২২শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
বুধবার | রাত ১২:৫৬
দুধই পরিবর্তন করে দিয়েছে শ্রীনগর বাসীর ভাগ্য
খবরটি শেয়ার করুন:

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ দুধ একটি সুষম খাবার। দেহ গঠনের সব উপাদানই এতে বিদ্যমান। শুধু সুষম খাবার হিসেবেই নয়, দুধ আতিথেয়তার প্রধান উপাদান মিষ্টি তৈরির প্রধান কাঁচামালও। বিশেষ করে রাজধানী ঢাকার ভাগ্যকূল, রস, বিক্রমপুর, মুসলিম সুইটমিট, বনফুল ইত্যাদি জনপ্রিয় মিষ্টান্ন ভান্ডারের প্রধান কাঁচামাল দুধের জোগান আসে ঢাকার অদূরে মুন্সীগঞ্জ জেলার শ্রীনগর উপজেলা থেকে। আর এ দুধই পরিবর্তন করে দিয়েছে শ্রীনগরবাসীর ভাগ্য। শ্রীনগরে পাঁচটি ইউনিয়নের ১১টি গ্রামে রয়েছে ৪৫০টিরও বেশি ডেইরি ফার্ম-যা জাদুর কাঠির মতো পরিবর্তন করে দিয়েছে অর্ধসহস্র পরিবারের অভাব-অনটন; সুযোগ করে দিয়েছে আধুনিক জীবনযাপনের; তৈরি করেছে দুই সহস্রাধিক লোকের কর্মক্ষেত্র; ফিরে পেয়েছে প্রতিটি পরিবারে শিক্ষার আলো। এ জাদুর কাঠির ছোঁয়াতেই শ্রীনগরবাসীর অনেকেই আজ দেড় থেকে দুই লাখ টাকা মাসিক আয়ের সুযোগ পাচ্ছে। শেকৃবির এঙ্টেনশন ডিপার্টমেন্টের ফিল্ড ট্রিপের শ্রীনগর উপজেলা সরেজমিন পরিদর্শনে এসব তথ্য উঠে আসে। ডেইরি ফার্মে ভাগ্য পরিবর্তনীয় রাঢ়িখাল ইউনিয়নের বালাসুর গ্রামের বাসিন্দা নূর মোহাম্মদ জানান, পনেরো-ষোলো বছর আগে পদ্মাপাড়ের সব জমি নদীতে হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েন তিনি। পরে বাংলা ১৪০৪ সনে ৪৪ হাজার টাকায় আটটি বকনা বাছুর দিয়ে তিনি শুরু করেন এ ফার্ম। বর্তমানে তার ফার্মে পূর্ণবয়স্ক ৭০টি গরু রয়েছে। এর মধ্যে ৩৫ থেকে ৪০টি গাভী পর্যায়ক্রমে সারা বছরই দুধ দিয়ে থাকে। সর্বোচ্চ ৫০ কেজি থেকে সর্বনিম্ন ২০ কেজি পর্যন্ত দেয়া দুধেল গাভী রয়েছে তার ফার্মে। সকাল, বিকাল ও সন্ধ্যা মিলিয়ে দিন শেষে ফার্ম থেকে ৩৮০ থেকে ৪৫০ কেজি দুধ সংগ্রহ করেন তিনি- যার প্রতি কেজি গোয়াল তথা ঘোষদের কাছে ৪৫ টাকা ধরে বিক্রি করেন। এতে প্রতিদিন ২০ হাজার থেকে ২১ হাজার টাকার দুধ বিক্রি করেন। ডেইরি ফার্মের মাধ্যমেই তিনি মাস শেষে দেড় থেকে দুই লাখ টাকা আয় করার সুযোগ পান। ডেইরি ফার্মে ভাগ্য বদলে যাওয়া ভাগ্যকূল ইউনিয়নের ভাগ্যকূল গ্রামের আরেক খামারি হাজী আবদুল জব্বার সারেং বলেন, আঠারো থেকে উনিশ বছর আগে দু-তিনটি বকনা বাছুর দিয়ে শুরু করি এ ফার্ম। বর্তমানে ফার্মে ৬৫টি গরু রয়েছে। সারা বছর দুধ দেয়, এমন ৩০টি গাভী রয়েছে ফার্মে। প্রতিদিন ফার্ম থেকে ৩০০ থেকে ৩৫০ কেজি দুধ সংগ্রহ করি। আগে পরিবারের অবস্থা খারাপ থাকলেও বর্তমানে তিন মেয়ে ও এক ছেলের পড়াশোনার খরচ দিয়ে ভালোভাবে চলছে সংসার। ডেইরি ফার্ম পুরোদমে যাত্রার পর থেকে সব খরচ বাদ দিয়ে ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা ইনকাম করার সুযোগ হচ্ছে।

