মুন্সিগঞ্জ, ২৮ অক্টোবর ২০২৪, নিজস্ব প্রতিনিধি (আমার বিক্রমপুর)
সংসারে স্বচ্ছলতা আনার স্বপ্ন দেখেছিলেন। অভিনব এক প্রতারণার শিকার হয়ে শেষ পর্যন্ত ভারতে মারা গেছেন দুই মেয়ে সন্তানের জনক মুন্সিগঞ্জের মিনু (৩২)। ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে মিনুর মরদেহ পাওয়া গেছে মুম্বাই শহরের রেললাইনের উপর।
নিহত মিনু শ্রীনগর উপজেলার উমপাড়া এলাকায় থাকতেন। তার আদি নিবাস কুকুটিয়া ইউনিয়নের কাজলপুর গ্রামে। সে ওই এলাকার শামসুল শেখের কন্যা।
মিনুর ভাই ফরহাদ শেখ জানান, স্বামী শওকত হোসেনের সামান্য আয়ে দুই মেয়ে সন্তান সামিয়া (১০) ও শারমিনকে (৭) নিয়ে স্বাচ্ছন্দ্যে মিনুর সংসার চলতো না। এক বছর আগে ধারদেনা করে দুবাইতে গিয়েছিলো সে। তবে হঠাৎ অসুস্থতা বাড়লে দেশে ফিরে আসে। কিন্তু এরই মধ্যে ঋণ বাড়তে থাকে তার। সম্প্রতি মিনু আবারও দুবাই যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এরপর পরিচয় হয় এক দালালের সাথে।
ওই দালাল ৬০ হাজার টাকার বিনিময়ে চট্টগ্রাম থেকে মিনুকে দুবাই পাঠানোর আশ্বাস দিলে গত সেপ্টেম্বর মাসের শুরুর দিকে বাড়ি ছাড়ে সে। এর ১০-১২ দিন পর অপরিচিত একটি ইমু (সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম) নাম্বার থেকে প্রতিবেশী আরিফুল ইসলাম লিপটন মেম্বারকে কল করে মিনু জানায় সে পাচারের স্বীকার হয়েছে।
পরে তার মা মনোয়ারা বেগম ও ভাই ফরহাদের সাথেও বেশ কয়েকবার কথা হয় মিনুর। এসময় সে জানায়, অবৈধ পথে বাড়ি থেকে প্রথমে খুলনা পরে খাল সাঁতরে ঝোপ-জঙ্গল দিয়ে ভারতের কলকাতায় নেওয়া হয় তাকে। পরে একটি ট্রেনে তুলে দিয়ে টাকা নিয়ে দালাল কেটে পরে। ট্রেন থেকে নেমে মিনু জানতে পারে তাকে মুম্বাই পাঠানো হয়েছে। সেখানে কলকাতার একজনকে ভাই ডেকে আশ্রয় নেয়। পরে কয়েকদিন আগে একটি বাসায় কাজে লাগে মিনু। প্রতিদিন সকালে সেই বাসায় কাজে যান এবং রাতে বাসায় ফিরেন বলে পরিবারকে জানায় মিনু।
গত শনিবার (২৬ অক্টোবর) সকালে কাজে যাওয়ার সময় মিনু তার অসুস্থ মাকে ফোন দিয়ে কন্যাদের খোজ খবর নেয়। কথা ভালভাবে বুঝতে না পারায় রাতে ফোন দিতে বললে মিনু রেগে যায়। এর কিছুক্ষণ পরই একটি নাম্বার থেকে মিনুর ছবি পাঠিয়ে বলা হয় সে ট্রেনের ধাক্কায় মারা গেছে। লাশ মুম্বাইয়ের একটি থানার পুলিশ নিয়ে গেছে। ছবি দেখে মিনুর ভাই সনাক্ত করেন লাশটি তার বোনের।
মিনুর ভাই ফরহাদ শেখ আক্ষেপ করে বলেন, ‘আমার বোন আমাকে বারবার বলেছিলো কিছু টাকা হলেই দেশে ফিরে আসবো। কিন্তু কিভাবে সে মারা গেল আর কোন দালাল তাকে ভারতে নিলো কিছুই স্পষ্ট বুঝতে পারিনি। এখন যেকোনভাবে তার লাশটা যাতে দেশে আনার ব্যবস্থা করা হয় এটাই আমরা চাই।’
বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা অভিবাসী কর্মী উন্নয়ন প্রোগ্রাম (ওকাপ) মুন্সিগঞ্জের মাঠ কর্মকর্তা ইউজিন ম্রং বলেন, ‘এ ধরনের ঘটনায় লাশ দেশে ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সরাসরি সহযোগিতা প্রয়োজন। তাছাড়া ভারতে অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশনে যোগাযোগ করতে হবে।’