২৪শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
বৃহস্পতিবার | রাত ৯:৫৩
মুন্সিগঞ্জে ‘ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগ’ নিয়ে দিনভর তুলকালাম, মামলা দায়ের
খবরটি শেয়ার করুন:

মুন্সিগঞ্জ, ২৫ মার্চ ২০২৫, নিজস্ব প্রতিনিধি (আমার বিক্রমপুর)

মুন্সিগঞ্জ শহরের কোর্টগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নৈশপ্রহরী পদে কর্মরত আবুল হোসেনের (৫৫) বিরুদ্ধে বিদ্যালয়টির চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ুয়া এক শিশুকে (১০) ধর্ষণের অভিযোগ এনে গণধোলাই দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করেছেন স্থানীয়রা। এ নিয়ে দিনভর উত্তাল ছিলো মুন্সিগঞ্জ শহর।

আজ সন্ধ্যায় সদর থানায় এ ঘটনায় ভুক্তভোগী শিশুর মা অভিযুক্তকে প্রধান আসামি করে মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় ‘ধর্ষণের চেষ্টা’র অভিযোগ আনা হয়েছে।

মুন্সিগঞ্জ সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সজিব দে মামলার তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, বাদীর দায়েরকৃত এজাহারের প্রেক্ষিতে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন-২০০০ এর ৯ এর (খ) ধারায় মামলাটি রুজু হয়েছে।

আসামিকে আদালতে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে বলেও জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।

দিনভর যা হলো

মঙ্গলবার সকাল এগারোটার দিকে মুন্সিগঞ্জ শহরের কোর্টগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নৈশপ্রহরী আবুল হোসেনকে (৫৫) ভুক্তভোগীর স্বজনসহ স্থানীয় কয়েকজন ধর্ষণের অভিযোগ তুলে মারধর শুরু করেন। খবর পেয়ে সেখানে আশপাশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও উৎসুক জনতা জড়ো হন। একপর্যায়ে স্কুলের গেট ও দরজা ভেঙে ঢুকে পড়েন ২০-৩০ জন। তারাও ধর্ষণের অভিযোগের কথা শুনে ব্যাপক মারধর করেন। পরে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়।

এসময় আবুল হোসেন মারধরে মারা গেছেন এমন তথ্য ছড়িয়ে পড়লে লোকজন ধীরে ধীরে সরে যান। পুলিশ আবুল হোসেনকে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নিয়ে আসে মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে। সেখানে পুলিশ ভ্যান থেকে আবুল হোসেনকে নামানোর সময় তিনি জীবিত আছেন এমনটা দেখা গেলে সেই তথ্য ছড়িয়ে পড়ে শহরে। পরে বিভিন্ন মাধ্যমে খবর পেয়ে দেড়-দুইশো বিক্ষুব্ধ ব্যক্তি হাসপাতালে ছুটে আসেন। উপস্থিত হন ভুক্তভোগীর স্বজনরাও। সেখানে তারা আবুল হোসেনকে নিজেদের হাতে তুলে দেয়ার জন্য বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন।

একপর্যায়ে গুরুতর আহত আবুল হোসেনের প্রাণরক্ষা ও উন্নত চিকিৎসার জন্য গাড়িতে করে ঢাকায় নেয়ার চেষ্টা করে সেনাবাহিনী। কিন্তু অভিযুক্ত ব্যক্তিকে বহনকারী সেনাবাহিনীর গাড়িটি বিক্ষুব্ধদের আপত্তির মুখে হাসপাতালের মেইন গেইট থেকে বের হতে না পেরে পিছন দিকে ফিরে আসে। এসময় বিক্ষুব্ধ কয়েকজন সেনাবাহিনীর গাড়ির সামনে দাড়িয়ে যান। লাঠি দিয়ে সেনাবাহিনীর গাড়িতে আঘাতও করেন কয়েকজন।

পিছনে ফিরে এসে আবুল হোসেনকে গাড়ি থেকে নামিয়ে হাসপাতাল অভ্যন্তরে নিয়ে যায় সেনাবাহিনী। এসময় বিক্ষুব্ধরা তাকে নিজেদের হেফাজতে নিতে বিকাল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত টানা ৬ ঘন্টা হাসপাতালে ঢোকার চেষ্টা করলেও শেষপর্যন্ত সেনাবাহিনী ও পুলিশ সদস্যরা তাদের পথরোধ করে।

সন্ধ্যা ৫টা ৪৫ মিনিটের দিকে সেনাবাহিনী ও ম্যাজিস্ট্রেটের পাহাড়ায় আবুল হোসেনকে মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল থেকে বের করে নেয়া হয়। পরে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের আদেশে তাকে আদালতে প্রেরণ করা হয়।

‘ধর্ষণ চেষ্টা’য় অভিযুক্ত আবুল হোসেন উত্তর কোর্টগাঁও এলাকার মৃত আব্দুর রহমানের পুত্র।

মুন্সিগঞ্জ সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এম সাইফুল আলম বলেন, গতকাল সোমবার (২৪ মার্চ) সকাল ১০টার দিকে কোর্টগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীর ওই ছাত্রী স্কুলে আসে। তখন স্কুলে অন্য কেউ না থাকায় স্কুলের দপ্তরি আবুল আবুল হোসেন মেয়েটিকে একটি কক্ষে নিয়ে ধর্ষণের চেষ্টা করে। এ সময় আরো দুই তিনটি ছেলে-মেয়ে স্কুলে চলে আসে। তারা মেয়েটিকে দেখে চিৎকার দিলে অভিযুক্ত ব্যক্তি মেয়েটিকে ছেড়ে দেয়। পরে ভুক্তভোগী শিশু রাতে তার মাকে ঘটনাটি জানায়। আজ সকালে এগারোটার দিকে ভুক্তভোগী শিশুর মা পরিবারের অন্যান্য লোকজনসহ স্কুলে এসে প্রধান শিক্ষকের কাছে অভিযোগ জানান। এ সময় স্থানীয় উত্তেজিত জনতা ওই দপ্তরিকে গণধোলাই দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করে।’

ওসি জানান, বর্তমানে ওই এলাকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।

error: দুঃখিত!