মুন্সিগঞ্জ, ১৮ এপ্রিল, ২০২১, শিহাব আহমেদ (আমার বিক্রমপুর)
ঈদের আগে মার্কেট খুলবে কি না নিশ্চয়তা নেই। চলতি মৌসুমে এরই মধ্যে দুই দফা লকডাউনের মুখে পড়েছেন মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার কয়েক শত ক্ষুদ্র গার্মেন্টস ব্যবসায়ীরা। অনিশ্চয়তায় থাকা চলতি ঈদ মৌসুম বাতিল হলে বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির শঙ্কায় রয়েছেন তারা।
গত বছর ঈদ মৌসুমের আগে লকডাউনের বড় ধরনের ধাক্কা এখনো সামলে উঠতে পারেননি অনেকেই। এর মধ্যেই ধার-দেনা করে এবছর ঈদকে সামনে রেখে নতুন বিনিয়োগ করেছেন ব্যবসায়ীরা। তবে ঈদের আগে চলমান লকডাউন শিথিল করে মার্কেট-শপিংমল না খুললে বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়বেন তারা।
মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার পঞ্চসার ও রামপাল ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি ক্ষুদ্র গার্মেন্টস ব্যাবসায়ীর সাথে আলাপে এমন চিত্র উঠে এসেছে।
পঞ্চসারের তেলিরবিল এলাকার হামিম গার্মেন্টস এর স্বত্ত্বাধিকারী জাহান শরিফ জানান, গতবছর লকডাউনের আগে ঈদকে সামনে রেখে গার্মেন্টস ব্যবসায় তিনি ৩৫ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন। কিন্তু ঈদের সময় মার্কেট বন্ধ থাকায় তার ১৮ লাখ টাকা লস গুনতে হয়েছে। এবছর তিনি বিভিন্ন এনজিও থেকে চড়া সুদে ৩০ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে বিনিয়োগ করেছেন। যেখানে সুদসহ তাকে দিতে হবে ৪০ লাখ টাকা।
রমজানের আগে গত কয়েকদিনে মার্কেটে তিনি ৩ লাখ টাকার প্রোডাক্টও পাঠিয়েছেন। তবে ঈদের আগে মার্কেট না খুললে সেই টাকা এই মৌসুমে উঠে আসবে কি না তা নিয়ে শঙ্কায় আছেন জাহান শরিফ।
একই এলাকার অপূর্ব গার্মেন্টস এর স্বত্ত্বাধিকারী আব্দুল হাই জানান, গতবছর তিনি ২০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন। করোনার কারনে তার ১৩ লাখ টাকাই ক্ষতি হয়েছে। এবছর বিনিয়োগ করেছেন ২০ লাখ টাকা।
তেলিরবিল এলাকার নার্গিম গার্মেন্টস এর স্বত্ত্বাধিকারী আজিজুল হক বলেন, দীর্ঘদিন যাবৎ এই ব্যবসা করি। ঈদ আসলেই মূলত এ ব্যবসার সাথে জড়িতরা বিনিয়োগ করে থাকেন। ব্যাংকগুলো মোটেও সহায়তা করে না। ঋণ নিতে হয় এনজিও থেকে বেশি সুদে। শ্রমিকরাও সারাবছর বসে বসে কাটান। ঈদ আসলে ভালো অঙ্কের অর্থের আসায় এ কাজে লাগেন। এবার যা মনে হচ্ছে শ্রমিকরাও ঠিকমতো মজুরীর টাকা নিয়ে বাড়িতে ফিরতে পারবে না।
পঞ্চসারের ভট্টাচার্যের বাগ এলাকার আয়শা গার্মেন্টস এর স্বত্ত্বাধিকারী অপু ভূইয়া বলেন, ‘দুই বছর আগে বিদেশ থেকে এসে অল্প কিছু জমানো টাকা ও বিভিন্ন জনের কাছ থেকে ধারদেনা করে গতবছর প্রথমবারের মত ৬ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে ক্ষুদ্র গার্মেন্টস ব্যবসায় নামি। প্রথমবারেই করোনার কারনে ঈদে মার্কেট বন্ধ থাকায় ৪ লাখ টাকাই লস খাই। এরপরও এবছর আবার ঘুড়ে দাড়ানোর আশায় একটি এনজিও থেকে ১৮% সুদে ১০ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে বিনিয়োগ করি। এবার যদি ঈদের আগে মার্কেট বন্ধ থাকে তাহলে সব স্বপ্ন শেষ হয়ে যাবে। ভিটেমাটি বিক্রি করে ঋণ শোধ করতে হবে।’
একই এলাকার হাসান গার্মেন্টস এর স্বত্ত্বাধিকারী মঞ্জুর হোসেন বলেন, ‘সরকারের কাছে একটাই দাবি, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের কথা চিন্তা করে ঈদের আগে যাতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে মার্কেট ও শপিংমল খুলে দেয়।’
তিনি বলেন, আমাদের ধারনা- ‘ঈদের আগে মার্কেট না খুললে মুল বিনিয়োগের টাকা তো ক্ষতিগ্রস্থ হবেই। মার্কেট বন্ধ হওয়ার আগে যেই রেটে মার্কেটে প্রোডাক্ট দিয়ে দিয়েছি তারও দরপতন হবে। কারন ঈদের আগে দোকানদাররা যেই দামে পোষাকগুলো বিক্রি করতে পারতেন পরে সেই দাম থাকবে না।’
কোভিড-১৯ রোগের সংক্রমণ ঠেকাতে চলতি বছর প্রথম দফায় গত ৫ এপ্রিল থেকে ১১ এপ্রিল এবং পরে আরও দু’দিন বেড়ে ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত লকডাউন চলে। শুরু থেকেই এই লকডাউনের বিরোধীতায় রাস্তায় নামেন ব্যবসায়ীরা। তাদের দাবি, করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে ঈদের আগে লকডাউনের সিদ্ধান্ত নিয়ে মার্কেট-শপিংমল বন্ধের সিদ্ধান্ত যুক্তিসংগত নয়।
এরপর ব্যবসায়ীদের কঠোর আন্দোলনের মুখে এক প্রজ্ঞাপনে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সকাল নয়টা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত মার্কেট-শপিংমল খোলার অনুমতি দেয় সরকার। তবে সংক্রমণ ও মৃত্যু বেড়ে যাওয়ায় গত ১৪ এপ্রিল থেকে দ্বিতীয় দফায় মার্কেট-শপিংমল বন্ধ রেখেই কঠোর লকডাউন শুরু হয়।