মুন্সিগঞ্জ, ১০ জুলাই ২০২৪, নিজস্ব প্রতিনিধি (আমার বিক্রমপুর)
মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখানে অবৈধভাবে মাটি কাটা নিয়ে পূর্ববিরোধকে কেন্দ্র করে দুই গ্রুপের টেটাযুদ্ধের ঘটনা ঘটেছে। এসময় বসতঘরে আগুন ও টেটা দিযে হামলার ঘটনা ঘটে। ঘটনাস্থল থেকে ২৫ টি টেটা উদ্ধার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৭ জনকে। টেটাবিদ্ধসহ আহত হয়েছেন অন্তত ১০ জন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ২৫ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে পুলিশ।
অন্যদিকে, ঘটনার সময় ওই এলাকার এক সাংবাদিককে মোবাইলে কল করে ডেকে এনে পিটিয়ে আহত করার অভিযোগ পাওয়া গেছে পুলিশের বিরুদ্ধে৷ এছাড়া সেলিনা বেগম (৪১) নামে এক নারীকে মাটিতে ফেলে পেটাতে দেখা গেছে ওসিকে।
আহত সাংবাদিক সালাউদ্দিন সালমান সিরাজদিখান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুজাহিদুল ইসলাম, ওসি (তদন্ত) মোক্তার হোসেন ও তাদের সাথে থাকা অন্যান্য কয়েকজন পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ তুলেছেন।
বুধবার (১০ জুলাই) সকালে উপজেলার বালুচর ইউনিয়নের চান্দেরচর এলাকায় অবৈধভাবে মাটি কাটাকে কেন্দ্র করে পূর্ববিরোধের জেরে সংঘর্ষে জড়ায় কামিজউদ্দিন কামু ও কালাইচান মাদবর পক্ষের লোকজন।
এসময় টেটাবিদ্ধসহ আহত হন অন্তত ১০ জন। আগুন দেয়া হয় কালাইচান মাদবর পক্ষের নীলু মিয়ার বসতঘরে। ঘটনাস্থল থেকে ৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এছাড়া জব্দ করা হয়েছে ২৫ টি টেটা।
আহত সাংবাদিক সালাউদ্দিন সালমান অভিযোগ করে বলেন, ‘ঘটনার সময় আমি পেশাগত দায়িত্ব পালন করছিলাম। এর মধ্যে কয়েকবার ওসির সাথেও আমার কথা হয়। পরে সকাল ১০ টার দিকে ওসি আমাকে কল করে তার সাথে দেখা করতে বলেন। আমি সেখানে আসতেই ওসি আমার হাতে থাকা মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেন। এসময় ওসি তদন্তসহ বাকি সদস্যরা আমাকে বেধম পেটাতে থাকেন। আমি বারবার তাদের জিগ্যেস করেছি, আমাকে কেন পেটাচ্ছেন- আমার অপরাধ কি? কিন্তু তারা কোন উত্তর দেয়নি।’
আহত সাংবাদিক সালাউদ্দিন সালমান দৈনিক মানবকণ্ঠের উপজেলা প্রতিনিধি ও চান্দেরচর এলাকার মৃত আব্দুর রবের পুত্র। অপর আহত নারী সেলিনা বেগম (৪১) ওই এলাকার সাখাওয়াত হোসেনের স্ত্রী।
টেটাযুদ্ধের বিষয়ে বিবদমান দুই গ্রুপের এক পক্ষের কামিজউদ্দিন কামু বলেন, ‘ঘটনার সময় আমি এলাকায় ছিলাম না। ঘটনাটি ঘটেছে আমার ভাগ্নে ও ভাতিজার মধ্যে। তাদের সাথে আগে থেকেই বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ঝামেলা ছিলো। ১০-১৫ দিন আগেও এদের মধ্যে মারামারি হয়। এরপর মামলা হলে প্রতিপক্ষ আরও ক্ষিপ্ত হয়ে বুধবার সংঘর্ষে জড়ায়।’
অপরপক্ষে থাকা কালাইচান মাদবর বলেন, ‘আমি কয়েকদিন ধরে অসুস্থ হয়ে ঢাকায় রয়েছি। কামুর লোকজন পূর্বপরিকল্পিতভাবে পানিয়ারচর থেকে লোক ভাড়া করে এনে টেটা নিয়ে হামলা চালায় আমার লোকজনের উপর। পুলিশও কামুদের পক্ষে অবস্থান নেয়।’
সাংবাদিককে মারধরের সত্যতা নিশ্চিত করে ওসি বলেন, ‘সাংবাদিক সালমান আমার পূর্ব পরিচিত। কিন্তু সে এসে পুলিশ সদস্যদের সাথে তর্ক জড়ায়। পরে তাদের মধ্যে হাতাহাতি হয়। ওই সাংবাদিক পরিস্থিতি না বুঝতে পারার কারনে এমনটা হয়েছে। পরে আমি তার কাছে সরি বলেছি।’ নারীকে পেটানোর বিষয়ে তিনি কোন মন্তব্য করেননি।
টেটাযুদ্ধের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এ ঘটনায় উভয়পক্ষের ৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মামলা প্রক্রিয়াধীন।’
মুন্সিগঞ্জ পুলিশ সুপার আসলাম খান বলেন, ‘সাংবাদিকের সাথে যে ঘটনা ঘটেছে এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে পাশাপাশি নারীকে পেটানোর বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।’ তিনি বলেন, ‘টেটাযুদ্ধে যারা জড়িত তাদের কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।’