১৩ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
শুক্রবার | বিকাল ৪:০৯
Search
Close this search box.
Search
Close this search box.
তালতলা-গৌরগঞ্জ খাল; নিষেধ থাকলেও চাঁদা দিয়ে চলে বাল্কহেড
খবরটি শেয়ার করুন:

মুন্সিগঞ্জ, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৩, কাজী সাব্বির আহমেদ দীপু (আমার বিক্রমপুর)

মুন্সিগঞ্জের তালতলা-গৌরগঞ্জ খালে প্রশাসন বাল্কহেড চলাচল নিষিদ্ধ ঘোষণা করলেও চালকদের কাছ থেকে চাঁদা নিয়ে একটি চক্র বাল্কহেড চলাচলে সহায়তা করছে। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত প্রতিদিন শতাধিক বাল্কহেড নিয়মিত যাতায়াত করছে বলে খালপাড়ের বাসিন্দারা জানিয়েছেন।

গত ৫ আগস্ট এই খালে বাল্কহেডের ধাক্কায় একটি ট্রলার ডুবে নারী-শিশুসহ ১০ জন নিহত হওয়ার পরে বাল্কহেড চলাচল নিষিদ্ধ ঘোষণা করে জেলা প্রশাসন।

টংগিবাড়ী উপজেলার বালিগাঁও গ্রামের ভূমিদস্যু রাজন মুন্সী প্রতি বাল্কহেড চালকের কাছ থেকে ১ হাজার ৫০০ থেকে ৩ হাজার টাকা নিয়ে বাল্কহেড চলাচলে সহায়তা করছেন বলে বাল্কহেডের চালক ও স্থানীয়দের সূত্রে জানা গেছে।

এলাকার ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, বাল্কহেড চলাচলের কারণে তাদের বাড়িঘর ভেঙে যাচ্ছে। তারা প্রতিবাদ করলে রাজন মুন্সী ও তাঁর চাচাতো ভাই সুজন মুন্সী তাদের হুমকি-ধমকি দেন। এর মধ্যে গত শুক্রবার খালে চলাচলকারী তিনটি বাল্কহেড স্থানীয়রা আটক করেন। এ ঘটনায় সুজন ও রাজন বাল্কহেড আটককারীদের ওপর ক্ষিপ্ত হন। তারা বাল্কহেড আটককারীদের তুলে নিয়ে আসার হুমকি দেন।

গত শনিবার ওই এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, তালতলা-গৌরগঞ্জ খালে অহরহ চলছে বাল্কহেড। বিকেল ৫টার দিকে স্থানীয়রা একটি বাল্কহেড আটক করেন।

এই বাল্কহেডের চালক আল আমিন বলেন, এ খাল দিয়ে বাল্কহেড চলাচল নিষিদ্ধ, সেটা তারাও জানেন। তবে এই খাল দিয়ে বাল্কহেড চালাতে রাজন মুন্সী তাদের নিয়ে আসছেন। তারা প্রতিদিন এ খাল দিয়ে একবার বাল্কহেড চালিয়ে গেলে রাজন তাদের কাছ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা করে নেন। বালিগাঁও বাজার ও এর আশপাশের এলাকায় রাজনের লোকজন অবস্থান নিয়ে তাদের কাছ থেকে টাকা নেয়।

লৌহজং উপজেলার বাসুদিয়া গ্রামের হোসেন দেওয়ান বলেন, এই খালে বাল্কহেড চলাচল নিষিদ্ধ। কিন্তু বালিগাঁও গ্রামের রাজন টাকা নিয়ে এ খালে বাল্কহেড চলতে দিচ্ছেন। এতে তাদের বাড়িঘর ভেঙে যাচ্ছে।

বাসুদিয়া গ্রামের অপর বাসিন্দা ফারুক শেখ বলেন, খালে বাল্কহেড চলাচল থেকে সৃষ্ট ঢেউয়ে তাদের বাড়িঘর সব ভেঙে যাচ্ছে। কিন্তু তারা প্রতিবাদ করলে রাজন তাদের বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে যাবেন বলে হুমকি দেন।

স্থানীয় বাসিন্দা আবদুল মালেক বলেন, তাঁর বাড়ি একবার এ খালে ভেঙে গেছে। এখন অন্য জায়গায় গিয়ে বাড়ি করছেন। প্রশাসন এই খালে বাল্কহেড চলাচল নিষিদ্ধ করছে। কিন্তু এর পরও বাল্কহেড খাল দিয়ে দিনরাত চলছে। তারা বাল্কহেড চালাতে নিষেধ করলে রাজন এসে বলেন, সরকারি খালে বাল্কহেড চলবেই; কিছু করতে পারবেন না। বেশি বাড়াবাড়ি করলে তাদের বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাবেন বলে হুমকি দেন তিনি।

আবদুল মালেকের স্ত্রী জেসমিন বলেন, তাঁর বাড়ি খালে ভেঙে যাচ্ছে। নতুন করে যে বাড়িঘর করবেন, সেই টাকা-পয়সাও নেই। রাজন তাদের বাড়ির পাশ দিয়ে বাল্কহেড নিয়ে বাড়িঘর ভেঙে ফেলছেন।

অভিযুক্ত রাজন মুন্সী বলেন, বাল্কহেড থেকে চাঁদা তোলার কাজে ৭০ থেকে ৮০ জনের একটি সিন্ডিকেট জড়িত। তবে তিনি চাঁদা তোলার সঙ্গে জড়িত নন বলে দাবি করেন।

টংগিবাড়ীর ইউএনও মু. রাশেদুজ্জামান বলেন, বাল্কহেড চলাচলের বিষয়টি জানতে পেরে ঘটনাস্থলে তিনি পুলিশ পাঠিয়েছিলেন। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে তারা পালিয়ে যায়। তিনি আরও বলেন, তালতলা-গৌরগঞ্জ খালে বাল্কহেড চলাচলের বিষয়ে প্রশাসন ও পুলিশ সতর্ক রয়েছে।

error: দুঃখিত!