২৯শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
মঙ্গলবার | রাত ১১:৪১
মুন্সিগঞ্জে মাজার ঘিড়ে জমজমাট মুর্তির ব্যবসা
খবরটি শেয়ার করুন:

আরাফাত রায়হান সাকিবঃ শরীর কিংবা হাত-পায়ের যেকোন রোগে মাটির মূর্তি ও সদৃশ হাত-পা ফজুশাহ মাজারে মানত করলে ভালো হয়ে যায় রোগ! মাজারে মানতের ফলে মৃত্যুশয্যা থেকেও সম্পূর্ন সুস্থ হয়েছে অনেকে! এমনই কুসংস্কারে গত কয়েক যুগ ধরেই টংগিবাড়ী উপজেলার আড়িয়ল ইউনিয়নের ফজুঁশাহ মাজারে মুর্তি মানত করে আসছে সরল বিশ্বাসী স্থানীয় মানুষেরা।

আর এ কুসংস্কারকে পুঁজি করে স্থানীয়দের যোগসাজশে মূর্তির ব্যবসা চালাচ্ছে মাজারের খাদেমরা।

এদিকে বিষয়টি অবহিত হওয়ার পর ব্যবস্থা গ্রহন করেছেন টংগিবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হাসিনা আক্তার।

এর আগে গত রবিবার সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মাজারের সামনেই ১৪টি টং দোকান। দোকান গুলোতে মাটির তৈরি মুর্তি, হাত-পা, চোখ-কান সহ অঙ্গপ্রতঙ্গের বেঁচা-বিক্রি করছে। মাজার প্রাঙ্গনেই সব গুলো দোকান। মাজাঁরের সামনেই দিনের বেলা জ্বলছে মোমবাতি। কেউ মাজারে মুর্তি প্রদান করছে, আবার কেউ কথিত নিয়ম অনুযায়ী মাজারের চারো দিকে আড়াই বার প্রদক্ষিণ করছে। সিজদাও দিতে দেখা যায় অনেককে। এছাড়াও আছে লাঠিতে তেল ঢেলে সে তেল শরীরের মাখার ব্যবস্থাও রয়েছে । রয়েছে গান বাজাঁনার ব্যবস্থাও। কুসংস্কারাচ্ছন্ন মাজারটিতে যেন ধর্ম অবমাননার মহাউৎসব চলছে। মাজারের আসা এক ভক্ত আয়শা আক্তার জানান, মায়ের পায়ে সমস্যা ছিলো মানত করেছি ,ভালো হয়েছে । তাই একটি মুর্তি দিয়ে গেলাম। একই কথা জানান আরেক ব্যাক্তি নজরুল ইসলাম। মাজারের খাদেম ইদ্রিস দেওয়ান জানান, পুর্নাঙ্গ মুর্তি ৩শ থেকে ৫শ টাকা, হাত-৭০ টাকা , পা-১৫০টাকা, চোখ ৩০টাকা, কান ২০টাকা ধরে বিক্রি করে তারা। স্থানীয় কুমারবাড়ি থেকে তৈরি করে এনে ৫থেকে ৫০টাকা লাভে এসব বিক্রয় হয়।

প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ মাজারে আসে। সবার মনের বাসনাই পূর্ন হয় মাজার মানতে। মাজারের এ রীতি ইসলাম ধর্ম সমর্থন করে কিনা এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কোন সদুত্তর পাওয়া যায়নি তার কাছে।

আরেক খাদেম শিকান্দার দেওয়ান জানান, কেউ মুর্তি কেউ ছাগল, মোরগ-মুরগি মানত করে। স্বর্নের অলংকারও দেয় অনেকে।

এদিকে অনুসন্ধানে দেখা গেছে মাজারে মুর্তি দেওয়ার পর সে মুর্তি আবারো দোকানে ফিরিয়ে আনেন খাদেমরা। একই ভাবে আবারো হয় বিক্রি।

টাকা-পয়সা, মুরগ-মুরগি, গরু-ছাগল ভাগ-বাটোয়ারা করে নেন খাদেমরা।

মানুষ ঠকিয়ে র্দীঘদিন যাবতই চলছে তাদের এ ব্যবসা।

এবিষয়ে জানতে চাইলে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাসদেন টংগিবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হাসিনা আক্তার।

একইদিন রাতে তিনি ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে ১৪টি দোকানে থাকা এসব মুর্তি, মাটির হাত-পা বিনষ্ট করেন।

তিনি বলেন, আপনাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতেই সরজমিনে গিয়ে বিষয়টির সত্যতা পাই। এটি একটি সু-স্পষ্ট প্রতারণা। কোন ধর্ম কিংবা বিজ্ঞান এর সমর্থন করে না। দোকানগুলো বন্ধ করা হয়েছে। খাদেমদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এসব কুসংস্কার কর্ম বন্ধ করার জন্য।

error: দুঃখিত!