ফাঁসির মঞ্চ প্রস্তুত, প্রধান জল্লাদও চুড়ান্ত। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের কারা কর্মকর্তাদের দৌড়ঝাঁপ এখন ফাঁসির মঞ্চকে ঘিরেই। মঞ্চের ওপরে টাঙানো হয়েছে শামিয়ানা।সবারই জানা, এ ফাঁসির মঞ্চ প্রস্তুত কাদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। কারাগারের কনডেম সেলে বন্দী দুই শীর্ষ যুদ্ধাপরাধী বিএনপি ও জামায়াতের প্রভাবশালী নেতা সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরী এবং আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের জন্যই। মহান মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় এ দুই অপরাধীর ফাঁসির রায় কার্যকর এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। আজকালের মধ্যেই তাদের ফাঁসির দড়িতে ঝুলিয়ে আদালতের রায় কার্যকর করা হবে। এর জন্য প্রয়োজনীয় রায়ের অনুলিপিও এখন কারা কর্তৃপক্ষের হাতে।
গত রাত পৌনে ৯টায় রায়ের অনুলিপি হাতে পাওয়ার পর আইজি প্রিজনের নেতৃত্বে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা রুদ্ধদ্বার বৈঠক করছিলেন। কারাগার ঘিরে নেওয়া হয়েছে পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা। সরকারি সূত্রগুলো বলেছে, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের ফাঁসির রায় কার্যকর হতে পারে শনিবারের পর যে কোনো দিন। সাকা চৌধুরী ও মুজাহিদের পরিবারের সদস্যরা গতকাল কারাগারে গিয়ে তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। আলাপ-আলোচনা করেছেন পরবর্তী করণীয় নিয়ে। তারা প্রাণভিক্ষা চাইবেন কিনা, তা এখনো স্পষ্ট করেননি।
সাকার পরিবারের সদস্যরা বলেছেন, তারা মার্সি পিটিশন বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেননি। অন্যদিকে মুজাহিদ তার পরিবারকে জানিয়েছেন, তিনি আইনজীবীদের সঙ্গে দেখা করতে চান। এ জন্য গতকালই কারা কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেছেন। সাকা চৌধুরীর পক্ষেও আরও একটি সাক্ষাতের আবেদন করা হলেও কারা কর্তৃপক্ষ তা নাকচ করে দিয়েছে।
মানবতাবিরোধী অপরাধে দণ্ডিত দুই অপরাধীর ফাঁসির রায় কার্যকর দেখতে দেশের মানুষ যেন অধীর অপেক্ষায় রয়েছে। সারা দেশে বিভিন্ন সংগঠন ফাঁসির রায় দ্রুত কার্যকরের দাবিতে রাস্তায় রাস্তায় মানববন্ধন করেছে। একই দাবিতে শাহবাগে গত রাতে অবস্থান নিয়েছে গণজাগরণ মঞ্চ। সরকারের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের এক নেতা জানান, রায়ের কপি কারাগারে গেলেও কার্যকর করতে কিছু আনুষ্ঠানিকতা রয়েছে; যা দ্রুত করা সম্ভব নয়।
পরবর্তী দিন (আজ) শুক্রবার ফাঁসির রায় কার্যকর করা যায় না। এ কারণে শুক্রবারে ফাঁসির রায় কার্যকর হবে না। শনিবার কার্যকর হতে পারে কিনাঃ জানতে চাইলে তিনি বলেন, রায়ের কপি যাওয়ার পর এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেবেন কখন রায় কার্যকর করবেন। রায়ের কপি পৌঁছানোর পর শনিবার কিংবা এরপর যে কোনো দিন রায় কার্যকর করতে কোনো বাধা নেই।
তিনি বলেন, সরকার রায় কার্যকর নিয়ে কোনো তাড়াহুড়া করতে চাইছে না। সবকিছুই আদালতের আদেশে রয়েছে। যথেষ্ট সময় দেওয়া হয়েছে, এ ক্ষেত্রেও একই নিয়ম মানা হয়েছে। অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা ছাড়া দেশের দুই শীর্ষ যুদ্ধাপরাধী আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর আর কোনো আবেদনের সুযোগ নেই। আসামিকে নিজ হাতে প্রাণভিক্ষার আবেদনপত্র লিখতে হবে। মুজাহিদ ও সাকা চৌধুরীর রিভিউ আবেদনের রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি বিচারিক আদালত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে পৌঁছানোর পর গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় তিনি এসব কথা বলেন।