২২শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
বুধবার | রাত ১২:১৫
জাতির সূর্যসন্তানদের স্মরণের দিন আজ
খবরটি শেয়ার করুন:

মুন্সিগঞ্জ ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৪, ডেস্ক রিপোর্ট (আমার বিক্রমপুর)

বাঙালির শোষণ-বঞ্চনা থেকে মুক্তির লড়াইয়ে আলোকবর্তিকা হয়ে বুদ্ধিভিত্তিক মনস্তত্ব গঠনে ভূমিকা রেখে যারা অকাতরে বিলিয়ে গেছেন প্রাণ, জাতির সেই সূর্যসন্তানদের স্মরণে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন হচ্ছে শনিবার।

একাত্তরের ২৫ মার্চ কালরাত থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধের পুরোটা সময়জুড়ে বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে পাকিস্তানি বাহিনী। তবে বিজয়ের প্রাক্কালে এ হত্যাযজ্ঞ ভয়াবহ রূপ নেয়। আর এ কাজে তাদের সহযোগিতা করেছিল এ দেশীয় দোসররা।

ডিসেম্বরের মধ্যভাগে মুক্তিযুদ্ধে বাঙালির বিজয় যখন অনিবার্য; তখন রাজাকার, আল-বদর বাহিনীর সহযোগিতায় পাকিস্তানি বাহিনী হত্যা করে বাংলাদেশের প্রথিতযশা বুদ্ধিজীবীদের; এর উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশকে পঙ্গু করে দেওয়া।

দীর্ঘ নয় মাস সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাঙালির বিজয় যখন আসন্ন, তখনই ঘটে ইতিহাসের নিকৃষ্টতম সেই হত্যাকাণ্ড।

১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী পরিকল্পিতভাবে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, চিকিৎসক, শিল্পী, লেখক, সাংবাদিকসহ বহু খ্যাতিমান বাঙালিকে বাসা থেকে তুলে নিয়ে হত্যা করে।

নিজেদের পরাজয় নিশ্চিত জেনেই পাকিস্তানি বাহিনী ওই নিধনযজ্ঞ চালায়; তাদের উদ্দেশ্য ছিল স্বাধীনতার পর যেন বাংলাদেশ যাতে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে না পারে- তা নিশ্চিত করা।

শরীরে নিষ্ঠুর নির্যাতনের চিহ্নসহ জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের লাশ পাওয়া যায় মিরপুর ও রায়েরবাজার এলাকায়। পরে তা বধ্যভূমি হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠে।

বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের ৫৩তম বার্ষিকীতে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত গঠন ও বুদ্ধিভিত্তিক পরামর্শ দেওয়ার ক্ষেত্রে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের ভূমিকা স্মরণ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন।

দিবস উপলক্ষে দেওয়া বাণীতে রাষ্ট্রপ্রধান বলেছেন “দীর্ঘদিনের শোষণ, বঞ্চনা আর বৈষম্যের বিরুদ্ধে দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের মাধ্যমে বাঙালি জাতি ধীরে ধীরে মুক্তি সংগ্রামের জন্য প্রস্তুত হয়। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীনতা ঘোষণার সাথে সাথে গোটা জাতি মুক্তি সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ে। দীর্ঘ ৯ মাস সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ছিনিয়ে আনে চূড়ান্ত বিজয়।”

শহীদ বুদ্ধিজীবীদের অবদানের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “আমাদের বুদ্ধিজীবীরা তাদের মেধা ও প্রজ্ঞার প্রয়োগ, শিল্প-সাহিত্যের চর্চা ও ক্ষুরধার লেখনির মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত তৈরি এবং যুদ্ধকালীন মুজিবনগর সরকারকে বুদ্ধিবৃত্তিক ও কৌশলগত পরামর্শ দিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধকে সাফল্যের পথে এগিয়ে নিতে অসামান্য অবদান রাখেন।”

রাষ্ট্রপতি বলেন, “বস্তুত ২৫ মার্চ কালরাত থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধের পুরোটা সময়জুড়েই বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা হয়। তবে বিজয়ের প্রাক্কালে ১৪ ডিসেম্বর এ হত্যাযজ্ঞ ভয়াবহ রূপ নেয়।”

দেশের খ্যাতনামা বুদ্ধিজীবীদের সেই নির্মম হত্যাকাণ্ড যে জাতির জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি ছিল, সে কথা তুলে ধরে সাহাবুদ্দিন বলেন, “শহীদ বুদ্ধিজীবীদের রেখে যাওয়া আদর্শ ও পথকে অনুসরণ করে একটি অসাম্প্রদায়িক ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাভিত্তিক সুখী-সমৃদ্ধ এবং বৈষম্যহীন নতুন বাংলাদেশ গড়তে পারলেই তাঁদের আত্মত্যাগ সার্থক হবে বলে আমি মনে করি।”

প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস তার বাণীতে বলেন, “বাঙালি জাতির বিজয়ের প্রাক্কালে স্বাধীনতাবিরোধীরা দেশের শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক, সাহিত্যিক, চিকিৎসক, বিজ্ঞানী, আইনজীবী, শিল্পী, প্রকৌশলী, দার্শনিক ও রাজনৈতিক চিন্তাবিদসহ দেশের মেধাবী সন্তানদের নির্মমভাবে হত্যা ও গুম করে।

“তাদের মধ্যে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, মুনীর চৌধুরী, আনোয়ার পাশা, শহীদুল্লাহ কায়সার, গিয়াসউদ্দিন, ডা. ফজলে রাব্বি, আবদুল আলীম চৌধুরী, সিরাজউদ্দীন হোসেন, সেলিনা পারভীন, ড. জ্যোতির্ময় গুহ ঠাকুরতাসহ আরও অনেকে।”

ইউনূস বলেন, “শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে আমি সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তির যে কোনো চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র প্রতিহত করে নিজ নিজ অবস্থান থেকে দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানাচ্ছি।”

শহীদ বুদ্ধিজীবি দিবসের কর্মসূচি

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে জাতীয় কর্মসূচির পাশাপাশি জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মরণে সারাদেশে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করবে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান।

সকাল ৭টার পর রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টা মিরপুরে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টার নেতৃত্বে শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্য এবং যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধারা সকাল ৭টা ২২ মিনিটে মিরপুর বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে এবং সকাল সাড়ে ৮টায় রায়ের বাজার বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। পরে বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ সবার শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য খুলে দেওয়া হবে।

দিবসটি উপলক্ষে সংবাদপত্রে বিশেষ নিবন্ধ ও ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হবে। দেশের সকল জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে আলোচনা সভা হবে। বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ অন্যান্য বেসরকারি টিভি চ্যানেল দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করবে।

সকল মসজিদ, মন্দির, গির্জা, প্যাগোডা ও অন্যান্য উপাসনালয়ে হবে বিশেষ মোনাজাত ও প্রার্থনা।

দিবসের তাৎপর্য রক্ষায় শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ এলাকায় মাইক বা লাউডস্পিকার ব্যবহার না করার জন্য সর্বসাধারণের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়।

error: দুঃখিত!