাদের গৃহপালিত পশু ইচ্ছেমতো ছেড়ে রেখেছেন। নির্দশনের উপরে উঠেই ঘাস খেতে দেখা গেল কয়েকটি গরু কে। এক পাশে শিশুরা ফুটবল খেলছে, অারেক পাশে কয়েকজন বয়োজ্যেষ্ঠ রোদ পোহাচ্ছেন। দর্শনার্থী দেখে তারিয়ে বেড়াচ্ছে গরুটি।

এদিকে পুরো নিদর্শনটির ভেতরেই জমে অাছে বর্ষার পানি। অথচ পানি ঢেকাতে নেয়া হয়নি কোনরকম ব্যাবস্থা। ইতিমধ্যে এক তৃতীয়াংশ তলিয়ে গেছে পানির নিচে। বাকি অংশও ভিজে ভগ্নদশা।

এটি অাবিষ্কারের অাগে ও পরে বেশ কয়েকবার ব্যাপক অায়োজনের মাধ্যমে জাকজমকভাবে উদ্বোধন করা হয়। সেখানে সংস্কৃতিমন্ত্রী, সচিব, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, প্রত্নতত্ববিদ সহ সরকারের উচ্চপদস্থ অারও কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। অথচ কারোরই এখন নজর নেই অমূল্য ঐত্যিহ্যের এই প্রাচীন নিদর্শনের দিকে।

পূর্বের বঙ্গ ও সমতট অঞ্চলের রাজধানী বিক্রমপুরে অবস্থিত এ দেউল (দেবালয়) বৌদ্ধদের বিহার বা বেশ কয়েকটি মন্দিরের সমষ্টি হতে পারে বলে ধারণা করা হয়।

প্রখ্যাত পণ্ডিত অতীশ দীপঙ্করের বাল্যজীবন, শিক্ষালাভের সূত্রও উন্মোচন করতে পারে নাটেশ্বর দেউল।

৭ একর জমিজুড়ে দেউলটি বিস্তৃত। এর মধ্যে মূল ঢিবিটির আয়তন প্রায় ২ একর। নাটেশ্বর দেউলে ৯×৯ মিটার পরিমাপের একটি বৌদ্ধ মন্দির, অষ্টকোণাকৃতি স্তূপ, ইট নির্মিত নালা, আরো বেশ কিছু স্থাপত্যিক নিদর্শন রয়েছে। বৌদ্ধ মন্দিরটির অনেকাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হলেও পশ্চিম-দক্ষিণ কোণা ২৪০ মিটার উচ্চতায় টিকে আছে।

১ দশমিক ৭৫ মিটার প্রশস্ত দেয়ালের ভিত্তিমূলে ঝামা ইট ব্যবহার করা হয়েছে। সম্ভবত আর্দ্রতারোধক হিসেবে ঝামা ইট বেছে নেওয়া হয়েছে। এই ইটও ভিজে এখন নষ্ট হতে চলেছে। মন্দিরের দেয়ালের বাইরের দিকে অসাধারণ অলংকরণ করা হয়েছে। হাতে কাটা ইটের অপূর্ব জালি নকশা এবং বিভিন্ন আকৃতির ইটের কাজ মন্দিরকে অসাধারণ নান্দনিক স্থাপত্যের রূপ দান করেছে।

নাটেশ্বর দেউলটি সংরক্ষণে প্রাচীন স্থাপত্যিক বৈশিষ্ট্য অক্ষুণ্ন রেখে কাদামাটির মর্টার, পুরনো ইট পুনর্ব্যবহার ও ঐতিহ্যবাহী কুমারদের দ্বারা তৈরি বিভিন্ন আকারের ইট ব্যবহার করা হয়েছে। তবে কতৃপক্ষের বর্তমান উদাসীনতা নিদর্শনটিকে হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে।

ভিডিওঃ

error: দুঃখিত!