১৭ মার্চ, ২০২২, বিডিনিউজ ২৪
যার হাত ধরে বিশ্ব মানচিত্রে নতুন দেশ হিসেবে স্থান করে নেওয়া, সেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মবার্ষিকী উদযাপনে প্রস্তুত বাংলাদেশ।
বেঁচে থাকলে বৃহস্পতিবার ১০২ বছর পূর্ণ হত বাংলাদেশের জাতির পিতার। তার জন্মবার্ষিকী উদযাপনের সঙ্গে জাতীয় শিশু দিবস হিসেবেও পালিত হবে দিনটি।
গত বছরই স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী এবং বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ এক যোগে পালন করে বাংলাদেশ।
২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে ২০২১ সালের ২৬ মার্চ সময়কে মুজিববর্ষ হিসেবে ঘোষণা করেছিল সরকার। করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে ২০২০ সালে সাড়ম্বরে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ পালন করা যায়নি। পরে ওই বছরের ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত মুজিববর্ষের সময় বাড়ায় সরকার।
সব কর্মসূচি শেষ না হওয়ায় মুজিববর্ষের সময়কাল আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।
বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন উদযাপনের আনুষ্ঠানিকতা বৃহস্পতিবার প্রথম প্রহরেই শুরু হয়েছে, এরপর দিনভর থাকছে নানা আয়োজন। ‘টুঙ্গিপাড়া হৃদয়ে পিতৃভূমি’ প্রতিপাদ্য নিয়ে টুঙ্গিপাড়ায় কর্মসূচি আয়োজন করা হয়েছে।
বঙ্গবন্ধুর জন্ম ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় সাধারণ এক পরিবারে। ছোটবেলাতেই রাজনীতি সচেতন ছিলেন তিনি।
দীর্ঘ ২৩ বছরের আন্দোলন-সংগ্রামের পথপরিক্রমায় বঙ্গবন্ধু তার সহকর্মীদের নিয়ে ১৯৪৮ সালে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ এবং পরবর্তীতে ১৯৪৯ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ গঠন করেন। ১৯৫২ এর ভাষা আন্দোলন, ৫৪ এর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ৬২ এর শিক্ষা আন্দোলন, ৬৬ এর ছয়-দফা আন্দোলন, ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান পেরিয়ে ৭০ সালের ঐতিহাসিক নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হন।
বঙ্গবন্ধুর সাহসী, দৃঢ়চেতা, আপোষহীন নেতৃত্ব ও বীরত্বপূর্ণ সংগ্রামে অনুপ্রাণিত হয়ে জেগে ওঠে শত বছরের নির্যাতিত-নিপীড়িত পরাধীন বাঙালি জাতি। যার ফলে ১৯৭১ সালে রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে জন্ম নেয় বাঙালির জাতি রাষ্ট্র বাংলাদেশ।
স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি খুব বেশিদিন তার সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠার কাজ করে যেতে পারেননি। ১৯৭৫ সালের ১৫ই অগাস্টের কালরাত্রিতে বিশ্বাসঘাতকদের নির্মম বুলেটে নিহত হন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব।
বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে এক বাণীতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, “বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতির চিরন্তন প্রেরণার উৎস। বাংলাদেশকে জানতে হলে বাঙালির মুক্তি সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে জানতে হবে, বঙ্গবন্ধুকে জানতে হবে।”
মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আর জাতির পিতার আদর্শকে ধারণ করে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার পথে এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “নোঙর ফেলুক বঙ্গবন্ধুর ‘সোনার বাংলায়’।”প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাণীতে বঙ্গবন্ধুর সংগ্রামী জীবন তুলে ধরে বলেন, “বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শুধু বাঙালি জাতিরই নয়,তিনি ছিলেন বিশ্বের সকল নিপীড়িত-শোষিত-বঞ্চিত মানুষের অধিকার আদায় ও মুক্তির অগ্রনায়ক।
“তিনি যখন স্বাধীন বাংলাদেশের পুনর্গঠন কাজে আত্মনিয়োগ করেন, তখনই ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট স্বাধীনতার পরাজিত শক্তি তাকে পরিবারের বেশিরভাগ সদস্যসহ হত্যা করে। এর মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রা ও উন্নয়নকে স্তব্ধ করে দেওয়া হয়। অবৈধ সামরিক সরকারগুলো পরবর্তীতে বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সংবিধানকে ক্ষতবিক্ষত করে।”
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যাওয়ার পর বাংলাদেশের পুনরায় এগিয়ে যাওয়ার কথা বলেন শেখ হাসিনা।
“আমরা আজ আত্মমর্যাদাশীল দেশ হিসেবে বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছি। স্বাধীনতাবিরোধী সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী এবং উন্নয়ন ও গণতন্ত্রবিরোধী শক্তির সকল ষড়যন্ত্র প্রতিহত করে জাতির পিতার অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করতে আমরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।”
জাতীয় শিশু দিবসে শিশু-কিশোরদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ কামনা করেন সরকার প্রধান শেখ হাসিনা।
দিনটিতে দেশের সব সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সব সরকারি ও বেসরকারি ভবন এবং বিদেশে বাংলাদেশ মিশনগুলোতে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে।
দেশের সকল মসজিদ, মন্দির, প্যাগোডা, গির্জাসহ সকল ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে দেশব্যাপী বিশেষ প্রার্থনা কর্মসূচির নেওয়া হয়েছে।
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেলা ১১টায় গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে শ্রদ্ধা জানাতে যাবেন। সেখাতে ফাতেহা পাঠ করবেন রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান। বিকালে বঙ্গভবনে হবে বিশেষ মিলাদ।
ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু ভবন, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় এবং সারাদেশে সংগঠনের সব কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে।
সকাল সাড়ে ৭টায় জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ করা হবে। আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের একটি প্রতিনিধি দল টুঙ্গিপাড়ায় শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন এবং দোয়া ও মিলাদ মাহফিলে অংশ নেবে।
শুক্রবার বেলা আড়ইটায় টুঙ্গিপাড়ায় আলোচনা সভা করবে আওয়ামী লীগ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
Source: https://bangla.bdnews24.com/