মুন্সিগঞ্জ, ২৪ জানুয়ারি, ২০২২, শিহাব আহমেদ (আমার বিক্রমপুর)
চলতি ২০২১-২২ মৌসুমের শুরুতেই আকস্মিক দুর্যোগের মুখে পড়া মুন্সিগঞ্জের আলুর বড় অংশই এখনো ক্ষেতেই রয়ে গেছে। অন্যদিকে মুন্সিগঞ্জের বাজারগুলোতে ১৬-১৮ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে নতুন আলু। তবে এসব আলু মুন্সিগঞ্জের নয়। বেশিরভাগই উত্তর বঙ্গের রাজশাহী ও বগুড়া জেলার।
এই যখন অবস্থা তখন মুন্সিগঞ্জের উৎপাদিত আলু, বাজার ধরতে পারবে কি না বা বাজারে উঠলে এসব আলু সঠিক দাম পাবে কি না তা নিয়ে আলু চাষীদের মধ্যে দেখা গেছে আশঙ্কা আর ভয়।
অন্যদিকে আলু চাষের বিকল্প ভাবার পরামর্শ দিয়েছেন জেলা কৃষি কর্মকর্তা। তার মতে, চাহিদার তুলনায় উৎপাদন বাড়তে থাকায় মুন্সিগঞ্জের আলু চাষীদের বিকল্প ফসল চাষের দিকে গুরুত্ব দেয়া উচিৎ।
মুন্সিগঞ্জ সদরের টরকি এলাকার আলু চাষী সাইদ হাসান জানান, গতবার আলু চাষ করে লাভ হয়নি। শেষে অবিক্রিত আলু গরুকে খাওয়াতে হয়েছে। এর মধ্যে এবছর মৌসুমের শুরুতে হঠাৎ বৃষ্টিতে ২ লাখ টাকার বীজ আলু নষ্ট হয়েছে। এরপরও তিনি নতুন করে আলু রোপণ করেছেন।
একই এলাকার আলু চাষী খোকন মৃধা জানান, অন্যান্য বছর এই সময় ক্ষেত থেকে আলু বিক্রি করেন তিনি। তবে এ বছর বৃষ্টির কারনে আলু এখনো পরিপক্ক হয়নি। আরও এক থেকে দেড় মাস লাগবে আলু উত্তোলন করতে।
ভিডিও প্রতিবেদন:
জানা গেছে, গতবছর মুন্সিগঞ্জে উৎপাদিত পুরনো আলুর একটি বড় অংশ এখনো অবিক্রিত রয়ে গেছে। বাজারে এখন এসব পুরনো আলু বিক্রি হচ্ছে ৮-১০ টাকায়। গত ডিসেম্বরে ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী বৃষ্টির কারনে এবছর আলু চাষে বিলম্ব হয়েছে মুন্সিগঞ্জের কৃষকের। অন্যদিকে ক্ষতিগ্রস্থ আলু ক্ষেতে পুরনো ভালো মানের বীজের বদলে নিম্নমানের বীজ দিয়ে আলু চাষ করেছেন কৃষক। এতে মান কমে মুন্সিগঞ্জের আলুর।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহকারি পরিচালক খুরশীদ আলম বলছেন, ‘২০২১-২২ অর্থবছরে মুন্সিগঞ্জে আলু আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ৩৭ হাজার ৯’শ হেক্টর। গত ডিসেম্বরে ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী বৃষ্টিতে জেলার ১৩ হাজার ৪৫০ হেক্টর জমি আক্রান্ত হয়েছিলো। এখানে প্রায় ১১ হাজার ৬’শ হেক্টর জমি পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গিয়েছিলো। কিন্তু কৃষক এতেও হতাশাগ্রস্থ হয়নি। নবউদ্যোমে তারা আলু লাগিয়েছে। যদিও এই আলুর ভবিষৎ আমাদের মতে খুব একটা ভালো আশা করা যাচ্ছে না।’
তিনি বলেন, ‘যে বীজটা পরবর্তীতে ব্যবহার করা হয়েছে সেটির মান কিছুটা খারাপ। পাশাপাশি দেরি হয়ে যাওয়াতে ফলনও কম হবে।’
খুরশীদ আলম আরও বলেন, ‘আলু এমনিতেই আমাদের রাষ্ট্রীয় চাহিদার চেয়ে উৎপাদন অনেক বেশী হয়। যার কারনে আলুর দাম ভবিষৎয়েও খুব বাড়ার সম্ভাবনা নাই। প্রতিবছর প্রায় ৪০ লক্ষ টন আলু অতিরিক্ত থাকে। যেহেতু ফলন কম হবে পাশাপাশি দাম যদি কম থাকে, আমরা চাই না যে দাম কম থাক-আশা করি ভালো থাক। কিন্তু বাৎসরিক অবস্থায় আলুর দাম পাওয়ার সম্ভাবনা কম।’
‘সেইক্ষেত্রে আমরা ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের পরামর্শ দিয়েছি আলুর বিকল্প ভুট্টা অথবা হাইব্রিড বোরো ধান লাগানোর জন্য। কিন্তু অনেক কৃষকই সে পরামর্শ শুনে নাই। তারা নিজস্ব বুদ্ধিতে আবার আলু করেছে। এই আলু থেকে এবছর খুব একটা লাভবান হবে বলে আমি মনে করি না। আমি আশঙ্কাগ্রস্থ’ মন্তব্য করেন তিনি।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহকারি পরিচালক খুরশীদ আলম আরও বলেন, ‘আলুর বিকল্প ফসল যাতে সামনের মৌসুমে করে সে ব্যাপারে আমরা জোর প্রচারণা চালাচ্ছি যাতে কৃষকের আর চোখের পানি না পরে।’
মুন্সিগঞ্জের আলু বাজারে প্রতিযোগিতায় টিকতে পারবে কি না বা দাম পাবে কি না তা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘প্রথমে যে আলুটা লাগানো হয়েছিলো বৃষ্টির আগে সেটা ভালোই ছিলো। কিন্তু পরবর্তীতে বীজ পর্যাপ্ত ছিলো না। কৃষকরা আলুর বীজ যেটা লাগিয়েছে সেটার গুণগত মান আগের বীজের মত ভালো না। বি ক্যাটেগরির বীজ বলে এগুলোকে। সেই ক্ষেত্রে যেহেতু বীজের মান খারাপ স্বাভাবিকভাবেই ফলনের পরিমাণও কমে যাবে। অন্যান্য জেলায় ইতোমধ্যে আলু উত্তোলন শুরু হয়ে গেছে। মুন্সিগঞ্জের আলু উঠতে আরও দেরি হবে। মুন্সিগঞ্জের আলুচাষীরা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে মনে করে তারা আলুর বীজ তুলে আবার লাগিয়েছে। যেহেতু রাষ্ট্রীয়ভাবে আলু উৎপাদন কম হওয়ার সুযোগ নেই। সেক্ষেত্রে আলুর উৎপাদন চাহিদার তুলনায় বেশি হলে দাম পাওয়াটা অনিশ্চিত।’