মুন্সিগঞ্জ, ২৪ জুন, ২০২০, বিশেষ প্রতিনিধি (আমার বিক্রমপুর)
প্রশাসনের প্রশ্রয়ে থাকা স্থানীয় প্রভাবশালী রামপালের “জাহাঙ্গীর” এর শারিরীক ও মানসিক নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচতে বিচার চেয়ে করুণ আর্তনাদ নিয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুড়ে বেড়াচ্ছেন মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার রামপাল ইউনিয়নের একটি অসহায় পরিবার।
বিধবা নূর জাহান (৩৫) জানান, ৩ বৎসর আগে তার স্বামী মারা গেছে। এরপর থেকে তার ছেলে ফাহাদ হোসেন (১৫) তার ছোট বোন পান্না বেগম (৩২) ও ছোটবোনের ছেলে নাহিয়ান কাউসার (১০) কে নিয়ে রামপাল ইউনিয়ন পরিষদ সংলগ্ন বাসায় থাকেন। রামপাল ইউনিয়ন পরিষদ ঘেষা চা দোকানদার জাহাঙ্গীর তার কাছে কিছু জমি ভাড়া চায়। তিনি না দেয়ায় জাহাঙ্গীর ক্ষীপ্ত হয়ে উঠে।
গত রমজানে (১৯ মে) বিধবা নূর জাহানের অন্য এক ছেলের সাথে বিয়ে ঠিক হয়েছে এমন খবর পেয়ে বিয়ে যাতে না হয় এজন্য জাহাঙ্গীর লোকজন নিয়ে হুমকি ধমকি দেয় নূর জাহানকে।
বিধবা নূর জাহান (৩৫) আরও অভিযোগ করেন, হুমকি পেয়ে মুন্সিগঞ্জ সদর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দেন তিনি। অভিযোগ দিয়ে বাসায় ফেরার আগেই খবর পান জাহাঙ্গীর লোকজন নিয়ে তাকে মারধর করতে অপেক্ষা করছেন। তিনি অন্য রাস্তায় বাসায় ফিরলেও জাহাঙ্গীর লোকজন নিয়ে রাতে আবার বাসায় এসে হুমকি দিতে থাকেন। রাতে পুলিশকে জানালে পুলিশ ঘটনাস্থলে আসার আগেই সেখান থেকে সবাই পালিয়ে যায়।
নূর জাহান দাবি করেন, এরপর রাতেই পুলিশ কোন অভিযোগ-মামলা ছাড়াই দুই পক্ষের দুইজনকে রামপাল ফাড়িতে নিয়ে আটকে রাখে। পরদিন দুইপক্ষকে শান্ত থাকার শর্তে তাদেরকে ছেড়ে দেয় পুলিশ।
নূর জাহান জানান, জুনের ১৪ তারিখে দ্বিতীয় দফায় জাহাঙ্গীর গং তার ছোট বোনের ছেলে নাহিয়ান কাউসার (১০) ও তার ছেলে ফাহাদ হোসেন (১৫) রাস্তায় একা পেয়ে মারধর করে। নূরজাহান রামপাল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বাচ্চু শেখ কে তৎক্ষনাৎ বিষয়টি জানালে তিনি বিচারের আশ্বাস দেন। চেয়ারম্যানের সামনেই জাহাঙ্গীর তাকে পুনরায় মারধর করতে চান ও গালিগালাজ করেন। এরপর তিনি মুন্সিগঞ্জ সদর থানায় গিয়ে আবার অভিযোগ দেন। অভিযোগ দিয়ে বাড়ি ফেরার পথে স্থানীয় কালু দালালের ছেলে আলামিন (৩৭), আলাল উদ্দিন এর ছেলে ইয়ামিন (১৯) সহ কয়েকজন তাকে লাঠি-সোঠা দিয়ে বেধম মারধর করেন। মার খেয়ে স্থানীয় পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র ও পরে মুন্সিগঞ্জ সদর থানায় যান। থানায় মামলা না নিয়ে রাতে তাদের বাসায় ফেরৎ পাঠানো হয়।
বিধবা নূর জাহান (৩৫) আরও অভিযোগ করে ‘আমার বিক্রমপুর’ কে বলেন, ১৫ তারিখ সারাদিন অসুস্থ হয়ে তিনি বাসায় পড়ে থাকেন। পরদিন তার ছেলের শারিরীক অবস্থার অবনতি হওয়ায় ও তাদের সকলের উন্নত চিকিৎসার আশায় সদর হাসপাতালে যান। সেখান থেকে ঢাকা মেডিকেলে যান। জুনের ২১ তারিখে হাতিমাড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের এস আই এনামুল জোর করে জাহাঙ্গীরদের সাথে যোগসাজশ করে নামেমাত্র একটি এজাহার লিখে দেন। এরপর সদর থানায় মামলা দায়ের হয়। মামলা নং- ৪৪ (০৬) ২০২০। মামলার পরদিন তারা মামলা উঠিয়ে নিতে হুমকি দিতে থাকলে তিনি থানায় আবারও একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। এদিকে উর্ধত্বন কর্মকর্তারা এস আই এনামুলকেই মামলার তদন্তের দায়িত্ব দেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা হাতিমাড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের এস আই এনামুল সকল অভিযোগ প্রত্যাখান করে ‘আমার বিক্রমপুর’ কে বলেন, ‘সকল অভিযোগ মিথ্যা। উনি নিজে বলার পর আমি শুধুমাত্র সহযোগিতা করেছি । এমনকি এজাহার লেখার পরও উনি কয়েকবার পরেছেন তারপরেই স্বাক্ষর করেছেন।’
তিনি জানান, ‘এ ঘটনায় প্রধান আসামী জাহাঙ্গীর সহ ৪ জন আসামীকে গতকাল (মঙ্গলবার) অভিযান চালিয়ে আটক করা হয়েছে।’
বিধবা নূর জাহান বুধবার (২৪) সকালে জানান, আসামীরা জামিনে ছাড়া পেয়ে আবারও তাদের পরিবারকে হুমকি দিচ্ছে। তারা প্রকাশ্যে বলছে, ‘পুলিশ আমাদের ধরে নিয়ে আপ্যায়ণ করেছে’।
মুুন্সিগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ‘আমার বিক্রমপুর’ কে বলেন, ‘এ ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার ৪ জন আসামীকে পুলিশ আটক করে কোর্টে প্রেরণ করেছে। বাকীদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।’
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন মুন্সিগঞ্জ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক শেখ সাইদুর রহমান টুটুল ‘আমার বিক্রমপুর’ কে বলেন, এ ধরনের ঘটনা চরম অন্যায়। এটা অবশ্যই মানবাধিকারের লঙ্ঘন। উনি এদেশের একজন সাধারণ নাগরিক। উনার অধিকার আছে ন্যায়বিচার পাওয়ার- আইনি সহযোগিতা বা সাহায্য চাওয়ার পূর্ণ অধিকার তার রয়েছে। আমরা এ ঘটনার প্রতিবাদ জানাই’
তিনি বলেন, ‘পুলিশ যদি এরকম কিছু করে থাকে যেটা তার ন্যয্য চাওয়া বা আকাঙ্খা বা যেই আঙ্গিকে তিনি অভিযোগ করতে চেয়েছিলেন, পুলিশ যদি ঐ আসামীকে বাচানোর জন্য যদি কিছু করেই থাকে তাহলে এটা চরম অন্যায়। আমাদের যদি সহযোগিতার প্রয়োজন হয় আমরা ঐ নারীকে সকল ধরনের আইনী সহযোগিতা করবো।’