২০শে মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
বৃহস্পতিবার | দুপুর ২:১৪
মুন্সিগঞ্জে গ্যাস সংকট চরমে
খবরটি শেয়ার করুন:

মুন্সিগঞ্জ, ৩ এপ্রিল, ২০২২, তানজিল হাসান (আমার বিক্রমপুর)

মুন্সিগঞ্জে বিগত কয়েক দিন ধরে প্রচণ্ড গ্যাস সংকট চলছে। বিশেষ করে আবাসিক গ্রাহকরা গ্যাস সংকটের চরম শিকার। গ্যাসের অভাবে চুলা জ্বলছে না। তাই সময় মত রান্নার কাজ সারতে পারছেন না কেউ। এতে নানাভাবে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে গ্যাসের আবাসিক গ্রাহকদের।

রমজানের মধ্যেও এ সংকট চলবে। তাই রমজানেও ভোগান্তির শেষ থাকবে না।

কর্তৃপক্ষের দাবি চাহিদার বিপরীতে গ্যাস কম। তাই মুন্সিগঞ্জে গ্যাসের সংকট। এ সংকট কবে কাটবে তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছেনা।

মুন্সিগঞ্জ শহরের খালইস্ট, মাঠপাড়া, কোর্টগাও, দেওভোগ, গনকপাড়া, জমিদারপাড়া, শ্রীপল্লীসহ শহরের উপকণ্ঠ নয়াগাও এলাকাতেও গ্যাস নেই বলে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে।

বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দিনের বেলাতে চুলায় তেমন কোন গ্যাসই থাকেনা। তবে, রাতে কিছুটা গ্যাস পাওয়া যায়।

জমিদার পাড়া নিবাসী বেসরকারি স্কুল শিক্ষক মুনতাহা বলেন, ‘গত এক সপ্তাহ ধরে গ্যাসের অবস্থা খুব খারাপ। শুধু রাতে কিছুটা গ্যাস পাওয়া যায়। রাত দশটার পর থেকে গ্যাস স্বাভাবিক হয়। কিন্তু, সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত গ্যাস থাকেনা। কখনও কখনও দুপুরে একটু গ্যাসের দেখা পাওয়া যায়। আমি কর্মজীবী মানুষ। গ্যাস না পাওয়ায় রান্নাবান্নার অনেক অসুবিধা হচ্ছে। আমাদের দিনের স্বাভাবিক রুটিনে চলতে পারছি না। তার মধ্যে আবার শুনছি গ্যাসের দাম বাড়াবে।’

খালইষ্ট নিবাসী ফাতেমা বলেন, ‘গ্যাস না থাকায় রান্নার কাজ ঠিকমত করতে পারছি না। প্রায়ই বাইরে থেকে সকালের নাস্তাসহ অন্যান্য বেলার খাবারও কিনে খেতে হচ্ছে। এতে করে মাসিক খরচ বেড়ে গেছে।’ নয়াগাও নিবাসী ব্যবসায়ী মোহন মিয়া বলেন, ‘আমাদের বাসায় প্রায়ই গ্যাস থাকেনা। রোজার মধ্যে গ্যাস না থাকলে আরও সমস্যা হবে।’

নয়াগাও হোটেল ব্যবসায়ী জানে আলম বলেন, ‘আমি থাকি খালইস্ট। সেখানে রাতে গ্যাস থাকে। তবে, সকালে বেলা বাড়ার সাথে সাথে গ্যাস চলে যায়। আবার কখনও মন চাইলে দুপুরে একটু গ্যাস দেয়, কখনও আবার দেয় না। আবার রাত দশটার পর থেকে গ্যাস দেয়।’

দেওভোগ নিবাসী ব্যবসায়ী ইদ্রিস আলী ফোনে জানান, ‘এলাকায় গ্যাস নেই। কারও বাসাতে ঠিকমত গ্যাস আসেনা। আমাদের বাসায় গ্যাস সংকটের কারণে লাইনের গ্যাসের পাশাপাশি সিলিণ্ডার গ্যাসেরও ব্যবস্থা করে রেখেছি।’ তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘মুন্সিগঞ্জে এখন অবৈধ লাইনের ছড়াছড়ি। কর্তৃপক্ষ গ্যাসের অবৈধ লাইন কেটে দিয়ে গেলেও অনেকে আবার অবৈধভাবে টাকা দিয়ে লাইন নিয়ে নেয়। এতে করে আমরা যারা বৈধভাবেই গ্যাস সংযোগ নিচ্ছি তারা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছি। মাস শেষে গ্যাস বিল দিচ্ছি কিন্তু, গ্যাস পাচ্ছি না।’

একই অভিযোগ করেন নয়াগাওয়ের এক ব্যবসায়ী। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, ‘গ্যাসের অবৈধ লাইন অনেকে নিয়েছে। তারা মাস শেষে বিলও দেয়। তবে সে বিলটা সরকারকে দেয় না। যারা অবৈধ লাইন নিয়ে দিয়েছে তাদেরকে দেয়।’

এদিকে, গ্যাসের সংকট কবে সমাধান হবে তা বলতে পারছে না মুন্সিগঞ্জ তিতাস গ্যাস কোম্পানির ব্যবস্থাপক মো. মেসবাহ উদ্দিন।

জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মুন্সিগঞ্জে গ্যাসের চাহিদা আছে প্রায় সাত মিলিয়ন ঘনফুট। অন্যদিকে, চাহিদার বিপরীতে গ্যাস পাচ্ছি প্রায় ছয় মিলিয়ন ঘনফুট। এই বিশাল ঘাটতির কারণে গ্যাস সংকট রয়েছে। পাশাপাশি নারায়গঞ্জের একটি পাওয়ার প্লান্টে গ্যাস সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় আমাদের এ লাইনে গাস কম দিচ্ছে। আবার নারায়গঞ্জের ফতুল্লায় গ্যাসের টাইয়িংয়ের কাজের জন্য গ্যাস সংকট বলে প্রথমে জেনেছিলাম। কিন্তু, সেই টাইয়িংয়ের কাজও শেষ হয়েছে। কিন্তু, গ্যাসের চাপ বাড়েনি।’

অবৈধ গ্যাস সংযোগের ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘আমরা যখন খবর পাই তখন গ্যাসের অবৈধ লাইন কর্তন করে দেই। প্রতিদিন গড়ে ২/৩ টি অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। এর বেশি আমরা পারিনা। কারণ, আমাদের লোকবল সংকট রয়েছে। অফিসে মোট ছয় জন কর্মকর্তা ও আট জন কর্মচারী থাকার কথা থাকলেও বর্তমানে রয়েছে অর্ধেক জনবল।

কর্মচারীদের দুর্নীতির অভিযোগের ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘কোন কর্মচারীর ব্যাপারে অভিযোগ থাকলে সুনির্দিষ্টভাবে অভিযোগ করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

error: দুঃখিত!