মুন্সিগঞ্জ, ১৭ জুন, ২০২০, চরকেওয়ার থেকে ফিরে, কাজী সাব্বির আহমেদ দীপু (আমার বিক্রমপুর)
মুন্সিগঞ্জের চরাঞ্চলে সংঘর্ষের ঘটনায় চরকেওয়ার ইউনিয়নের খাসকান্দি গ্রামের আওয়ামী লীগ সমর্থিত দু’পক্ষের প্রায় ৩ শতাধিক পুরুষ সদস্য গ্রাম ছেড়ে অন্যত্র আত্মগোপনে রয়েছে। গ্রামে শুধু নারী ও শিশুদের পদচারণা লক্ষ করা গেছে।
এছাড়া বিস্তৃীর্ণ কৃষি জমি ঘেঁষা খাসকান্দি গ্রামের মাটির সড়কের ধারে সবুজ রঙের জঙ্গলা গাছের মাঝে লাল কসটিপ মোড়ানো বড় আকৃতির একটি তাজা ককটেল পড়ে আছে।
তার অদূরেই বাড়ীর রান্নাঘরের পেছনে দৃশ্যমান কালো কসটিপের আরেকটি তাজা ককটেল ।
গ্রামের নারী ও শিশুরা জানায়, সোমবার সকালে সংঘর্ষের সময় নিক্ষেপিত অবিস্ফোরিত ককটেলটি পড়ে আছে ঘটনার পর থেকেই।
মঙ্গলবার বিকেলে দুই দিন অতিবাহিত হলেও এখনও পুলিশ তাজা ককটেলটি নিস্ক্রিয় করার কোন উদ্যোগ নেয়নি।
একাধিক বৃদ্ধ ও মধ্য বয়সী নারীরা জানালেন, এমন একাধিক স্থানেই সোমবার সকাল থেকে তাজা ককটেল বোমা গ্রামের বিভিন্ন স্থানে পড়ে আছে।
অসাবধানবশত পড়ে থাকা অবিস্ফোরিত তাজা ককটেল বিস্ফোরণে হতাহতের শিকার হওয়ার শঙ্কা নিয়ে দিনযাপন করছে কয়েক শতাধিক পরিবার।
এদিকে চরাঞ্চলের খাসকান্দি গ্রামের প্রবেশ মুখেই সড়কের পাশে নুরানী হিমাগারের সামনে সোমবার থেকে মোতায়েন করা সদর থানা পুলিশের একটি টিম টঙ দোকানে বসে ডিউটি দিচ্ছেন।
পড়ে থাকা তাজা ককটেল দুই দিনেও নিস্ক্রিয় করা হয়নি জানতে চাইলে সদর থানার এএসআই রফিক জানালেন, বোমা বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে ককটেলটি নিস্ক্রিয় করতে হবে।
গ্রামের বিভিন্ন সূত্র জানায়, সদর থানা পুলিশের রহস্যজনক ভুমিকার কারনেই চরকেওয়ার ইউপির শান্ত থাকা ছোট মোল্লাকান্দি ও খাসকান্দি গ্রাম এখন অশান্ত হয়ে উঠেছে।
সোমবার আওয়ামী লীগ সমর্থিত দু’পক্ষের সংঘর্ষের পর থেকে উভয়পক্ষের পুরুষ সদস্যরা গ্রেফতার এড়াতে আত্মগোপনে থাকায় নিরব-নিস্তব্ধ ও থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
এক অজানা আতঙ্ক নিয়ে দিনযাপন করছে ওই গ্রাম দু’টির কয়েক শতাধিক পরিবার।
আলু উত্তোলন মৌসুমে আসাদুল হাওলাদারের জমির উপর দিয়ে আলুর ট্রলি উঠানো-নামানোকে কেন্দ্র করে ছোট মোল্লাকান্দি ও খাসকান্দি গ্রামের হাওলাদার গোষ্ঠী ও বেপারী গোষ্ঠীর মধ্যে বিরোধের সূত্রপাত হয়।
গ্রামবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নেপথ্যে দু’পক্ষের এক পক্ষে শেল্টার দিচ্ছে সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক চেয়ারম্যান আফসারউদ্দিন ভুইয়া আফসু ও অপরপক্ষে নেতৃত্ব দিচ্ছে আওয়ামী লীগ নেত্রী জেসমিন আক্তার জুই।
তিনি খাসকান্দি গ্রাম ঘেঁষা মোল্লাকান্দি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মহসিনা হক কল্পনার ছোট বোন।
গ্রামবাসীর অভিযোগ, গত ১৫ এপ্রিল ও ২২ মে দুই দফায় দু’পক্ষ সংঘর্ষের ঘটনায় পাল্টাপাল্টি ৩টিসহ ৪টি মামলা রুজু হলেও আসামীদের গ্রেফতারে সদর থানা পুলিশের কোন তৎপরতা ছিল না।
আসামীরা প্রকাশ্যে এলাকায় অবস্থান নিয়ে পূর্ব বিরোধকে আরও জটিল করে তুলেছে।
আসামী গ্রেফতারে পুলিশের রহস্যজনক ভুমিকার কারনেই ১৫ জুন ভোর সকালে আবারও দু’পক্ষের মধ্যে দফায় দফায় হামলা পাল্টা হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ১৫ এপ্রিল ও ২২ মে দু’দফা সংঘর্ষের ঘটনায় ৪টি মামলা রুজু হলেও আসামী গ্রেফতারে পুলিশের ভুমিকা ছিল নিরব।
আর এ সুযোগেই প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে সময়ের অপেক্ষায় থাকে দু’পক্ষ। এরই অংশ হিসেবে ১৫ জুন ভোর সকালে আহাম্মদ হাওলাদার-মজিবর বেপারী গং খাসকান্দি গ্রামে অতর্কিত হামলা চালালে দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বেঁধে যায়।
সদর থানার ওসি-তদন্ত গাজী সালাহউদ্দিন জানান, সংঘর্ষের ঘটনায় মঙ্গলবার পুলিশ বাদী হয়ে দু’পক্ষের ৩২ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আসামীদের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করেছে। পুলিশের অভিযান অব্যাহত থাকলেও এলাকাটি দুর্গম হওয়ায় গ্রেফতারে বিলম্ব হচ্ছে।
তিনি আরও জানান, এর আগে থানায় ৪টি মামলা রয়েছে। মঙ্গলবার রুজু করা মামলা নিয়ে এখন মামলার সংখ্যা ৫টি।
সোমবার আলী আহাম্মদ হাওলাদার গং হামলা চালালে দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বেঁধে যায়।
উভয়পক্ষই আওয়ামী লীগ সমর্থিত। পুলিশের বিরুদ্ধে মহিলাদের অভিযোগ সঠিক নয় বলেও জানান ওসি।