এছাড়া বাগড়া ও কামারগাঁও গ্রামের মোঃ রফিক ও আবদুস সালাম জানান, তারাও এ ডেইরি ফার্মের মাধ্যমে ৫০ হাজার থেকে লাখ টাকা আয় করার সুযোগ পাচ্ছেন। প্রতিটি ফার্মে রয়েছে অধিক দুধ দেয়া অস্ট্রেলিয়ান, ফ্রিজিয়ান, শাহিওয়াল জাতের গাভী- যার একেকটি ৩৫ থেকে ৫০ কেজি পর্যন্ত দুধ দিয়ে থাকে। বেশি দুধ উৎপাদনে খেসারি, মুগ, গমের ভুসিসহ বাকসা নামের এক ধরনের কাঁচা ঘাস খাওয়ানো হয়-যা দুধে বাটার বৃদ্ধিসহ গুণগত মান ও দুধের পরিমাণ বৃদ্ধি করে। ছোট থেকে বড় প্রতিটি ফার্মেই চার থেকে ছয়জন টেকনিক্যাল শ্রমিক নিয়োজিত থাকেন। তারা তিন বেলা দুধ দহন থেকে শুরু করে নির্দিষ্ট পরিমাণ খাবার সরবরাহ করে থাকেন। শ্রীনগরবাসীর ভাগ্য পরিবর্তনের জাদুর কাঠির পরশ সম্পর্কে উপজেলা লাইভস্টক অফিসার ডা. এমদাদুল হক তালুকদার বলেন, ১৯৯২ সাল থেকে এ উপজেলায় ডেইরি ফার্ম গড়ে উঠতে শুরু করে। বর্তমানে উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের ১১টি গ্রামে প্রায় ৫০০ ফার্ম গড়ে উঠেছে। ক্লোজ মনিটরিং, নিয়মিত টিকা প্রদান, ভার্চুয়াল চিকিৎসাসহ বিভিন্ন সহায়তায় প্রতিটি ফার্মই সফলতার মুখ দেখেছে। এতে এলাকায় দারিদ্র্য, অভাব-অনটন, নিরক্ষরতা ও নিম্ন জীবনযাত্রা নেই বললেই চলে। ডেইরি ফার্মের সুবাদে ৫০০ ফার্ম মালিকের সঙ্গে আরও দুই হাজার লোকের জীবিকা নির্বাহের ব্যবস্থাও হয়েছে এ উপজেলায়। ডেইরি ফার্মের সফলতায় এর সংখ্যা দিন দিন আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ডেইরি ফার্মের মাধ্যমে আজ অনেকেই পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে দুধ বিক্রি করে মাসে দেড় থেকে ২ লাখ টাকা উপার্জন করেন। এ ধরনের ফার্ম দেশের খাদ্য ও পুষ্টি চাহিদা মিটিয়ে অন্যান্য কর্মসংস্থানসহ দুগ্ধশিল্পের বিকাশে সহায়তা করবে।

error: দুঃখিত!