২৬শে মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
বুধবার | সকাল ৮:২৩
আদালতের নির্দেশ অমান্য করে খাল দখল করলেন স্বয়ং মেয়র
খবরটি শেয়ার করুন:

উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অমান্য করে মুন্সীগঞ্জের মিরকাদিমের চারটি খাল ও নর্দমা বালু ফেলে ভরাট হচ্ছে পৌর মেয়র শহিদুল ইসলাম শাহিনের নির্দেশে।

উচ্চ আদালত স্বপ্রণোদিত হয়ে “মিরকাদিম-পঞ্চসারের” নয়নের খাল, রিকাবীবাজার খাল, গোপপাড়া খাল ও ফেচুন্নির খাল এই চারটি খাল থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে খাল খননের নির্দেশ দেন। কিন্তু মিরকাদিমের মেয়র শহিদুল ইসলাম শাহিন তা না করে নিজের সুবিধার জন্য রিকাবীবাজার কালভার্টের অংশ গোপপাড়া খালটি হত্যা করে সেখানে আধ-কিলোমিটার এলাকা ভরাট করে সম্প্রতি রাস্তা নির্মাণ করে।
এদিকে, ভরাটকৃত অংশের পর থেকে আবার খালের অংশ শুরু হলেও এতে করে খালের প্রবাহ বন্ধ হয়ে পড়েছে। আর এ সুযোগে স্থানীয় মেয়রের আস্থাভাজনরা খালের পরবর্তী অংশগুলোও দখল করে নিচ্ছে। এছাড়াও উল্লেখিত অপর ৩টি খালের ইতিমধ্যে প্রায় ৬০ শতাংশ জায়গা দখল হয়ে গেছে। যদিও অবৈধ দখলদার ৫৭ জনের বিরুদ্ধে মুন্সীগঞ্জ পরিবেশ অধিদপ্তরের একটি মামলা রয়েছে। এ মামলায় তারা মুন্সীগঞ্জ আদালতে হাজিরা দিচ্ছেন তারা।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কৃষি জমি, খাল সহ বিভিন্ন জলাশয় ভরাটা না করে তা খননের ও পূর্নউদ্ধারে যতটা সোচ্চার ও বদ্ধপরিকর তার উল্টো মুন্সীগঞ্জের মিরকাদিম পৌরসভার সাবেক মেয়র ও বর্তমান আ’লীগ মনোনীত মেয়ের প্রার্থী শহিদুল ইসলাম শাহিন।

সূত্র মতে, ধলেশ্বরী নদীর তীরে মিরকাদিম পৌরসভা বা মিরকাদিম নদী বন্দর। একসময়ে মিরকাদিমের কমলাঘাট বাণিজ্য বন্দর দিয়ে কলকাতার সঙ্গে বাণিজ্য চলত এই অঞ্চলে। বাংলাদেশের বড় বড় চাল কলগুলোও এখানেই ছিল।

কিন্তু দিনদিন খাল-ডোবাগুলো ভরাট হয়ে যাওয়ায় এই পৌরসভার প্রধান সমস্যা এখন জলাবদ্ধতা। বৃষ্টি হলে খালগুলো দিয়ে পানি বের হয়ে নদীতে যেতে পারে না। পয়োনিষ্কাশন কিংবা পরিচ্ছন্নতার মতো ন্যূনতম সুবিধাও পাচ্ছেনা এ অঞ্চলের অন্তত ৬০ শতাংশ মানুষ। মূল রাস্তা বাদ দিলে পৌরসভার অনেক রাস্তা এতটাই সরু যে রিকশা চলাও কষ্টকর। এটি এখন নামেই প্রথম শ্রেণীর পৌরসভা।

