পৌর নির্বাচন নিয়ে একের পর এক বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নিত্যনতুন ঘোষণা আর সমন্বয়হীনতার চরম নজির স্থাপন করছে তারা। আইনে কোনো বাধানিষেধ না থাকলেও হঠাৎ করেই গতকাল ইসি সচিব মো. সিরাজুল ইসলাম ঘোষণা দেন, প্রতীকসহ প্রচারে নামা যাবে না। এ নিয়ে প্রার্থী ও সমর্থকদের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে পড়ে। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী অনেক প্রার্থী ও তার সমর্থকরা গতকাল প্রচারে নেমেও মাঠ ছেড়ে দিয়েছেন। আবার কোথাও প্রার্থীরা প্রচার চালিয়েছেন।
যদিও গত সপ্তাহজুড়েই কমিশনের একাধিক সদস্য বলেছেন, ভোট গ্রহণের ২১ দিন আগে প্রচারে নামা যাবে না। আইনেও বলা রয়েছে, ‘ভোট গ্রহণের ২১ দিন আগে প্রচারে নামা যাবে না।’ সে হিসাবে ৯ ডিসেম্বর সকাল থেকে নির্বাচনী এলাকাগুলোতে প্রার্থী ও সমর্থকরা প্রচারকাজ শুরু করেন। দুপুরের পর হঠাৎ করেই ঘোষণা আসে প্রতীক ছাড়া প্রচার চালাতে হবে। ইসি সচিব সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে
বলেন, ১৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রতীকসহ প্রচার চালানো যাবে না। তবে প্রতীকসহ প্রচার চালালে আচরণবিধি লঙ্ঘন হবে কী-না বা এ বিষয়ে আইনগত কোনো বাধানিষেধ রয়েছে কী-না_ সাংবাদিকদের এ সম্পর্কিত প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে যান তিনি। ইসি সচিবের হঠাৎ এ ঘোষণা নিয়ে কমিশনের একাধিক সদস্যের সঙ্গে আলাপ করলেও তারা এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাননি।
তবে গতকাল রাতে সমকালের সঙ্গে আলাপকালে ইসি সচিব সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘এ নিয়ে বিভ্রান্তির কিছু নেই। আমি বলেছি, প্রতীকসহ প্রচার শুরু হবে ১৪ ডিসেম্বরের পরে। এর আগে প্রচার চালাতে কোনো অসুবিধা নেই।’ তিনি বলেন, প্রচারে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা যাতে সমান সুযোগ পান সে জন্যই এটা বলা হয়েছে।
ইসি-সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, দেশে প্রথমবারের মতো পৌর নির্বাচনে মেয়র পদে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল অথবা স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ৩ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র জমা ও ৫-৬ ডিসেম্বর বাছাই শেষে রাজনৈতিক দলের মনোনীত প্রার্থীসংখ্যা ৭০০। অন্যদিকে মেয়র পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছেন পাঁচ শতাধিক। ইতিমধ্যে দল মনোনীতদের প্রতীক নির্ধারিত হয়ে গেলেও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা প্রতীক পাবেন ১৪ ডিসেম্বর। ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সুযোগ রয়েছে।
জানা গেছে, আইনে বিষয়টি উল্লেখ থাকার পরেও ইসি সচিবালয়ের পক্ষ থেকে এ-সংক্রান্ত একটি পরিপত্র জারির প্রস্তাব দেওয়া হয় কমিশনে। এতে বলা হয়, ১৪ ডিসেম্বরে প্রতীক বরাদ্দের পরেই আনুষ্ঠানিক প্রচার শুরু হবে। কিন্তু কমিশন সদস্যদের আপত্তির কারণে ওই পরিপত্র জারি হয়নি। ইসির একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সাধারণত প্রতীক বরাদ্দের পরে প্রচারের জন্য দল ও প্রার্থীদের ২১ দিন সময় দেওয়া হয়ে থাকে। এ সময়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই প্রতীক বরাদ্দের দিন ধার্য্য করা হয়।
এবারে পৌর নির্বাচনের আইন সংশোধনে সরকারের তরফে সিদ্ধান্তহীনতার খেসারত এখন কমিশনকে দিতে হচ্ছে। কারণ শুরুতেই মেয়র ও কাউন্সিলর পদে দলীয় প্রার্থী দেওয়ার সুযোগ রেখে অধ্যাদেশ জারি করা হয়। এরপরে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে আবার সংসদে বিল পাস করে সরকার। এসব করতে সময় পেরিয়ে যাওয়ায় ইসিকে তফসিল ঘোষণার বিষয়ে কিছুটা কাটছাঁট করতে হয়েছে। ৩০ ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের তাগিদ থাকার কারণে এবারে প্রতীক বরাদ্দ ও প্রচারের সময়ে সমন্বয় করা সম্ভব হয়নি।
এদিকে ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় ২৩৪টি পৌরসভার ভোটের জন্য গতকাল বুধবার থেকেই অনেক স্থানে প্রচারে নেমে পড়েন প্রার্থীরা। তবে কোনো প্রার্থীর হাতে প্রতীক, আবার কোনো প্রার্থী আছেন প্রতীক ছাড়া। দলীয় প্রার্থীদের প্রতীক মনোনয়নের সঙ্গে সঙ্গেই নির্ধারণ হলেও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা আছেন শূন্য হাতে! তাদের আরও তিনদিন প্রতীক ছাড়াই ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হবে।
ফলে রাজনৈতিক দলের মনোনীত মেয়র প্রার্থী আর স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে বৈষম্য দেখা দিয়েছে প্রচারের শুরুর দিন থেকেই। এক প্রশ্নের জবাবে নির্বাচন কমিশন সচিব বলেন, ‘বিএনপি, আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির নির্ধারিত প্রতীক আছে। তারা প্রতীকের বিষয়ে মুখে বলতে পারবেন। এ থেকে বিরত রাখা যাবে না, বাস্তবতাটা ?বুঝতে হবে।’ তবে নির্বাচনী বিধি অনুযায়ী ১৪ ডিসেম্বরের আগে কোনো প্রার্থীর প্রতীক নিয়ে প্রচারে নামার কোনো সুযোগ নেই। কোনো প্রার্থী এর ব্যত্যয় ঘটালে ‘এটা পরে দেখা যাবে’ বলে সাংবাদিকদের বলেন তিনি।
স্বতন্ত্র প্রার্থীদের অভিযোগ, দলীয় প্রার্থীরা শুরুর দিন থেকেই প্রতীক নিয়ে ভোটারদের কাছে যাচ্ছেন। স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ভোটারদের বলা তো দূরের কথা, নিজেরাই এখনও জানেন না প্রতীক কী। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নিজের প্রতীকের সঙ্গে ভোটার ও নিজের অনুসারীদের পরিচিতি করানোর বিষয় থাকে। তাদের অভিযোগ, নির্বাচন কমিশনের ভুল ও সমন্বয়হীন কর্মকাণ্ড এবং ত্রুটিপূর্ণ তফসিলের কারণে এখন তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।