১৫ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
মঙ্গলবার | সকাল ৮:৪৩
শ্রীনগরে বন্যার আরও অবনতি; পানিবন্দীদের নৌকাই ভরসা
খবরটি শেয়ার করুন:

মুন্সিগঞ্জ, ২৭ জুলাই, ২০২০, আমিনুল ইসলাম মাছুম (আমার বিক্রমপুর)

মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগরে বন্যায় পানিবন্দী মানুষের চলাচলে এখন নৌকাই একমাত্র ভরাসা। আজ সোমবার পর্যন্ত এখানে বন্যার আরও অবনতি হয়েছে। প্লাবিত হচ্ছে গ্রামের পর গ্রাম। ধীরে ধীরে পুরো উপজেলা এখন বন্যায় প্লাবিত হতে যাচ্ছে।

করোনার মোকাবেলার পাশাপাশি বন্যা কবলিত এলাকার হাজার হাজার পানিবন্দী পরিবারের প্রায় ৪৫ হাজার মানুষ গৃহবন্দী হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। বিশেষ কাজেকর্মে নৌকায় করে তারা যাতায়াত করছেন। এতে করে এলাকায় অনেকাংশে ছোট ছোট কোষা নৌকার কদর বেড়েছে। বিভিন্ন হাট বাজার ও রাস্তাঘাটের পাশে পারাপারে গুদারা নৌকা দেখতে পাওয়া যাচ্ছে। প্রায় ২২ বছর পরে হঠাৎ বন্যায় পানিবন্দী মানুষের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

শ্রীনগর উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ৬টি ইউনিয়নের মোট ৬০টি গ্রামের ১০ হাজার ৩১৮টি পরিবার পানিবন্দী হয়ে পরেছে। বন্যা কবলিত এলাকার ক্ষতিগ্রস্তদের ত্রাণ সহায়তা করা হচ্ছে। বন্যা কবলিত এলাকায় ১২টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

এর মধ্যে গত ২৬ জুলাই রোববার পর্যন্ত কোলাপাড়া আশ্রয় কেন্দ্র ১৬টি পরিবার, সমষপুর আশ্রয় কেন্দ্রে ১১টি পরিবার ও শ্রীনগর পাইলট স্কুল এন্ড কলেজে অস্থায়ী আশ্রয় কেন্দ্রে ১টি বন্যা কবলিত পরিবার আশ্রয় নিয়েছেন। পরিবারগুলোকে সরকারিভাবে প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী দেওয়া হচ্ছে।

এর আগে গত ২৫ জুলাই শনিবার দুপরের দিকে শ্রীনগরে বন্যা কবলিত এলাকাগুলো পরির্দশন করেন জেলা প্রশাসক মনিরুজ্জামান তালুকদার।

সরেজমিনে শ্রীনগরের বিভিন্ন বন্যাকবলিত এলাকা ঘুড়ে দেখা গেছে, এখানে বন্যার কোনও উন্নতি হয়নি। দিনদিন এলাকায় পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে পানিবন্দী মানুষের ভোগান্তি বেড়েই চলছে। সাংসারিক কাজকর্ম, বাজার সদাই ও বিশেষ কাজে নৌকাই তাদের একমাত্র ভরসা হয়ে উঠেছে।

ঢাকা-শ্রীনগর-দোহার আন্তঃ সড়কের জুশুরগাঁও, কয়কীর্ত্তণ, রাঢ়ীখাল, আল-আমিনসহ বিভিন্ন স্থানে সড়ক উপচে পানি প্লাবিত হচ্ছে। এত করে প্রায় দেড় দুই কিলোমিটার সড়ক পানিতে ডুবে রাস্তা ভেঙে যাচ্ছে। সড়কটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠায় সড়কে ভাড়ি যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

এছাড়াও উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নের মানুষের হাটা চলা ফেরার অধিকাংশ কাঁচা/পাকা রাস্তাই এখন পানির নিচে। প্রায় রাস্তার ওপর দিয়ে নৌকা চলাচল করতে দেখা গেছে।

ভোগান্তিকর পরিস্থিতিতে আসন্ন ঈদুল আযহা উপলক্ষে এখানকার মানুষের মাঝে এখনও ঈদের আমেজ লক্ষ্য করা যায়নি। এলাকার ছোট ছোট খামারিরা কোরবানির গরু বিক্রি করা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন।

উপজেলার মধ্যে বাঘড়া, ভাগ্যকুল ও কোলাপাড়া এলাকা বন্যায় বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যার পানি বৃদ্ধি হতে থাকলে দুই তিনদিনের মধ্যে উপজেলার অন্যান্য ইউনিয়নের বসত বাড়িঘর ডুবে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

পানিবন্দীরা বলেন, হঠাৎ বন্যা মানুষকে অতিষ্ট করে তুলেছে। বাড়ি থেকে কোথাও যেতে পারছেন না। করোনা মোকাবেলার পাশাপাশি বন্যায় তারা কর্মহীন হয়ে পরছেন। সরকারিভাবে ত্রাণ সহায়তা করা হলেও তা একটি পরিবারের চাহিদার তুলনায় খুবই সামান্য। আসছে ঈদেও তাদের মধ্যে কোনও আমেজ নেই এমনটাই জানান তারা।