এদিকে, গত ২০১২ সালের ১৯ শে জানুয়ারি ধলেশ্বরী নদী লাগোয়া মিরকাদিম-পঞ্চসারের নয়নের খাল, রিকাবীবাজার খাল, গোপপাড়া খাল ও ফেচুন্নির খাল চারটি থেকে অবৈধ দখলদার ও অবৈধ স্থাপনাপনা উচ্ছেদ করে একই মাসের ৩০ তারিখের মধ্যে মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে সুয়ো-মোটো (১৩/২০১২নং) রুল জারি করেন।
এরপর প্রশাসন মাঠে নেমে দখলদারদের কাছ থেকে খাল চারটি উদ্ধার করে তথাসময়ে উচ্চ আদালতে একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন জমা দেন। হাইকোর্টের রায়ে ওই চারটি খালের সীমানা নির্ধারণ, খালের উপর অবৈধ দখলদারকে চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট আইনে মামলা দায়ের সহ ওই খালগুলো আগের অবস্থানে ফিরিয়ে আনা ও ভবিষ্যতে যাতে ওই খালগুলোর উপর অবৈধ স্থাপনাদি নির্মাণ করতে না পারে তা নিশ্চিত করার জন্য জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে নির্দেশ প্রদান করেন।

এরপর ২০১২ সালের ৩রা মার্চ মুন্সীগঞ্জ পরিবেশ অধিদপ্তরের তৎকালীন উপ-পরিচালক সোনিয়া সুলতানা খাল ভরাট বা সরকারি সম্পত্তির/ভূমির শ্রেণী পরিবর্তনের মাধ্যমে পরিবেশের দূষণ ও ভারসাম্য নষ্ট করায় বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ (সংশোধনীসহ) এর ৬ (ঙ) ধারার বিধি লঙন করার দায়ে ৫৭ জনের বিরুদ্ধে মুন্সীগঞ্জ সদর থানায় মামলা করেন। এ মামলাটি বর্তমানে বিচারাধীন।
মামলার আসামিরা আদালতে হাজিরা দিচ্ছেন। কিন্তু এরইমধ্যে গোপপাড়া খালটির আধ-কিলোমিটার এলাকা সম্পূর্ণ ভরাট করে রাস্তা করে ফেলা হয়েছে।

এ ব্যাপারে মিরকাদিম পৌরসভার ২০০৪ সালের প্রথম মেয়র এবার জাতীয় পার্টির (আনোয়ার হোসেন মঞ্জু) মেয়র প্রার্থী মোহাম্মদ হোসেন রেনু বলেন, ‘২০০৪ সালে আমি যখন প্রথম মেয়র হই, তখন রাস্তাগুলো কাঁচা ছিল। আমি সব পাকা করেছিলাম। কিন্তু তখন জলাবদ্ধতা ছিল না। এরপরে খালগুলো দখল করায় জলাবদ্ধতা তৈরি হয়’। হাইকোর্টের নির্দেশের পর এগুলো উচ্ছেদ হয়। মামলা হয় ৫৭ জনের বিরুদ্ধে। তারা আদালতে হাজিরা দিচ্ছেন। কিন্তু এখন পৌরসভাই খাল ভরাট করে পাকা করছে।

তিনি বলেন, গোপপাড়া খালটি মেয়র শাহীন তার বাড়িতে, মামা ও শ্বশুরের বাড়িতে যাওয়ার জন্য হাইকোর্টের নির্দেশ অমান্য করে ভরাট করে রাস্তা করে ফেলেছে। এ খালের উপর মেয়র শাহীনের বাড়িও রয়েছে।

তিনি আরো বলেন, ‘জেলা প্রশাসনে আমি অভিযোগ দিয়েছি। আমি চাই খালগুলো পুনরুদ্ধার হোক, মিকাদিমবাসী জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পাক।’

মুন্সীগঞ্জ পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মিয়া মাহমুদুল হক বলেন, ‘এ ঘটনা আমার জানা নেই।’ উধর্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে তিনি জানান।

এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক সাইফুল হাসান বাদলের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হয়। কিন্তু তিনি কল রিসিভ করেননি।

এ ব্যাপারে মিরকাদিম পৌরসভার মেয়র শহিদুল ইসলাম শাহীন খাল ভরাটের বিষয়টি এড়িয়ে যান। তিনি বলেন, ‘আমি একটু ব্যস্ত আছি, আপনার সঙ্গে পরে দেখা করছি।’

error: দুঃখিত!