মুন্সিগঞ্জ, ১৬ জানুয়ারি, ২০২০, শিহাব আহমেদ (আমার বিক্রমপুর)
প্রশাসনের অব্যাহত অভিযানে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন মুন্সিগঞ্জের পঞ্চসার ইউনিয়নের কয়েক শত কারেন্ট জাল ব্যবসায়ী।
শুধু জানুয়ারি মাসেই গত ১৫ দিনে অভিযানে প্রায় ১০৭কোটি টাকার কারেন্ট জাল পুড়িয়ে ধ্বংস করার পর এই আতঙ্ক আরও ছড়িয়ে পড়েছে। তবে থেমে নেই উৎপাদন।
অভিযান এড়াতে বাড়ির ভেতরে অভিনব কায়দায় মেশিন বসিয়ে বাইরে সিসি ক্যামেরা লাগিয়ে রাতের বেলা চলছে কারেন্ট জাল উৎপাদন। এখন পর্যন্ত এরকম কোন ফ্যাক্টরিতে অভিযানও পরিচালনা করতে পারেনি প্রশাসন। সেই সুযোগ কাজে লাগাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।
পঞ্চসারের মুক্তারপুর ফেরিঘাট, মিরেশ্বরাই, বাগবাড়ী, গোসাইবাগ, ডিঙ্গাভাঙ্গা, সরকার পাড়া, বিসিক শিল্প নগরী, দূর্গাবাড়ি, জোড়পুকুর পাড়, কাশিপুর, দশকানি, বিনোদপুর, মালিরপাথর, আদারিয়াতলা, এলাকায় ‘আমার বিক্রমপুর’-এর সরেজমিন অনুসন্ধানে এসব তথ্য বেরিয়ে আসে।
‘মৎস রক্ষা ও সংরক্ষণ আইন ২০০২’ এর ‘২ (১) ধারা’ মতে, মনোফিলামেন্ট সিনথেটিক নাইলন ফাইবার দ্বারা প্রস্তুত জালকে ‘কারেন্ট জাল’ বলা হয়। ২০০২ সালে খালেদা জিয়া ক্ষমতায় থাকাকালে এই আইন পাশ করা হয়। একই আইনে ‘ধারা ৪’ যুক্ত করে কারেন্ট জালের উৎপাদন, আমদানি, বাজারজাতকরন, মজুত, বহন, পরিবহন, দখল ও ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়।
পঞ্চসারে ‘জাল ব্যবসায়ী সমিতি’ ও বিভিন্ন নামে জনপ্রতিনিধি সহ স্থানীয় রাজনীতিকদের চাঁদা দিয়ে প্রায় ২’শ ফ্যাক্টরিতে নিয়মিত অবৈধ কারেন্ট জাল উৎপাদন করা হয়। ব্যবসায়ীরাও চাঁদা দিতে পারলে নিজেদের নিরাপদ মনে করে থাকেন। কিন্তু প্রশাসনের অভিযানও চলে নিয়মমাফিক।
পঞ্চসারের এক শীর্ষ কারেন্ট জাল ব্যবসায়ী ‘আমার বিক্রমপুর’ কে বলেন, ‘২০০২ সালে আইন প্রণয়নের কারণে আমাদের ব্যবসায় বিপর্যয় নেমে আসে। এর আগে ১৯৮৮ সালের ২৫ শে জানুয়ারি সরকার প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে কারেন্ট জাল বলতে ‘গিল জাল’ কে বুঝায়। যার স্থানীয় নাম ছিল, কারেন্ট জাল, জাপানি কারেন্ট, ফান্দি জাল, ফাঁদ জাল, ফাপা জাল, বাধা জাল এবং কাঠি জাল। কিন্তু ২০০২ সনের আইনে আন্তর্জাতিকভাবে প্রচলিত মনোফিলামেন্ট সুতার জালকে কারেন্ট জাল নামকরণ করা হয়। সুতরাং এর উৎপাদন ও ব্যবহার নিষিদ্ধ করার ক্ষেত্রে কোন যুক্তি নাই।’
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জিল্লুর রহমান ‘আমার বিক্রমপুর’ কে বলেন, ‘কারেন্ট জাল বাংলাদেশের মৎস্য সম্পদের জন্য ক্ষতিকর। পঞ্চসার থেকে প্রকাশ্যে-গোপনে প্রতিদিন কয়েক লাখ থেকে কয়েক কোটি টাকার কারেন্ট জাল বিক্রি হচ্ছে। এসব জাল দিয়ে জেলেরা বিভিন্ন নদ-নদী ও খাল-বিলে দেশি প্রজাতির ডিমওয়ালা ও পোনা মাছ নিধন করছেন। দেশের মৎস্য সম্পদ রক্ষা করতে হলে অবশ্যই এই জালের ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। কারেন্ট জাল উৎপাদন ও বিক্রির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার জন্য আইনি দিকগুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘দেশের মৎস্য সম্পদ রক্ষা করতে হলে অবশ্যই এই জালের ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। পাশাপাশি জেলে সমাজের মধ্যে বৈধ জাল ব্যবহার করে জীবিকা উপার্জনের ব্যাপারে সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে। মৎস্য খাতের ভবিষ্যতের স্বার্থেই কারেন্ট জালের ব্যবহার বন্ধ করে দেওয়া জরুরি।’