২৩শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
শুক্রবার | সকাল ৭:৫৯
টংগিবাড়ীতে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে মামলা, ‘চক্রান্ত’ দাবি
খবরটি শেয়ার করুন:

মুন্সিগঞ্জ, ১১ মে ২০২০, বিশেষ প্রতিনিধি (আমার বিক্রমপুর)

মুন্সিগঞ্জের টংগিবাড়ীতে সোনারং-টংগিবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক বেলায়েত হোসেন লিটন মাঝি (৪৫) সহ ৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। আমতলি এলাকার নজরুল ইসলাম (৩০) বাদী হয়ে গত শনিবার (৯ মে) টংগিবাড়ী থানায় এ মামলা করেন।

ইউপি চেয়ারম্যান বেলায়েত হোসেন লিটন মাঝি পুরো বিষয়টিকে ‘চক্রান্ত’ দাবি করেছেন।

এ ঘটনায় দুপক্ষের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় বর্তমানে টংগিবাড়ীতে দুটি রাজনৈতিক গ্রুপের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।

এদিকে ইউপি চেয়ারম্যান বেলায়েত হোসেন লিটন মাঝির বিরুদ্ধে এই মামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন নাম-পরিচয়বিহীন (ফেইক আইডি) থেকে অশ্লীল ছবি ছড়ানো হচ্ছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, টংগিবাড়ীর আব্দুল্লাপুর ইউনিয়নের সালিমাবাদ এলাকার হাজ্বী মোঃ লাল মিয়ার পুত্র কাতারপ্রবাসী হাজ্বী আব্দুল আজিজ (৫০) ১০ বছর আগে বিয়ে করেন আমতলী এলাকার সাফী বেপারীর মেয়েকে (৩৫)। সেই ঘরে তাদের একটি ছেলে ও একটি মেয়ে রয়েছে।

আব্দুল আজিজ দীর্ঘদিন বিদেশে থাকলেও নিয়মিত সংসারের ভরণ-পোষনের খরচ দিতেন। এরপরে কয়েক মাস আগে স্থানীয় মৃত লতিফ মুন্সির পুত্র শাহিন মুন্সি (৪৫) এর সাথে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন প্রবাসী আব্দুল আজিজের স্ত্রী। এরপর তাদের একসাথে থাকা ও মেলামেশা নিয়ে এলাকায় গুঞ্জন উঠলে তারা সম্প্রতি হুযুরের উপস্থিতিতে ধর্মমতে বিয়ে করেন বলে সবাইকে জানান শাহিন মুন্সি।

প্রত্যক্ষদর্শী ব্যক্তিরা জানান, গত ৫ মে এসব বিষয় নিয়ে স্থানীয় আবু বকর সহ কয়েকজনের সাথে শাহিন মুন্সির কথাকাটাকাটি ও একপর্যায়ে শাহিন মুন্সিকে মারধরের ঘটনা ঘটে। শাহিন জখম নিয়ে প্রথমে হাসপাতাল পরে থানায় গিয়ে অভিযোগ দেন।

পরদিন (৬ তারিখ) রাতে আপোষ-মীমাংসার উদ্দেশ্যে সোনারং-টংগিবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান লিটন মাঝির বাড়িতে আসেন। এসময় তার পক্ষে চেয়ারম্যানের বাড়িতে আসেন তার তথাকথিত স্ত্রী’র ভাই নূর ইসলাম (৪৩)।

নূর ইসলাম ‘আমার বিক্রমপুর’ কে এসব তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেন।

স্থানীয় টিটু মাঝি জানান, পরদিন বৃহস্পতিবার (৭ মে) বিকেলে দুক্ষকে নিয়ে মীমাংসার উদ্দেশ্যে সরেজমিন তদন্তে আমতলা এলাকায় যান চেয়ারম্যান। সেখানে আগে থেকেই অপেক্ষা করছিলেন শাহিন মুন্সী।

শাহিন মুন্সি সেসময় অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতি সৃষ্টি করার চেষ্টা করলে তাকে দমাতে চেষ্টা করেন বলে দাবি করেন চেয়ারম্যান। তবে শাহিন মুন্সির দাবী সেসময় তাকে বেধম মারধর করা হয়। পরদিন শুক্রবার (৭ মে) সালিশের তারিখ নির্ধারন করে সেখানে কঠোর বিচারের আশ্বাস দিয়ে চলে আসেন চেয়ারম্যান। এরপর স্থানীয় রব হাওলাদারের পুত্র নজরুল ইসলাম (৩০) বাদি হয়ে চেয়ারম্যান লিটন মাঝিকে প্রধান আসামী করে টংগিবাড়ী থানায় মামলা দায়ের করেন।

এদিকে পুলিশী তদন্তের দিন উপস্থিত থাকা কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, উপজেলা নির্বাচনের বিরোধের জের ধরে সোনারং-টংগিবাড়ী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রাহাত খান রুবেল ও সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান এমিলি পারভিনের উপস্থিতিকে ঘিরে পুরো ঘটনাটি রাজনৈতিক বিরোধের ইঙ্গিত বহন করে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সোনারং-টংগিবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক বেলায়েত হোসেন লিটন মাঝি বলেন, এ ঘটনায় অধিকতর গোপন তদন্ত করলে সঠিক ঘটনা বের হয়ে আসবে। ‘রুবেল খান, এমিলি পারভীন, শাহিন মুন্সি, নজরুল ইসলাম, লিটন শেখ, সুমন খান এরা ৬ জন মিলে ষড়যন্ত্র করে এ নাটক সাজিয়েছে।

তিনি বলেন, এটা আজকের ষড়যন্ত্র না। ২-৩ বছর যাবৎ ষড়যন্ত্র চলছে। তদন্তের দিন যারা প্রকৃত স্বাক্ষী তারা কেউই উপস্থিত ছিলেন না। তারা পরিকল্পিতভাবে ১০০-১৫০ লোক কোথা থেকে জড়ো করলো? তাদের আগে বিচার হওয়া উচিৎ।

প্রবাসীর স্ত্রী’র তথাকথিত স্বামী শাহিন মুন্সি ‘আমার বিক্রমপুর’ কে জানান, তাদের বিয়ের কাবিননামা নেই। তবে মেয়ের বড় ভাই সহ পরিবারের অন্যান্যদের উপস্থিতিতে বিয়ে হয়েছে।

মেয়ের বড় ভাই নূর ইসলাম বলেন, ‘বিয়ের কথা তিনি জানেন না। শাহিন মুন্সি লোক হিসেবে ভালো না। সে নেশাগ্রস্থ।

মেয়ের স্বামী প্রবাসী আব্দুল আজিজ ‘আমার বিক্রমপুর’ কে বলেন, আমার টাকা পয়সা নষ্ট করে পরপুরুষের সঙ্গে অবৈধভাবে সংসার করা মেনে নিবো না। আমি আইনের আশ্রয় নিবো।

এ বিষয়ে সোনারং-টংগিবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান লিটন মাঝির বিরুদ্ধে মামলার বাদী নজরুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি বক্তব্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করে ফোন কেটে দেন।

টংগিবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আওলাদ হোসেন মামলার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, মামলা চলমান রয়েছে। তদন্ত চলছে।

error: দুঃখিত!