মুন্সিগঞ্জ, ৯ আগস্ট ২০২৪, নিজস্ব প্রতিনিধি (আমার বিক্রমপুর)
মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া উপজেলায় একই রাতে দুই গ্রামে ডাকাতি-লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে সেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। ঘটনার সময় ধারণকৃত একটি সিসিটিভি ফুটেজ পাওয়া গেছে। এ ছাড়া স্থানীয় ইউপি সদস্য অভিযুক্তদের পরিচয় নিশ্চিত করেছেন।
অভিযুক্তরা হলেন, গজারিয়া উপজেলার হোসেন্দি ইউনিয়ন সেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আতাউর নপ্তী (৩৫) ও হোসেন্দি ইউনিয়নের ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সংগ্রাম মোল্লাসহ (২৮) ২৫/৩০ জনের একটি দল। এসময় ৩টি বাড়ি ভাংচুর করা হয়।
হোসেন্দি ইউনিয়ন পরিষদের ২ নং ওয়ার্ড সদস্য কিরণ সরদার এসব তথ্য জানিয়েছেন।
জানা গেছে, অভিযুক্তরা আনুমানিক ১২ ভরি স্বর্ণালঙ্কার, প্রায় সাড়ে ৪ লাখ টাকা ও ৫টি মোবাইল সেট লুট করেছে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। এছাড়াও সনাতন ধর্মাবলম্বীদের হুমকির অভিযোগ পাওয়া গেছে।
বুধবার (৮ আগষ্ট) রাত ১ টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত গজারিয়া উপজেলার হোসেন্দি ইউনিয়নের ইসমানিরচর ও কলসের কান্দি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
ইসমানিরচর গ্রামের মো. হান্নান সরদারে স্ত্রী মোসা: মাহমুদা আক্তার (৩৪) অভিযোগ করে বলেন, রাত দেড়টার দিকে আতাউর আমার বাসায় এসে আমার স্বামীকে খোঁজে। ঘরের দুয়ারে লাথি মারে। দুয়ার খুলে দেখি তাদের হাতে পিস্তল ও ধাঁড়ালো ছুরি। তারা ঘরে ঢুকে আমার হাত থেকে মোবাইল ফোন কেড়ে নেয়। পরে ঘর থেকে ২ লাখ ১০ হাজার টাকা, আমার ও আমার মেয়ের কানের দুলগুলো খুলে নেয়। কাউকে বললে, আমাদের সবাইকে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে যায়। আমার স্বামী প্রবাসী ছিলেন। কিছুদিন আগে দেশে আসছেন আবার চলেও যাবেন।
কলসের কান্দি গ্রামের কামাল ফরাজির স্ত্রী নাসরিন আক্তার (৩০) অভিযোগ করে বলেন, রাত ২ টার দিকে আমাদের বাড়িতে ডাকাল দল আসে। ‘আমরা আইনের লোক, দুয়ার খুলেন। কামাল বাড়িতে আছে নাকি, ওর সাথে কথা বলমু।, দুয়ার খুলে দেখি পাশ্ববর্তী গ্রামের আতাউরসহ ২০ থেকে ৩০ জন লোক আসছে। আমাকে মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে জিম্মি করে আমাদের বড় ঘরে নিয়ে যায়। কিছুদিন আগে বাসায় বিয়ের অনুষ্ঠান ছিলো। ঘরে ১০ ভরির উপরে সোনার গহনা ছিলো, সবই নিয়ে গেছে। সাথে ৪টি মোবাইল ফোন, ফ্রিজে থাকা মাংস ও ঘরের আসবাবপত্র ভাংচুর করে রেখে গেছে। যাওয়ার সময় বলেছে ‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বা কাউকে বললে আবার এসে মেরে ফেলবে।’
ইসমানিরচর জেলেপাড়ার শ্রী শ্রী সার্বজনীন দূর্গা মন্দির কমিটির সাধারণ সম্পাদক মনা চন্দ্র রাজবংশী বলেন, রাত দেড়টার দিকে আমার ঘরে হামলা হয়। আমার একটি ঘর ভাংচুর করে।
তিনি আরও বলেন, আমার মেয়ে শাবন্তী (১৬) কে তারা যাওয়ার সময় ‘তোর বাবারে দেখা করতে কইছ, না গেলে তুরে তুইল্লা নিয়ে যামু।’ বলে হুমকি দিয়ে যায়। এসব ঘটায় আতাউর নপ্তী ও সংগ্রাম মোল্লাসহ ২০ থেকে ২৫ জনের একটি চক্র।
জেলেপাড়ার শ্রী শ্রী দূর্গা সার্বজনীন মন্দির কমিটির সভাপতি নিরমল রাজবংশী (৪৮) বলেন, আমি জেলে। রাত ২ টার দিকে মাছ কেনার জন্য নদীতে যাই। তখন দেখি ২০ থেকে ৩০ জন লোক ঘাটে নেমেছে। তখন আমাদের গ্রামের সাগর আমাকে দেখেই বলে ‘এই খানকির পোলা তুই, এখানে কি করছ। গেলি এখান থেকে।’ এরপর বাড়িতে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ি। পরে তারা আমার বাড়িতে গিয়ে হামলা করে। দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকে বলে ২০ হাজার টাকা দিবি, নাহলে মন্দির ভাংচুর করমু। তিনি আরও বলেন, ‘আমি ঘরের জানালা দিয়ে পালাতে গেলে সাব্বির নামে একজন বগি দিয়ে কোপ মারার চেষ্টা করে। তবে শরীরে লাগেনি। প্রাণে বেঁচে যাই।’
হোসেন্দি ইউনিয়ন পরিষদের ২ নং ওয়ার্ড সদস্য কিরণ সরদার বলেন, ‘মূলত সাইফুল, ফাহিম, হাসান, হান্নান সরদার, জাকির ফরাজি আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে আসে। তারা দুইটি ঘরে ডাকাতি করেছে। এবং জেলে পারায় চাঁদা দাবি করেছে। না দিলে মন্দির ভাংচুর করবে। আওয়ামী লীগের এ নেতাকর্মীদের হাত থেকে গ্রামবাসীকে বাঁচাতে সবার সহযোগিতা চাই।’
অভিযোগের বিষয়ে একাধিকবার মুঠোফোনে হোসেন্দি ইউনিয়ন সেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আতাউর নপ্তীর সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
গজারিয়া ইউনিয়ন পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ মো. মহীদুল ইসলাম বলেন, ‘এখন দেশের অবস্থা সবাই জানেন। একটু শুনেছি বিষয়টা। তবে এখনো কেউ, কোন অভিযোগ করেনি। অভিযোগ করলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’