২রা ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
সোমবার | বিকাল ৪:২০
Search
Close this search box.
Search
Close this search box.
বিক্রমপুর নামে নতুন জেলা করার দাবিতে প্রধান উপদেষ্টাকে চিঠি
খবরটি শেয়ার করুন:

মুন্সিগঞ্জ, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, নিজস্ব প্রতিনিধি (আমার বিক্রমপুর)

প্রশাসনিক এলাকা নির্ধারণ করে বিক্রমপুর নামে নতুন জেলা করার দাবিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে চিঠি দিয়েছেন বিক্রমপুর ফাউন্ডেশন নামের একটি সংগঠনের সভাপতি ক্যাপ্টেন খান মোহাম্মদ নজিব।

গত ১১ নভেম্বর তেজগাঁওস্থ প্রধান উপদেষ্টা কার্যালয়ে তিনি এই চিঠি দেন। এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে সেখানে উল্লেখিত নাম্বারে যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।

চিঠিতে উল্লেখিত পরিচয় অনুযায়ী- ক্যাপ্টেন খান মোহাম্মদ নজিব বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর প্রাক্তন প্রধান ফ্লাইং ইন্সট্রাক্টর, প্রধান উইপন কন্ট্রোলার, বিমান বাহিনী সদরের প্রাক্তন পরিচালক ও ঘাঁটি অধিনায়ক ছিলেন। বর্তমানে তিনি দি ঢাকা মার্কেন্টাইল কো-অপারেটিভ ব্যাংক লিমিটেড এর পরিচালক ও উপদেষ্টা।

চিঠিতে বলা হয়- বিক্রমাদিত্য প্রাচীন ভারতের একজন আদর্শ, সৎ, বুদ্ধিমান, জনহিতৈষী এক সাহসী রাজা ছিলেন। বিক্রমাদিত্য হল বীরত্বের সূর্য, যিনি ভারতের মুক্তিদাতা। ভারতীয় মহাকাব্যে খ্রীষ্টপূর্ব তৃতীয় শতাব্দী থেকে প্রথম শতাব্দী পর্যন্ত বিক্রমাদিত্যের কিংবদন্তী রয়েছে। গুপ্ত আমলে, পাল আমলে ও সেন আমলেও বিক্রমাদিত্যদের আধিপত্যে বিক্রমপুর ছিল শিক্ষায় ও জ্ঞান চর্চায় সর্ব উচ্চে। এক সময় কাশ্মীর, কর্নটাক, মালব্যসহ ভারতের অধিকাংশ ছিল রাজা বিক্রমাদিত্যের অন্তর্গত। সিংহলের রাজা বীরসেন তার কন্যাকে রাজা বিক্রমাদিত্যের সাথে বিবাহ দেন। রাজা বিক্রমাদিত্যকে শ্রীকৃষ্ণ স্বর্গলোকে আমন্ত্রন জানিয়েছিলেন। এমনি রাজার রাজধানী বিক্রমপুরও পবিত্র ভূমির সম্মান পেয়েছিল। সেই কিত্তীপূর্ন জনপদ পদ্মার গতিপথ পরির্তনে ধ্বংস হয়ে যায়। তাই পদ্মা কীর্তিনাশা নদী হিসাবে পরিচিতি পায়। এই বিক্রমপুরই ছিল প্রাচীন বাংলার প্রচীনতম রাজধানী।

অথচ আজ বিক্রমপুর পরগনার কোন প্রশাসনিক স্বীকৃতি নেই। ১৭৮১ সালের মানচিত্রে উত্তর ও দক্ষিন বিক্রমপুরের ভৌগলিক স্থান

দেখা যায়, মোঘল আমলে সোনারগাঁওতে রাজধানী স্থানান্তরের পূর্বে বিক্রমপুর ছিল বাংলার রাজধানী। বিক্রমপুর ছিল জ্ঞান চর্চা ও সাংস্কৃতি চর্চার পাদপীঠ। বিক্রমপুরে অনেক জ্ঞানীগুনীর জন্ম হয়েছিল। হাজার বছর পূর্বে এ মহাদেশের মহাজ্ঞানী অতিশ দীপংকর ১১টি বৌদ্ধ বিহার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ছিলেন। তিনি চীন, তিব্বত ও নেপালে সবচেয়ে সম্মানীয় ব্যক্তি ছিলেন। এছাড়া বিক্রমপুরে আরো অনেক গুনী ব্যক্তির জন্ম হয়েছিল। বিশ্ববিজ্ঞানী জগদীশ চন্দ্র বসু, দেশবন্ধু চিররঞ্জন দাস, ভারতের প্রথম ডিএসসি আঘোর চট্টোপাধ্যায়, ভারতের প্রথম মহিলা কংগ্রেস সভানেত্রী বিক্রমপুর কন্যা কবি সরোজিনী নাইডু, সত্যেন সেন, নোবেল বিজয়ী অমর্ত্য সেনের মাতা, ভারতের প্রথম চীফ জাষ্টিসসহ অনেক আইনজীবি, দুইজন রাষ্ট্রপতি, পাঁচজন ব্যাংক গর্ভনর, ড. হুমায়ুন আজাদ, ইমদাদুল হক মিলনসহ অনেক মনিষীর জন্মস্থান বিক্রমপুর। এছাড়া বৃটিশ বিরোধী সসস্ত্র অনুশীলন আন্দোলনের সুতিকা ঘর ছিল বিক্রমপুর। ১৯৮৪ সালে ৬৪ জেলা গঠনের সময় বিক্রমপুর একটি জেলার সম্মান পায়। ১৯৭৫ সালে হঠাৎ বিক্রমপুর জেলা মুন্সিগঞ্জ জেলা নাম হওয়ায় বিক্রমপুরবাসী আবার বিক্রমপুরের ঐতিহ্য হতে দূরে চলে যায় এবং মনে মনে দুঃখ অনুভব করে।

বৃটিশ ভারতে এক সময় একটি প্রবাদ পরিচিতি ছিল, “What Bengals thinks today, whole India thinks tomorrow” তেমনি আরেকটি প্রবাদ ছিল, “What Vikrampur thinks today, whole Bengal thinks it tomorrow” এমনি একটি জনপদ আজ সর্বদিক থেকে অবহেলিত। আমরা আমাদের জেলার নাম বিক্রমপুর হিসাবে সবর্দা, লালন করি, প্রাণে ধারন করি এবং বিক্রমপুরের বাসিন্দা হিসাবে গর্ববোধ করি। মুন্সিগঞ্জ জেলার নাম হওয়াতে আমরা নিজেদের অবহেলিত, গর্বের ভুল হতে বঞ্চিত বোধ করি ও জেলা সদরের সাথে তিনটি উপজেলার দুর্বোধ্য যোগাযোগের কারনে স্থানীয় লোকজন নাগরিক সেবা বঞ্চিত হচ্ছে।

তাই মহত্বনের নিকট সবিনয় অনুরোধ প্রশাসনিক এলাকা নির্ধারন করে বিক্রমপুর নামে নতুন জেলা করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য আপনাকে বিশেষ অনুরোধ করছি।

error: দুঃখিত!