মুন্সিগঞ্জ, ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, বিশেষ প্রতিনিধি (আমার বিক্রমপুর)
মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া কারিগরি স্কুল এন্ড কলেজের কাজে একটার পর একটা অনিয়ম করেই যাচ্ছে ঢালী কন্সস্ট্রাকশন কর্তৃপক্ষ।
উপজেলার পুরান বাউশিয়ায় প্রায় ১৭ কোটি টাকা ব্যায়ে একটি কারিগরি স্কুল অ্যান্ড কলেজের নির্মাণ কাজ শেষ না হতেই পাঁচ তলার ছাদ ধসে পরেছে।
২০১৮ সালের ২৮ মার্চ, নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করা হয়। ২০১৯ সালের শেষের দিকে ছাদের ঢালাই শেষ হয়েও হলো শেষ। পুরো পাঁচতলার ছাদ ঢালাইয়েই নয়ছয় দিয়ে করা হয়েছে বলে বিস্তর অভিযোগ রয়েছে।
বৃহস্পতিবার সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায় পাঁচ তলার ছাদের বড় একটা অংশ ধসে পরেছে। সেই ধসে পরা অংশের সকল রড ও রিং পাঁচ তলায় বাকী অংশে রাখা হয়েছে।
পাইলিংয়ের কাজেও চরম অনিয়ম করা হয়েছে। চলমান কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে সাধারণ মানুষের মাঝে। এলাকাবাসী অসাধু ব্যবসায়ী ও পকৌশলীদের দুর্নীতির জন্য তদন্তের দাবি জানিয়েছেন। ভবন ধ্বসে পড়তে পারে এমনটা আশংকা করা হয়েছিল। সেই আশংকাই সত্যি হলো। ২৭ মে ২০১৮ সালে কয়েকটি জাতীয় দৈনিকে পাইলিংয়ে অনিয়মের বিষয়ে একাধিক সংবাদ পত্রিকায় ছাপা হয়েছিল। বিষয়টি কর্তৃপক্ষ কোন আমলে না নেয়ায় আজ ছাদ ধসে পরেছে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায় ছাদ ধসে পরেছে এবং ছাদ ঢালাই কাজে যে ইট, বালু রড ও সিমেন্ট ব্যবহার করা হয়েছে তা খুলে খুলে স্তুপ করে রাখা হয়েছে। প্রশাসন দেখেও না দেখার ভান করছেন বলে স্থানীয়রা মনে করছেন। পুরো বিল্ডিংটিতে দেখা যায় ভিত্তির জন্য ব্যবহার করা হয়েছে প্রি-কাস্ট কংক্রিট পাইল। প্রতিটি ফুটিংয়ে ব্যবহার করা হয়েছে তিনটি করে পাইল যার প্রতিটির দৈর্ঘ্য ৪৫ ফুট করে। তবে দেখা যায় ৪৫ ফুট পাইলের কোনটি মাটিতে মাত্র ১৭ ফুট, কোনটি বা ২৪ ফুট বা ৩০ ফুট পোতা হয়েছে। পাইলের বাকি অংশ কেটে উপর থেকে সমান করা ফেলা হয়েছে। এ অবস্থায় কাঠামোর স্থায়িত্ব আর কাজের মান দিয়ে দেখা দিয়েছে নানা ধরনের প্রশ্ন।
এছাড়াও যে পাইল ব্যবহার করা হয়েছে তাও অনেক নিম্নমানের যা হাতুড়ির সামন্য আঘাতে মাটিতে ঢোকার পরিবর্তে ফেটে বা ভেঙ্গে যাচ্ছে। পাইলগুলো পরস্পর সমান্তরাল থাকার কথা থাকলেও বেকে একটি অপরটির উপরে উঠে গেছে এ অবস্থায় প্রকৌশলীরা বলছেন, পাইলগুলো মিস গাইডেড হয়েছে এবং পাইলের ড্রাইভ ও প্লেসমেন্ট সঠিক হয়নি। এর ওপর নির্মাণ কাজ করলে যা যে কোন সময় ধসে পড়তে পারে।
