মুন্সিগঞ্জ, ৪ এপ্রিল, ২০২২, তানজিল হাসান (আমার বিক্রমপুর)
মুন্সিগঞ্জের টংগিবাড়ীর আব্দুল্লাহপুরের নাটেশ্বর গ্রামে এবার আবিষ্কৃত হলো অষ্টকোণাকৃত বৌদ্ধ স্তূপ ও প্রাচীর। গত নভেম্বরে পুনরায় শুরু হওয়া খনন কাজে এসব প্রাচীন প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনাবলী আবিষ্কৃত হয় বলে জানিয়েছেন বিক্রমপুর অঞ্চলে প্রত্নতাত্ত্বিক খনন ও গবেষণা কর্মসূচি পরিচালক ড. নূহ-উল-আলম লেনিন।
তিনি জানান, এবার আবিষ্কৃত হওয়া অষ্টকোনাকৃত বৌদ্ধ স্তূপ খুব দুর্লভ। এর আগেও এখানে আরও স্তূপ পাওয়া গেছে। সর্বশেষ এই স্তূপটি পাওয়া গেলো। এটি মাটির ঢিবির প্রায় ১৪ ফুট নিচ থেকে আবিষ্কৃত হয়। তিনি আরও বলেন, গবেষণা পরিচালক ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সুফি মোস্তাফিজুর রহমানের নেতৃত্বে নভেম্বরে খনন কাজ শুরু করার পরও আমরা যখন এখানে কিছু পাচ্ছিলাম না তখন প্রথমে আমাদের মনে হয়েছে হয়ত এখানে কিছু নেই।
কিন্তু, আরও গভীরে খনন করার পর ফেব্রুয়ারি মাসে প্রথম আমরা স্তূপটি দেখতে পাই। পরে মার্চ মাস পুরোটা লেগে যায় সম্পূর্ণ অষ্টকোনাকৃত বৌদ্ধ স্তূপটি মাটির নিচ থেকে বের করে আনতে।
প্রত্নতাত্ত্বিক খনন ও গবেষণা কর্মসূচি পরিচালক ড. নূহ-উল-আলম লেনিন আরও বলেন, এখানে একটি প্রাচীরও আবিষ্কৃত হয়েছে। এ বছর আমরা আর নতুন করে কিছু খনন করবো না। তবে, বৃষ্টি থেকে রক্ষার জন্য আবিষ্কৃত নিদর্শনগুলো ঢেকে রাখতে হবে। আমরা নাটেশ্বরে একটি আর্কেওলজিক্যাল পার্ক করার পরিকল্পনাও করেছিলাম। সে পরিকল্পনা এখনও আছে। তৃতীয় পর্যায়ের খনন শেষ হলে ওই কাজে হাত দেওয়া হবে। আগামী তিন বছরের মধ্যে সেটা করা সম্ভব বলে আমরা মনে করছি। প্রসঙ্গত, গত বছর নাটেশ্বরে প্রাচীন ‘স্মারক কুঠুরি’ (relic chamber), ১৮০ বর্গমিটার আকৃতির দুইটি বৃহৎ আকারের অষ্টকোণাকৃতির স্তুপ, ১৭ মিটার সুরক্ষা প্রাচীর ও নকশাকৃত ইট আবিষ্কৃত হয়েছিলো। খনন কাজে নিয়োজিত প্রত্নতাত্ত্বিকরা বলছেন, নাটেশ্বর দেউলে দ্বিতীয় সভ্যতার স্তরে (৯৫০-১২২৩ খ্রিস্টাব্দ) ইতিপূর্বে যে আবিষ্কার হয়েছে তা পরিষ্কারভাবে ঘোষণা করে যে, নাটেশ্বর প্রত্নস্থানে ছিল দশম-একাদশ শতকে একটি বৃহৎ এবং সমৃদ্ধ স্তূপ কমপ্লেক্স যা বাংলাদেশে এই প্রথম।
বিগত বছরের আবিষ্কারগুলোর মধ্যে ছিল ২৫.২ বর্গমিটার আকৃতির বৃহৎ আকারের নান্দনিক কেন্দ্রীয় অষ্টকোণাকৃতি স্তূপ। এটির চতুপার্শ্বে ১৮ বর্গমিটারের চারটি স্তূপ হলঘর। প্রতিটি হলঘরে আবার ২.৫ বর্গমিটারের চারটি করে স্তুপ। অষ্টকোণাকৃতির স্তূপের কেন্দ্রে বিশেষ ধরণের স্তাপত্য ‘স্মারক কুঠুরি’ একটি দুষ্প্রাপ্য ও তাৎপর্যপূর্ণ আবিষ্কার। যেখানে গৌতম বুদ্ধ বা তাঁর গুরুত্বপূর্ণ শিষ্যের দেহ ভষ্ম বা ব্যবহৃত জিনিস রাখা হতো। এর উপরের অংশ গোলাকার ও নিচের অংশ চতুষ্কোণাকৃতি। বাংলাদেশে এ ধরণের আবিষ্কার প্রথম। স্মারক কুঠুরির গোলাকার অংশ বৌদ্ধ ধর্মের দর্শনের সৃষ্টিতত্ত্ব ‘শুন্যবাদ’ এর প্রতীকী রূপ। এছাড়া স্তূপের ভেতরের অন্ত্রস্থলটি নির্মিত হয়েছিল স্পোকযুক্ত গাড়ির চাকার আলদে। গোল চাকাঈ শুন্যের প্রতিরুপ এবং চাকা গতির প্রতীক। উলম্ব ইটের বিন্যাসকে চাকার স্পোকের সঙ্গে তুলনা করা হয়। স্পোককে কল্পনা করা হয় সূর্যের রশ্মির সঙ্গে।