২১শে মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
শুক্রবার | রাত ১:২৪
মুন্সিগঞ্জের পাঁচ নৌ-ডাকাত গ্রুপ ধরাছোঁয়ার বাইরে
খবরটি শেয়ার করুন:

কাজী সাব্বির আহমেদ দীপুঃ

মেঘনা ও পদ্মা নদীতে সক্রিয় থাকা ৫টি নৌ-ডাকাত গ্রুপের বেশিরভাগ সদস্যই রয়েছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ধরাছোঁয়ার বাইরে। এই ৫টির মধ্যে ৪টিই মুন্সিগঞ্জের চরাঞ্চলের আধারা ইউনিয়নের কালীরচর, চরআব্দুল্লাপুর, নমকান্দি, দেওয়ানকান্দিসহ আশপাশের গ্রামের। এ গ্রুপগুলোর এক গ্রুপের নেতৃত্বে থাকা রিংকু ২০১৮ সালের ২ ফেব্রুয়ারি বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়। অন্য ৩টির নেতৃত্বে রয়েছে মমিন মিজি, জোড়া হত্যা মামলার আসামি উজ্জ্বল মিজি ও নৌ-ডাকাত বাবলা। অন্য গ্রুপটির নেতৃত্ব দিচ্ছে মতলবের ষাটনল এলাকার এক নৌ-ডাকাত। তাদের মধ্যে নৌ-ডাকাত বাবলা গ্রুপের সেকেন্ড ইন কমান্ড হুমায়ুন ব্যাপারি গত রোববার ভোররাতে নিহত হলেও বাবলা গ্রুপের প্রধান বাবলা, মিজি গ্রুপের উজ্জ্বল মিজি, তার ভাই কিবরিয়া মিজি, মমিন মিজি গ্রুপের মমিন মিজি এবং মতলবের ষাটনল এলাকার নৌ-ডাকাতরা এখনও আত্মগোপনে থেকে মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার সীমানাঘেঁষা মেঘনা ও পদ্মা নদীতে দীর্ঘ বছর ধরে বিভিন্ন নৌযানে ডাকাতি ও চাঁদাবাজিতে লিপ্ত রয়েছে বলে নদীতীরের গ্রামবাসী জানিয়েছে।

নদীতীরের গ্রামবাসী জানায়, বিভিন্ন নৌযানে ডাকাতি ও চাঁদাবাজি ছাড়াও পদ্মা নদীতে জেগে ওঠা চরের মাটি কেটে বাল্ক্কহেড দিয়ে ভরাট করে তা বিভিন্ন ইটভাটায় বিক্রির মাধ্যমে হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে ৫টি নৌ-ডাকাত গ্রুপের সদস্যরা। এ ছাড়া পদ্মা-মেঘনা তীরের বিভিন্ন গ্রামের প্রবাসী ব্যক্তিদের বাড়িঘর টার্গেটের পর ডাকাতি করে তারা। এই অপরাধ কর্মকাণ্ড চালাতে গিয়ে আধিপত্য নিয়ে প্রায়ই নৌ-ডাকাত গ্রুপগুলো অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে গোলাগুলিতে লিপ্ত হয়।

মুন্সিগঞ্জ সদর, গজারিয়া ও চাঁদপুরের মতলব উপজেলার সীমানাঘেঁষা মেঘনা ও পদ্মা নদীর নৌ-ডাকাত সোহেল মিজি নিখোঁজ রয়েছে ৫ বছর ধরে। আজও তার কোনো হদিস মেলেনি। সে বেঁচে আছে না মারা গেছে, তা নিশ্চিত হতে পারেনি তার স্বজনরা। মেঘনা ও পদ্মা নদীর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ২০১৫ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি আধারা ইউপির কালীরচর গ্রামে দুই নৌ-ডাকাত গ্রুপের বন্দুকযুদ্ধে প্রতিপক্ষের গুলিতে ফয়েজ মিজি ও মোহন ব্যাপারি নিহত হয়। ২০১৮ সালের ২ ফেব্রুয়ারি সদরের পদ্মার তীরঘেঁষা সরদারকান্দি গ্রামে পুলিশ ও নৌ-ডাকাতদের বন্দুকযুদ্ধে নৌ-ডাকাত তারেক রহমান রিংকু নিহত হয়। গত রোববার ভোররাতে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হলো প্রতিপক্ষের গুলিতে নিহত মোহন ব্যাপারির বড় ছেলে ও নৌ-ডাকাত বাবলা গ্রুপের সেকেন্ড ইন কমান্ড হুমায়ুন ব্যাপারি।

নদীতীরের গ্রামবাসী আরও জানায়, চরাঞ্চলের ৪টি গ্রুপের মধ্যে রিংকু ও উজ্জ্বল মিজি গ্রুপ ঐক্যবদ্ধ হয়ে নৌপথের পাশাপাশি নদীতীরের বিভিন্ন গ্রামের প্রবাসীদের বাড়িতে ডাকাতি করে আসছিল। এই দুই গ্রুপের ঐক্যে কোণঠাসা মমিন মিজি গ্রুপ ও বাবলা গ্রুপ আধিপত্য পুনরুদ্ধারের চেষ্টা চালায়। এর জের ধরে ও পূর্ববিরোধ নিয়ে মমিন মিজি গ্রুপের সঙ্গে ২০১৮ সালের ১ ফেব্রুয়ারি রিংকু ও তার গ্রুপের গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। স্থানীয় এক যুবলীগ নেতা জানান, এর আগে সদর থানার এসআই কাজলসহ পুলিশের ওপর হামলা চালিয়েছিল রিংকু গ্রুপ। পরে গ্রামবাসীর সহায়তায় পুলিশ অস্ত্রসহ রিংকুকে গ্রেফতার করার পর জেল খেটে জামিনে মুক্ত হয়ে আবারও অপরাধ শুরু করেছিল। গত বছর পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয় রিংকু।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, নদীর আধিপত্য নিয়ে বিরোধে ২০১৫ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি আধারার কালীরচর গ্রামে দুই নৌ-ডাকাত গ্রুপের বন্দুকযুদ্ধে ফয়েজ মিজি ও মোহন ব্যাপারি নামে দু’জন নিহত হয়। নিহত দু’জন মমিন মিজি গ্রুপের। এ ঘটনায় দায়ের করা হত্যা মামলায় উজ্জ্বল মিজি গ্রুপের একাধিক নৌ-ডাকাত জেল খেটে জামিনে মুক্ত হয়ে আবারও অপরাধ কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে। ফলে নদীর আধিপত্য ও পূর্ববিরোধ নিয়ে নৌ-ডাকাতরা একে অপরকে ঘায়েল করতে গোলাগুলিতে লিপ্ত হয়।

অন্যদিকে ২০১৪ সালের ১ ফেব্রুয়ারি থেকে নিখোঁজের পর ৫ বছর পেরিয়ে গেলেও সন্ধান মেলেনি নৌ-ডাকাত সোহেল মিজির। সোহেল মিজিকে হত্যার পর লাশ নদীতে ফেলে দিয়ে গুম করে ফেলা হয়েছে বলে ধারণা তার পরিবারের সদস্যদের।

মুন্সিগঞ্জে সদর থানার ওসি (তদন্ত) গাজী সালাহউদ্দিন বলেন, পদ্মা ও মেঘনা নদীতে নৌ-ডাকাতদের তৎপরতা প্রতিরোধে পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে। এরই ধারাবাহিকতায় গত রোববার ভোরে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে এক নৌ-ডাকাত নিহত হয়েছে।

error: দুঃখিত!