১৯শে মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
বুধবার | সকাল ৯:১৪
কেমন আছেন নেপালে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স দূর্ঘটনায় বেঁচে যাওয়া মুন্সিগঞ্জের ইয়াকুব
খবরটি শেয়ার করুন:

মুন্সিগঞ্জ, ১২ মার্চ, ২০২০, সোহেল টিটু (আমার বিক্রমপুর)

নেপালের ত্রিভূবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স দূর্ঘটনার আজ ২বছর। ১২ মার্চ ২০১৮ সালের এই দিনে ৭১ জন আরোহী নিয়ে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স ফ্লাইট নম্বর ২১১,বাংলাদেশ ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ইউএস-বাংলা বিমানের একটি আন্তর্জাতিক যাত্রীবাহী ফ্লাইট নেপালের কাঠমান্ডুর ত্রিভূবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের কথা ছিলো।

১২ মার্চ ২০১৮ সালে স্থানীয় সময় দুপুর ২টা ১৫ মিনিটে অবতরণ করার সময় বিধ্বস্ত হয়। এয়ারলাইন্সটিতে মোট ৭১ জন আরোহী ছিলো।

যার মধ্যে ৫১ জন নিহত হয় ও ২০ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়।

জীবিতদের মধ্যে মুন্সিগঞ্জের ইয়াকুব আলী একজন। ইয়াকুব আলী একজন ব্যবসায়ী। দেশ-বিদেশের নামীদামি ব্রান্ডের কসমেটিকস-এর ব্যবসা করেন। থাকেন ঢাকার মোহাম্মদপুরে। ব্যবসার কাজে সেদিন ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সে করে নেপালের কাঠমুন্ড যাওয়ার কথা ছিলো তাঁর।

ইউএস-বাংলা বিমান বিধ্বস্তে ইয়াকুব আলী নিহত হওয়ার খবরে তাঁর মুন্সিগঞ্জের টংগিবাড়ী উপজেলার কামারখাড়ার গ্রামের বাড়িতে শোকের মাতনে চারিপাশ অন্ধকার হয়ে যায়।

পরিবার-পরিজন, বন্ধুবান্ধব, পাড়া-প্রতিবেশি, আত্মীয় স্বজন সকলের কান্নায় পরিবেশ ভারি হয়ে আসে। তাঁর মৃতদেহ ফিরে পাবার অপেক্ষায় প্রহর গোনছিলেন স্বজনরা।ভুলবশত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মৃতের তালিকায় ও ছিলো ইয়াকুব আলীর নাম।

রাতের বেলা ইয়াকুব আলীর সহযাত্রী কবির হোসেনের ছেলে শাওন তাঁর বাড়িতে ফোন করে জানান ইয়াকুব আলী বেঁচে আছেন। নেপালের কাঠমুন্ড মেডিকেল হাসপাতাল আইসিওতে আছে। এই খবরে পরদিন সকালে ইয়াকুব আলীর ছোট ভাই মো.দিপু ছুঁটে যান নেপালের কাঠমুন্ডতে। সেখানে দিপু পৌঁছে নিশ্চিত করেন সে বেঁচে আছে।

বেশ কিছুদিন কাঠমুন্ড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিওতে থাকার পর তাঁকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ নেপাল, বাংলাদেশ, ইন্ডিয়া এবং সিঙ্গাপুরসহ বিভিন্ন দেশে চিকিৎসার ব্যবস্থা করলেও এখনো যন্ত্রণায় কাঁতরাতে হয় তাঁকে।

মাঝে মাঝে সে ভয়ানক দৃশ্যের কথা মনে হলে আঁতকিয়ে ওঠেন তিনি। নেপালের কাঠমুন্ড’র ত্রিভূবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ইউএস-বাংলা বিমান বিধ্বস্তের আজ ২ বছর।

১২ মার্চ ২০১৮ সালের বিমান বিধ্বস্তের সে ভয়ানক দৃশ্য সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে ইয়াকুব আলী (রিপন) বলেন, ১২ মার্চ ২০১৮ সালে নেপালের কাঠমুন্ড ত্রিভূবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স দূর্ঘটনার আজ ২বছর অতিবাহিত হতে চলছে। আজ আমি বেঁচে আছি একমাত্র মহান সৃষ্টিজর্তার অশেষ কৃপায়। যার কৃপা না হলে আমার বেঁচে থাকার কথা নয়। বাবা-মা পরিবার,বন্ধুবান্ধব,আত্মীয় স্বজন সকলের দোয়াতে হয়তো আজ আমি সবার মাঝে ফিরে আসতে পেরেছি। সেদিন আমি ব্যবসার কাছে নেপাল যাচ্ছিলাম। ত্রিভূবন বিমানবন্দরে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের ২১১ নম্বর ফ্লাইটটি ৪বার লেন করার চেষ্টা করছে লেন করা হচ্ছিলোনা।

যাত্রীদের কান্নাকাটি চিৎকার চেঁচামেচি সে এক ভয়াবহ পরিস্থিতি। সে কথা মনে হলে গাঁ শিউরে ওঠে। তারপর বিমানটি ক্রেস হয়ে আগুন লেগে যায়। আমার মাথা, হাত-পা, মেরুদণ্ড, মুখের চোয়ালে গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত হয়। আমি মুহূর্তেই অজ্ঞান হয়ে যাই।

বেশকিছু দিন আইসিওতে ছিলাম। কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন দেশে চিকিৎসা দিলেও এখনো আমি সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে ওঠতে পারিনি। দীর্ঘদিন হুইলচেয়ারে চলাচল করতে হয়েছে। এখন হুইলচেয়ার ছাড়া চলাচল করতে পারলেও শারীরিক অবস্থা খুব বেশি ভালো নয়। মাথা, হাতপা, মুখের চোয়ালে শরীরের বিভিন্ন অংশে অনেক সমস্যা হয়। মাঝে মাঝে প্রচন্ড যন্ত্রণায় কাঁতরাতে হয়। যতদিন বেঁচে আছি এ যন্ত্রণা নিয়েই বেঁচে থাকতে হবে।

error: দুঃখিত!