মুন্সিগঞ্জ, ২৩ জানুয়ারি, ২০২০, কাজী সাব্বির আহমেদ দীপু (আমার বিক্রমপুর)
মুন্সিগঞ্জে প্রচণ্ড শীতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছে শীতবস্ত্রহীন দরিদ্র মানুষ।
শীতজনিত রোগের প্রকোপ বেড়ে গেছে। নতুন বছরের প্রথম দিন থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত ২১ দিনে প্রচণ্ড শীতে মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের আউটডোরে চিকিৎসা নিয়েছে ১০ হাজার ৭০২ জন রোগী।
এছাড়া চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৯৩৮ রোগী। এর মধ্যে ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে ২ শিশু এবং বার্ধক্যজনিত রোগে চিকিৎসাধীন এক নারীর মৃত্যু হয়েছে।
শীতের তীব্রতায় ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিনই হাসপাতালে ভিড় করছে শত শত রোগী। বিপুল সংখ্যক রোগীকে চিকিৎসাসেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে ডাক্তার, নার্স ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের।
এদিকে অভিযোগ রয়েছে সরকারি হাসপাতালের ডাক্তার, নার্স ও দালালদের সহযোগিতায় রোগিদের ভাগিয়ে নিয়ে রমরমা বাণিজ্য করছে প্রাইভেট ক্লিনিকগুলো।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রচণ্ড শীতে হাসপাতালে রোগীর চাপ বৃদ্ধির সুযোগে শহর ও আশপাশ এলাকায় গড়ে ওঠা ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো চিকিৎসার নামে বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে।
মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে কর্মরত ডাক্তার, নার্স ও দালালদের কমিশন বাণিজ্যের কারণে ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর ব্যবসা জমজমাট হয়ে উঠেছে।
সরকারি হাসপাতাল ও ডাক্তারের চেম্বারে চিকিৎসা নিতে গেলে দূর-দূরান্তের রোগীদের প্রয়োজন ছাড়াই রক্ত ও প্রস্রাব পরীক্ষা, আল্ট্রাসনোগ্রাম, এক্সরেসহ বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যবস্থাপত্র ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এমনকি বলে দেওয়া হচ্ছে, কোন প্রতিষ্ঠানে এ পরীক্ষাগুলো করতে হবে।
তাই রোগীরা ডাক্তারের নির্দেশিত প্রতিষ্ঠানগুলোতে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে বাধ্য হচ্ছে। এ সুযোগে ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড প্যাথলজিক্যাল সেন্টারগুলোর মালিকপক্ষ রোগীদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
এদিকে মুন্সিগঞ্জ শহর এলাকার মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চলতি বছরের শুরুতেই শীতের তীব্রতায় জনজীবনে স্থবিরতা নেমে আসে। সন্ধ্যার মধ্যেই ঘরে ফিরছে কর্মব্যস্ত মানুষ। প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের হচ্ছে না কেউ। যারা কাজের তাড়নায় বাইরে অবস্থান করে, তারা রাস্তার ধারে ও বাড়ির আঙিনায় আগুন জ্বালিয়ে শরীর গরম করার চেষ্টা করছে।
দিনপ্রতি হিসাব অনুযায়ী, ১ জানুয়ারি ৪৮২ জন, ২ জানুয়ারি ৭৩৮ জন, ৪ জানুয়ারি ৫৯৫ জন, ৬ জানুয়ারি ৮৪৬ জন, ৭ জানুয়ারি ৫৫২ জন, ৮ জানুয়ারি ৫২৩ জন, ৯ জানুয়ারি ৪৯০ জন, ১১ জানুয়ারি ৪৬৯ জন, ১২ জানুয়ারি ৭৯১ জন, ১৩ জানুয়ারি ৫৪৯ জন, ১৪ জানুয়ারি ৫৪৮ জন, ১৫ জানুয়ারি ৬৭৪ জন, ১৬ জানুয়ারি ৫১২ জন, ১৮ জানুয়ারি ৫৭২ জন, ১৯ জানুয়ারি ৮২৮ জন, ২০ জানুয়ারি ৭৯১ জন এবং ২১ জানুয়ারি ৭৪২ জনসহ ২১ দিনে মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের আউটডোরে চিকিৎসা নিয়েছে ১০ হাজার ৭০২ রোগী। এদের বেশিরভাগ ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত।
জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগে কর্মরত মো. আরিফ জানান, বিগত বছরগুলোর তুলনায় এবার শীতের শুরুতেই ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিন শত শত নারী-পুরুষ ও শিশু রোগীর ভিড় বাড়ছে হাসপাতালে। গত ২১ দিনে শুধু আউটডোরেই চিকিৎসা নিয়েছে ১০ হাজার ৭০২ রোগী। আর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে ৯৩৮ জন। এর মধ্যে ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত দুই শিশু ও বার্ধক্যজনিত কারণে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে।
সিভিল সার্জন ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, চিকিৎসক ও জনবল সংকট থাকায় রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
প্রয়োজন ছাড়াই পরীক্ষা-নিরীক্ষার বিষয়ে জানতে চাইলে সিভিল সার্জন বলেন, প্রয়োজন ছাড়া বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা দেওয়ার কোনো অভিযোগ পাইনি। রোগীরা এমন অভিযোগ করলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।