পৌরসভা নির্বাচনে শুধু মেয়র পদে দলীয় প্রার্থিতার বিধান রেখে স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) (সংশোধন) বিল, ২০১৫ পাস হয়েছে।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন বৃহস্পতিবার বিলটি পাসের জন্য সংসদে উত্থাপন করেন।স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী বিলটি ভোটে দিলে কণ্ঠভোটে তা পাস হয়।
সংশোধিত আইন অনুযায়ী পৌরসভায় কাউন্সিলর প্রার্থীরা নির্দলীয়ভাবে ভোট করতে পারবেন। আর মেয়র পদে নিবন্ধিত দল মনোনীত প্রার্থীর বাইরে অন্যদের স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে হবে।
এই বিল পাসের ফলে নির্বাচনের সময় হওয়া পৌরসভাগুলোর সাধারণ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পথ সুগম হল। ডিসেম্বরের মধ্যে এসব পৌরসভায় একদিনে ভোট করার পরিকল্পনার কথা ইতোমধ্যে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
বিলের উদ্দেশ্য ও কারণ সম্বলিত বিবৃতিতে মন্ত্রী বলেন, “দল মনোনীতরা অংশ নিলে প্রার্থীদের দায়বদ্ধতা বাড়বে। রাজনৈতিক দলের অঙ্গীকার যথাযথভাবে পালনের সুযোগ সৃষ্টি হবে।প্রার্থীরা নির্বাচিত হয়ে জনগণকে আরও বেশি সেবা দিতে তৎপর থাকবে।”
বিলটি পাসের আগে জাতীয় পার্টি, ওয়ার্কার্স পার্টি ও স্বতন্ত্র কয়েকজন সংসদ সদস্য একাধিক সংশোধনী, জনমত যাচাই ও বাছাই কমিটিতে পাঠানোর প্রস্তাব করলে তা কণ্ঠভোটে নাকচ হয়ে যায়।
এসময় জাতীয় পার্টির সদস্য ফখরুল ইমাম বলেন, “এতে মাথা থেকে দেহকে আলাদা করে ফেলা হয়েছে। দলীয় মেয়র হবে, আবার নির্দলীয় কাউন্সিলরের মধ্য থেকে প্যানেল মেয়র থাকবেন। তা দ্বান্দ্বিক অবস্থা।”
এ বিলে সংবিধানের লংঘন হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
ওয়ার্কার্স পার্টির ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, “সরকার রাজনৈতিক সাহসের পরিচয় দিয়েছে। সম্ভাবনা নিয়ে সামনে এসেছে। কিন্তু বিলটিতে বিভক্ত করে রাজনৈতিক দুর্বলতার পরিচয় দেওয়া হয়েছে। মেয়র রাজনৈতিক ও কাউন্সিলর অরাজনৈতিক হওয়ায় দ্বান্দ্বিক অবস্থা রাখা ঠিক হয়নি।”
কাউন্সিলর প্রার্থীদেরও দলীয়ভাবে রাখার প্রস্তাব করেন তিনি।
টিপু সুলতান বলেন, “এক ছেলেকে বংশের পরিচয় দিলেন, অন্য একজনকে এ পরিচয় দিলেন না। এতে বিশৃঙ্খলা দেখা দেবে।”
রুস্তম আলী ফরাজী বলেন, “সংসদ ডাকার পরে অধ্যাদেশ করা হয়েছে। এটা খারাপ দিক। দলীয় মেয়র ও নির্দলীয় কাউন্সিলরদের মধ্যে সবার সমান সুযোগ নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে।”
মুস্তফা লুৎফুল্লাহ বলেন, “তৃণমূলের রাজনীতিকে গতিশীল করাই এ বিলের উদ্দেশ্য। কিন্তু বিলটি পরিপূর্ণতা লাভ করতে পারেনি। এজন্য মেয়র ও কাউন্সিলর পদে দলীয় প্রার্থিতার সুযোগ দিতে হবে।”
পীর ফজলুর রহমান বলেন, “নির্বাচন সামনে রেখে দ্রুত বিল করার মাধ্যমে সবার জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টির বিষয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। এটিকে রাজনৈতিক নির্বাচনের রূপ দিতে গিয়ে এ শঙ্কা হয়েছে।”
এ বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, “আমরা আপাতত মেয়রদের মনোনয়ন দেওয়ার চিন্তা করছি। যেসব ভুল-ত্রুটি ও সংশোধনীর দাবি করছেন তা ভবিষ্যতে বিবেচনা করে দেখব।”
তফসিলের জন্য এখন বিধিমালার অপেক্ষা
জাতীয় সংসদে সংশোধিত পৌরসভা আইন পাস হওয়ায় এখন নির্বাচন বিধিমালা ও আচরণবিধি সংশোধনে হাত দেবে নির্বাচন কমিশন।
পৌর নির্বাচনের তফসিল কবে নাগাদ ঘোষণা করা হতে পারে জানতে চাইলে বৃহস্পতিবার বিকালে নির্বাচন কমিশনার আবু হাফিজ বলেন, “এখনো অনেক দূর। আইন হাতে পেয়ে বিধিমালা সংশোধন করে গেজেট প্রকাশের পরই এ নিয়ে কথা হবে।”
তিনি বলেন, বিল সংসদে পাস হওয়ার পর তাতে রাষ্ট্রপতির সম্মতি পেয়ে আইন হবে, গেজেট হয়ে কমিশনে আসবে। তারপর আইনের আলোকে সংশোধিত বিধিমালা ভেটিংয়ের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। মন্ত্রণালয়ের সম্মতি শেষে ইসি তা দেখার পর গেজেট প্রকাশের জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।
“বিধিমালার গেজেট করেই তফসিল নিয়ে বসবে ইসি।”
তবে ইসির কয়েকজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, দ্রুত কাজ শেষ করতে সব কিছুর খসড়া করে রাখা হয়েছে। সোমবারের মধ্যে প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে তফসিলের জন্য বসতে পারে কমিশন।
“হিসাব-নিকাশ জটিল হলেও এখনও ডিসেম্বরে ভোট করার সময় শেষ হয়ে যায়নি। প্রয়োজনে বিকল্প নিয়ে ভাববে ইসি,” বলেন একজন।
কর্মকর্তারা জানান, ডিসেম্বরে ভোট করতে হলে এক সপ্তাহের মধ্যে তফসিল দিতে হবে। সেক্ষেত্রে মনোনয়ন দাখিল থেকে ভোট পর্যন্ত ন্যূনতম সময় বিবেচনা করে ৩২-৩৫ দিন দিতে হবে।
এক্ষেত্রে মনোনয়ন দাখিলের জন্য অন্তত ৭ দিন, বাছাই ২ দিন, আপিলের জন্য ২-৩ দিন, প্রত্যাহারের জন্য ৩-৫ দিন ও প্রচারণার জন্য অন্তত ১৫ দিন সময় রাখতে হবে। তাতে ডিসেম্বরের ২৭ থেকে ৩১ তারিখের মধ্যে ভোটের দিন রাখা যেতে পারে।