মুন্সিগঞ্জ, ৬ এপ্রিল, ২০২১, প্রধান প্রতিবেদক (আমার বিক্রমপুর)
গত রোববার (৪ এপ্রিল) নারায়ণগঞ্জ থেকে মুন্সিগঞ্জের উদ্দেশ্যে অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে ছেড়ে আসা এম এল সাবিত আল হাসান নামের ডুবে যাওয়া লঞ্চটি সোমবার (৫ এপ্রিল) বেলা ১২ টা’র দিকে উদ্ধার করা হয়। লঞ্চের ভেতর থেকে রোববার রাতে ও গতকাল সোমবার দিনভর ২৯ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এরপর আজ মঙ্গলবার (৬ এপ্রিল) নদী থেকে নারী ও শিশু সহ আরও ৫ জনের মরদেহ পাওয়া যায়। এ নিয়ে এ ঘটনায় মোট মৃতের সংখ্যা দাড়ালো ৩৪ জনে।
এছাড়া লঞ্চে থাকা আনুমানিক কমপক্ষে ৩০ জন দূর্ঘটনার পরপর সাতরে পারে উঠতে সক্ষম হয়েছেন। আর এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত অন্তত আরও ২ জন নিখোঁজ রয়েছেন বলে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে।
গত রোববার (৪ এপ্রিল) সন্ধ্যা ৬ টা ১৫ মিনিটের দিকে এসকে-৩ নামে বড় আকৃতির একটি কার্গো জাহাজের ধাক্কায় যাত্রীবাহী লঞ্চডুবির ঘটনা ঘটে।
নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ ‘আমার বিক্রমপুর’ কে বেলা ১১ টা’র দিকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, এ ঘটনায় আজ মঙ্গলবার পর্যন্ত ঘাতক জাহাজটিকে আটক করা সম্ভব হয়নি। তবে বিআইডব্লিউটিএ ও নৌ-পুলিশ ঘাতক জাহাজটি উদ্ধারে তৎপর রয়েছে। নিহত প্রত্যেক পরিবারকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রাথমিক অবস্থায় দাফন-কাফনের জন্য ২৫ হাজার টাকা করে সহায়তা দেয়া হয়েছে।
জীবন গেলো যাদের
এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ২৯ জনের নাম পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে। তারা হলেন, মুন্সিগঞ্জ সদরের উত্তর চর মসুরা এলাকার সখিনা বেগম (৪৫), একই এলাকার বিথী (১৮) ও তার এক বছর বয়সী মেয়ে আরিফা, দোলা বেগম (৩৪), মুন্সিগঞ্জ সদরের রুনা আক্তার (২৪), মুন্সিগঞ্জ মোল্লাকান্দির সোলেমান বেপারী (৬০) ও তার স্ত্রী বেবী বেগম (৬০), মুন্সিগঞ্জ মালপাড়ার হারাধন সাহার স্ত্রী সুনিতা সাহা (৪০) ও তার ছেলে বিকাশ (২২), মুন্সিগঞ্জ সদরের প্রীতিময় শর্মার স্ত্রী প্রতিমা শর্মা (৫৩), মুন্সিগঞ্জ চর কিশোরগঞ্জের মোঃ শামসুদ্দিন (৯০) ও তার স্ত্রী রেহেনা বেগম (৬৫), বরিশালের উটরা উজিরপুরের হাফিজুর রহমান (২৪), তার স্ত্রী তাহমিনা (২০) এবং এক বছর বয়সী শিশুপুত্র আবদুল্লাহ, মুন্সিগঞ্জ দক্ষিণ কেওয়ারের নারায়ণ দাস (৬৫) ও তার স্ত্রী পার্বতী দাস (৪৫), নারায়ণগঞ্জের বন্দরের কল্যান্দী এলাকার আজমির (২) (ঘটনার সময় সে দাদা সাইফুল ইসলামের সঙ্গে ছিলো, দাদা সাইফুল বেঁচে গেছেন), মুন্সিগঞ্জ সদরের শাহ আলম মৃধা (৫৫), একই এলাকার মহারানী (৩৭), ঢাকার শনির আখড়া এলাকার আনোয়ার হোসেন (৪৫), তার স্ত্রী মাকসুদা বেগম (৩০) ও তাদের ৭ মাস বয়সী মেয়ে মানসুরা, মুন্সিগঞ্জ সদরের ছাউদা আক্তার লতা (১৮), শরিয়তপুরের নড়িয়ার আবদুল খালেক (৭০), ঝালকাঠির কাঁঠালিয়ার মোছাঃ জিবু (১৩), মুন্সিগঞ্জের খাদিজা বেগম (৫০), নারায়ণগঞ্জের বন্দরের দক্ষিন সাবদির নুরু মিয়ার ছেলে মোঃ নয়ন (১৯) ও সাদিয়া (১১)।
নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাহিদা বারিক বলেন, যাত্রীবাহী লঞ্চটি নারায়ণগঞ্জ থেকে মুন্সিগঞ্জের উদ্দেশে ছেড়ে যায়। সন্ধ্যা ছয়টার দিকে যাত্রীবাহী লঞ্চটি মদনগঞ্জ এলাকায় নির্মাণাধীন তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতুর কাছাকাছি এসকে-৩ নামের একটি কার্গো জাহাজের ধাক্কায় ডুবে যায়। এ ঘটনায় অনেকে সাঁতরে তীরে উঠে যান।
লঞ্চডুবির ঘটনায় জেলা প্রশাসন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট খাদিজা তাহেরীকে আহবায়ক করে সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। তদন্ত কমিটিকে আগামী পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তদন্ত কমিটিতে বিআইডব্লিউটিএ, কোস্টগার্ড, ফায়ার সার্ভিস ও নৌ পুলিশের প্রতিনিধি এবং সদরের ইউএনওকে রাখা হয়েছে।
অন্যদিকে লঞ্চডুবির প্রকৃত কারণ অনুসন্ধান ও এর দায়দায়িত্ব নির্ধারণ করে সুপারিশসহ প্রতিবেদন দাখিলের জন্য নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সাত সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক হলেন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব আবদুছ ছাত্তার শেখ। কমিটির সদস্য সচিবের দায়িত্ব পালন করবেন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) পরিচালক (নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক) মো. রফিকুল ইসলাম। আর কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন – নৌপরিবহন অধিদপ্তরের চীফ নটিক্যাল সার্ভেয়ার ক্যাপ্টেন জসিম উদ্দিন সরকার, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্পোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) প্রধান প্রকৌশলী, জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধি (অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের নিম্নে নহে), ফায়ার সার্ভিস অধিদপ্তরের একজন প্রতিনিধি এবং নৌ পুলিশের একজন প্রতিনিধি।