মুন্সিগঞ্জ, ৯জানুয়ারি, ২০২০, সদর প্রতিনিধি (আমার বিক্রমপুর)
বাংলাদেশে সারা বছরে যে পরিমাণ কারেন্ট জাল উৎপাদন হয় তার ৮৫ ভাগ যায় মুন্সিগঞ্জ থেকে। মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার পঞ্চসার ইউনিয়ন বাংলাদেশের জেলে ও জাল ব্যবসায়ীদের কাছে কারেন্ট জালের জন্য ব্যপক জনপ্রিয়।
পুলিশ-প্রশাসনের নিয়মিত অভিযান এড়াতে বাড়ির ভেতরে দেয়াল নির্মাণ করে বাইরে সিসি ক্যামেরা লাগিয়ে চলে কারেন্ট জাল উৎপাদন।
পঞ্চসারের মুক্তারপুর ফেরিঘাট, গোসাইবাগ, ডিঙ্গাভাঙ্গা, সরকার পাড়া, বিসিক শিল্প নগরী, দূর্গাবাড়ি, জোড়পুকুর পাড়, কাশিপুর, দশকানি, বিনোদপুর, মালিরপাথর, আদারিয়াতলা, মিরেশ্বরাই, বাগবাড়ী এলাকায় ‘আমার বিক্রমপুর’-এর সরেজমিন অনুসন্ধানে এ তথ্য বেরিয়ে আসে।
‘মৎস রক্ষা ও সংরক্ষণ আইন ২০০২’ এর ‘২ (১) ধারা’ মতে, মনোফিলামেন্ট সিনথেটিক নাইলন ফাইবার দ্বারা প্রস্তুত জালকে ‘কারেন্ট জাল’ বলা হয়। ২০০২ সালে বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে এই আইন পাশ করা হয়। একই আইনে ‘ধারা ৪’ যুক্ত করে কারেন্ট জালের উৎপাদন, আমদানি, বাজারজাতকরন, মজুত, বহন, পরিবহন, দখল ও ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়।
এদিকে মুন্সিগঞ্জের পঞ্চসার এলাকায় যারা অবৈধ কারেন্ট জাল উৎপাদনের নেতৃত্ব দেন তারা জেলার শীর্ষ বিএনপির নেতা। এর সাথে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত এমন কয়েকজন নেতার যোগসাজশ রয়েছে।
এর মধ্যে জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক এমপি আব্দুল হাই, তার আপন ছোট ভাই সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ, পঞ্চসার ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা হাবিবুর রহমান, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরে সদর উপজেলা বিএনপির কোষাধ্যক্ষ পদ থেকে পদত্যাগ করে আওয়ামী লীগে যোগ দেয়া আব্দুল হাইয়ের আপন চাচাতো ভাই গোলাম মোস্তফা অন্যতম।
‘জাল ব্যবসায়ী সমিতি’ ও বিভিন্ন নামে এদের নিয়ন্ত্রণে ও চাঁদা দিয়ে পঞ্চসারে প্রায় ২’শ ফ্যাক্টরিতে নিয়মিত অবৈধ কারেন্ট জাল উৎপাদন করা হয়।
এদিকে পঞ্চসারের এক শীর্ষ কারেন্ট জাল ব্যবসায়ী ‘আমার বিক্রমপুর’ কে বলেন, ‘২০০২ সালে যে আইন প্রণয়নের কারণে আমাদের ব্যবসায় বিপর্যয় নেমে আসে। এর আগে ১৯৮৮ সালের ২৫ শে জানুয়ারি সরকার প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে কারেন্ট জাল বলতে ‘গিল জাল’ কে বুঝায়। যার স্থানীয় নাম ছিল, কারেন্ট জাল, জাপানি কারেন্ট, ফান্দি জাল, ফাঁদ জাল, ফাপা জাল, বাধা জাল এবং কাঠি জাল। কিন্তু ২০০২ সনের আইনে আন্তর্জাতিকভাবে প্রচলিত মনোফিলামেন্ট সুতার জালকে কারেন্ট জাল নামকরণ করা হয়। সুতরাং এর উৎপাদন ও ব্যবহার নিষিদ্ধ করার ক্ষেত্রে কোন যুক্তি নাই।’
পঞ্চসার থেকে বিভিন্ন সময়ে অভিযানে এ পর্যন্ত কয়েক কোটি টাকার কারেন্ট জাল জব্দ করা হলেও কোনভাবেই থামছে না কারেন্ট জাল উৎপাদন। প্রশাসনের নজর এড়াতে বাসার ভেতরে মেশিন বসিয়ে অত্যন্ত সুক্ষ্ন কৌশলে উৎপাদন চলছে কারেন্ট জালের।
মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ ‘আমার বিক্রমপুর’ কে বলেন, ‘পঞ্চসারে আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে এবং থাকবে। কারেন্ট জাল ধরতে আমরা অভিযান অব্যাহত রাখবো।’
মুন্সিগঞ্জ জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ জিল্লুর রহমান ‘আমার বিক্রমপুর’ কে বলেন, ‘এসব অভিযোগ আমলে নিয়ে পুরোদমে অভিযান পরিচালনা করা হবে। অভিযানের সময় কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না।