পাইল পুতার দায়িত্বে থাকা রাজমিস্ত্রি আমিনুল ইসলামের অভিযোগ ছিল আমাদেরকে কোম্পানি যে পাইল দিয়েছে আমরা তাই দিয়ে কাজ করছি। বিষয়টি সম্পর্কে ঢাকা প্রকৌশলী ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের বেশ কয়েকজন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিক্ষক ও বিভিন্ন সরকারি দফতরে কাজ করা কয়েকজন প্রকৌশলীর কাছে জানতে চাওয়া হলে তারা জানান, যে পাইল ব্যবহার করা হচ্ছে তা অত্যন্ত নিম্নমানের আর ৪৫ ফুটের পাইলকে যদি মাত্র ১৭-২৫ ফুট গভীরে পুতা হয় তা কোনভাবেই সঠিক পরিমাণ লোড বহন করতে পারবে না। আর মাটির স্তর শক্তের দাবির ব্যাপারে তারা বলেন, মাটি পরীক্ষা করে পাইল ডিজাইন করা হয়। মাটি শক্ত হলে সয়েল টেষ্টের সময় তা ধরা পরত।
অপরদিকে স্থানীয়রা ক্ষোভে দু:খে বলেন, একদিকে পাইলিংয়ে সমস্যা করেছে প্রকৌশলীরা অপরদিকে ছাদ ঢালাইয়ে সমস্যা। আসলে ঢালী কন্সট্রাকশন লিমিটেড কি ধরনের কাজ করছে? একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভবনে এত ত্রুটি থাকলে এখানে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা পড়াশুনা করবে। শিক্ষকগণ পাঠদান দিবেন। যে কোন সময় তো দুর্ঘটনার শিকার হতে পারেন তারা।
এ বিষয়ে জানতে সাইট অফিসে গিয়ে নির্মাণ কাজের দায়িত্বে থাকা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ঢালী কন্সট্রাকশন লিমিটেডের নিয়োগপ্রাপ্ত একজন ডিপ্লোমা প্রকৌশলীকে পাওয়া যায়। তবে সংবাদকর্মীর উপস্থিতিতে ক্ষিপ্ত হয়ে তিনি সংবাদকমর্রি সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ ও কাজের কোনো তথ্য দেয়া হবে না বলে জানায়। ছবি উঠালে তিনি ক্ষেপে যান। ছবি ডিলিট করতে বলেন। সংবাদ সংগ্রহে যাওয়া প্রতিনিধিকে চার্জ করে বলেন, আপনি কেন ছবি তুলেন।
সাইট ইঞ্জিনিয়ার বিল্লাল হোসেন জানান, ছাদ ধসে পরার কোন ঘটনাই এখানে ঘটে নাই। ছাদ ধসে পরার পর স্তুপ করে রাখা ইট, বালু, সিমেন্ট ও রডের ছবি উঠালে তিনি বলেন, না বলে কেন ছবি উঠালেন? ছবি ডিলিট করে ফেলুন।
ফোরম্যান জহিরুল ইসলাম জানান, ছাদ ঢালাই কাজে ব্যবহৃত কাঠ, বাঁশ ভেঙ্গে পরায় ছাদ ধসে পরেছে।
প্রত্যক্ষদর্শী মো: রোকন জানান, ছাদ ভেঙ্গে পরেছে। এ বিষয় নিয়ে কর্তৃপক্ষে কয়েকদফা এখানে পরিদর্শন করেছেন এবং কিভাবে পুনরায় ছাদ করা যায় সে ব্যাপারে সেন্টারিয়ের কাজ চলছে। পুরাতন রড ও চুরি পাঁচতলা ছাদের উপরে সিমেন্ট বালি মাখানো স্তুপ করে রাখা হয়েছে।
উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ নাসিমুল হককে একাধিকবার ফোন দিলেও ফোন ধরেন নি। পরে রাজিব নামের অপর একজন লোক দিয়ে ফোন দিয়ে বলেন নাসিমুল স্যারকে কেন ফোন দিয়েছিলেন আমাকে বলেন?