মুন্সিগঞ্জ, ৩ মার্চ, ২০২০, বিশেষ প্রতিনিধি (আমার বিক্রমপুর)
মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান ও শ্রীনগর উপজেলার মৌ-চাষিরা সরষের ক্ষেতে মধু চাষে ব্যস্ত সময় পার করছেন। এ দুটি উপজেলায় মাঠের পর মাঠ সরষে ফুলের হলুদ রঙে প্রকৃতি যেন হলুদ শাড়ি পরিধান করেছে। এসব সরষে ক্ষেতে মৌমাছির ভন ভন শব্দে যেন প্রকৃতি কন্যার বিয়ের সানাইয়ের সুর তুলেছে।
মুন্সিগঞ্জে মধু চাষে সব সময়ই সাফল্য পেয়েছেন অনেক চাষি। নানা মৌসুমে মধু সংগ্রহের জন্য এক এলাকা থেকে অন্য এলাকা, কখনও কখনও এক জেলা থেকে অন্য জেলায় যান এখানের মৌ-চাষি ও খামারিরা।
তবে এবার মধু উৎপাদন বেশি হলেও বিক্রি কম। এ কারণে লোকসান গুনছেন চাষিরা। সহজে বাজারজাতকরণ বা বোতলজাতকরণ করতে পারছেন না তারা।
সিরাজদিখানের মৌ-চাষি মনিরুজ্জামান লিটন বলেন, পাঁচ বছর ধরে এ ব্যবসা করছি। এ বছর মৌ-চাষে আশানুরূপ মধু সংগ্রহ করতে পেরেছি। কিন্তু পাইকার ও দাম কম। ফলে মধু বিক্রি করতে পারছি না। এ কারণে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছি। বিএসটিআই’র অনুমোদন নিয়ে কিছু জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। সঙ্গে রয়েছে অন্যান্য জটিলতা। এসব কারণে অনেক মৌ-খামারি এখন চরম বিপাকে রয়েছেন। তাই তারা সরকারের সহযোগিতা কামনা করছেন। অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়ে অনেক ব্যবসায়ী রপ্তানি করতে চান মধু। এজন্য সরকারের সুদৃষ্টির আশায় রয়েছেন তারা, যেন এ মধু রপ্তানি করা যায়। নয়তো অনেক খামারি এ ব্যবসা থেকে সরে দাঁড়াবেন। কেননা, এ বছর পাইকারি দর তুলনামূলক কম থাকায় লোকসান গুনছেন তারা। আর এর নেতিবাচক প্রভাব সুদূরপ্রসারী হতে পারে বলে শঙ্কা সংশ্লিষ্টদের।
মুন্সিগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ সূত্রে জানা গেছে, জেলার শ্রীনগর ও সিরাজদিখান উপজেলায় এ বছর প্রায় ছয় হেক্টর জমিতে সরষের আবাদ হয়েছে। এ মৌসুমে সরষের ওপর নির্ভর করে এ দুই উপজেলায় কয়েকটি মৌ-খামার গড়ে উঠেছে। একেকজন খামারির রয়েছে ৬০ থেকে ৭০টি বাক্স। প্রতি বাক্সে সপ্তাহে দুই থেকে আড়াই কেজি মধু সংগ্রহ করছেন খামারিরা। এ মৌসুমে ২৫ থেকে ৩০ দিনে মধু সংগ্রহ হয়েছে দুই টনের বেশি। প্রতি কেজি পাইকারি বাজারে ১৮০ থেকে ২০০ টাকা ও খুচরা বাজারে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা দরে বিক্রি হয়।
এ প্রসঙ্গে সিরাজদিখান উপজেলা সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোশারফ হোসেন বলেন, এ উপজেলায় এ বছর তিন হেক্টর জমিতে সরষের আবাদ হয়েছে। গত বছরগুলোর তুলনায় এবার পাইকার ও বিক্রি তুলনামুলক কম। তাই মৌ-চাষির সংখ্যা দিন দিন কমছে।
শ্রীনগর উপজেলা সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. জিয়াউর রহমান বলেন, শ্রীনগর উপজেলায় এবার তিন হেক্টর জমিতে সরষের আবাদ করা হয়েছে। এ উপজেলায় এবার দুই খামারি মধু চাষ করেছেন। আমরা মৌ-চাষে তাদের উদ্বুদ্ধ করে থাকি। এ মৌ-চাষের কারণে কৃষকের ক্ষেতের পরাগায়ন বেশি ঘটে। সরষে ক্ষেতের পাশে মৌমাছির চাষ হলে সরষের ফলন ১০ শতাংশ বাড়ে। তাই সরষের ফলন বেশি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আমরা মৌ-চাষিদের চাহিদা অনুযায়ী সরকারের কাছে অনুরোধ করেছি যেন এ মধু দেশের চাহিদা পূরণ করে রপ্তানি করা যায়। এতে মৌ-চাষে আগ্রহী হবেন আরও অনেকে।