আনুষ্ঠানিক প্রচার শেষ। এখন ভোটের অপেক্ষা। আজ রাত পোহালেই কাল পৌর নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। ভোটাররা অধীর আগ্রহে সেই ক্ষণটির প্রহর গুনছেন। নিজের ভোট দেওয়ার পাশাপাশি শেষ পর্যন্ত কোন প্রার্থীর মাথায় বিজয় মুকুট ওঠে, তা দেখার আগ্রহেও সময় কাটছে তাদের। আর দিনরাতের ক্লান্তিহীন প্রচার শেষে গতকাল মধ্যরাতের পর থেকে প্রার্থীরাও ছিলেন অনেকটা ‘ঢিলেঢালা মুডে’। তবে ঘরোয়া প্রচারের সুযোগ নিয়ে রাতভর বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটারদের দোয়া প্রার্থনা থেমে ছিল না। এদিকে নির্বাচন কমিশন (ইসি) নিরাপদে ভোট অনুষ্ঠানের যাবতীয় প্রস্তুতি শেষ করেছে।
ইসি আশা করছে, আগামী বুধবার পৌরসভা নির্বাচনে ভোটাররা নির্বিঘ্নেই ভোট দিতে পারবেন। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে ইসি সচিবালয়ে গতকাল সোমবার দুপুরে নির্বাচন কমিশনার শাহনেওয়াজ সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘পর্যাপ্ত আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। তাই ভোটাররা সুষ্ঠুভাবে ভোট দিতে পারবেন। নির্বিঘ্নেই ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন। এতে কোনো সমস্যা হবে না।’এদিকে গতকাল মধ্যরাত অর্থাৎ রাত ১২টার পর থেকে দেশের ২৩৪টি পৌরসভায় নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচার শেষ হয়েছে। এর আগে রাত ৮টাতেই বন্ধ হয়ে যায় মাইকে প্রচার ও ভোট প্রার্থনা। নির্ধারিত সময়েই নির্বাচনী মিছিল-সমাবেশ ও প্রচারসভা বন্ধ
হয়ে যাওয়ায় পক্ষকালের কোলাহলমুখর পরিবেশ হঠাৎ করেই নীরব-নিস্তব্ধ হয়ে পড়ে। আজ মঙ্গলবার দিনভর প্রচারবিহীন শ্বাসরুদ্ধকর একটি দিন কাটবে প্রার্থীদের।
৯ ডিসেম্বর থেকে শুরু হয়েছিল নির্বাচনের এ আনুষ্ঠানিক প্রচার। আর ১৪ ডিসেম্বর থেকে শুরু হয় প্রার্থীদের প্রতীকসহ প্রচার কার্যক্রম, যা গতকাল সোমবার মধ্যরাতের পর শেষ হয়েছে।
আগামীকাল বুধবার সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ২৩৪টি পৌরসভার তিন হাজার ৫৫৫টি ভোটকেন্দ্রের ২১ হাজার ৭১টি কক্ষে একযোগে ভোট নেওয়া হবে। এরপর শুরু হবে ভোট গণনা। তার পর রাতেই জানা যাবে ভোটের ফলাফল। কে জিতেছেন, কে হেরেছেন, ভোটের ব্যবধান কত, কে কোথায় কত ভোট পেয়েছেন- রাতভর চলবে এ রকম হিসাব-নিকাশ। আর ফল ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে অবসান ঘটবে সব প্রতীক্ষার।
তবে ভোট নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা আর শঙ্কার রেশ ছিল গতকালও। যেসব পৌরসভায় গত কয়েক দিন ধরে সংঘাত-সহিংসতা চলেছে, সেসব স্থানে এ উদ্বেগের মাত্রা ছিল তুলনামূলক বেশি। শেষ পর্যন্ত ভোটের পরিবেশ শান্তিপূর্ণ থাকবে কি-না, সবাই ভোট দিতে পারবেন কি-না- তা নিয়েও জল্পনা-কল্পনা কম নেই। ভোটারদের নির্বিঘ্নে ভোট দেওয়ার বিষয়ে অনেক প্রার্থীরও সংশয় রয়েছে।
এদিকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসনের বাড়তি তৎপরতা শুরু হয়ে গেছে। গতকাল সোমবারই অধিকাংশ এলাকায় বিজিবি মোতায়েন শুরু হয়েছে। পাশাপাশি পুলিশ, র্যাব, আনসারসহ অন্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও কাজ শুরু করেছেন। বিশেষ করে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত ভোটকেন্দ্রগুলোর দিকে রয়েছে বাড়তি নজর। সারাদেশের ভোটকেন্দ্রগুলোর মধ্যে ১ হাজার ৬১৮টিকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশন, যা মোট ভোটকেন্দ্রের প্রায় অর্ধেক। বিভাগভিত্তিক পর্যালোচনায় দেখা যায়, সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র আছে খুলনা বিভাগে। এই বিভাগের ৪৮১টি কেন্দ্রের মধ্যে ৩৬৯টিই ঝুঁকিপূর্ণ।
ঢাকা বিভাগে ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র ৯৯১টির মধ্যে ৩৪৮টি। রাজশাহী বিভাগের ৮০১টি কেন্দ্রের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ ২৪৬টি। রংপুর বিভাগের ৩৩৮ কেন্দ্রের মধ্যে ২২৩টি ঝুঁকিপূর্ণ। চট্টগ্রাম বিভাগের ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রের সংখ্যা ৪৮০টির মধ্যে ১৬৮টি। সিলেট বিভাগের ১৮৯ কেন্দ্রের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ ১৪৬টি। আর বরিশাল বিভাগের ১৭৬ কেন্দ্রের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রের সংখ্যা ১১৮টি।
বুধবার দেশের ২৩৪টি পৌরসভায় ২৩৪টি মেয়র, দুই হাজার ১৯৩টি সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও ৭৩১টি সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে ভোট নেওয়া হবে। নির্বাচন কমিশনের হিসাবে, এসব পৌরসভায় প্রতিদ্বন্দ্বী মেয়র প্রার্থী সংখ্যা ৯৪৩ জন। তবে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এরই মধ্যে ছয়জন মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। এ ছাড়া সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে আট হাজার ৭৪৬ এবং সংরক্ষিত মহিলা ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে দুই হাজার ৪৮০ জন প্রার্থী রয়েছেন। ২৩৪ পৌরসভায় মোট ভোটার সংখ্যা ৭০ লাখ ৯৯ হাজার ১৪৪ জন; যার মধ্যে পুরুষ ভোটার ৩৫ লাখ ৫২ হাজার ১৮৪ এবং নারী ভোটার ৩৫ লাখ ৪৬ হাজার ৮৬০ জন।