মুন্সিগঞ্জ, ১৩ মে, ২০২০, নিজস্ব প্রতিবেদক (আমার বিক্রমপুর)
মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার চরকেওয়ার ইউনিয়নের শান্তি প্রিয় দুটি গ্রাম খাসকান্দি ও ছোট মোল্লাকান্দি গ্রাম। সম্প্রতি ফসলি জমির উপর দিয়ে ট্রলি চালানোর ঘটনাকে কেন্দ্র করে খাসকান্দি ও ছোট মোল্লাকান্দি গ্রামে দু’গ্রুপের মধ্যে বেশ কয়েকবার ককটেল হামলা ও বাড়ীঘর ভাংচুরের ঘটনা ঘটে।
এলাকায় আধিপত্য ধরে রাখতে গড়ে উঠে একটি সক্রিয় সন্ত্রাসী বাহিনী। এই বাহিনীটি দীর্ঘ ১ মাস ধরে বিভিন্ন সময়ে গ্রামগুলোতে দফায় দফায় ককটেল হামলা ও ভাংচুর চালায়। এই বাহিনীর সক্রিয় সদস্যদের বিরুদ্ধে মুন্সিগঞ্জ সদর থানায় নিয়মিত দুইটি বিস্ফোরক মামলা চলমান রয়েছে।
এলাকাবাসী জানায়, করোনা আতংকের মধ্যে স্থানীয় খাসকান্দি গ্রামের আহাম্মদ হাওলাদার, মিনার হোসেন,মজিবর,রমজান বেপারী, নজরুল হাওলাদারসহ ১১ জনের একটি বাহিনী দীর্ঘদিন ধরে গ্রামগুলোতে ককটেল বিস্ফোরন ঘটিয়ে ত্রাশ সৃষ্টি করে আসছে। তারই ধারাবাহিকতায় ৬ই মে বুধবার সন্ধ্যায় আহাম্মদ বাহিনী ও তার লোকজন খাসকান্দি গ্রামে ককটেল হামলা চালায়। এতে বৃদ্ধা নারীসহ ৫ জন আহত হয়।
হামলাকারীরা যখন গ্রামে ককটেল চালায় তখন ঘরের ভিতর থেকে একজন নারী তার মোবাইল ফোনে হামলার দৃশ্য ধারন করে।
মোবাইলে ধারনকৃত দৃশ্যে দেখা যায়, খাসকান্দি গ্রামের রমজান বেপারী (৪৫) তার বাম হাতে বালতি ভর্তি ককটেল এবং ডান হাতে একটি তাজা ককটেল নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। রমজান বেপারী খাসকান্দি গ্রামের মৃত মোশারফ বেপারীর ছেলে। সে আহাম্মদ এবং নজির বাহিনীর অন্যতম সদস্য।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক নিরীহ গ্রামবাসী জানায়, আহাম্মদ হাওলাদার এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করার লক্ষে দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালিয়ে আসছে। পার্শবর্তী সীমানা ঘেষা ককটেলের জনপদ মোল্লাকান্দি ইউনিয়ন। এই বাহিনীর সদস্যরা মোল্লাকান্দি ইউনিয়নের চৈতারচর গ্রামের পাশে নদীর তীরে অবস্থান নেয়। গোলাবারুদ এবং ককটেল এবং ভাড়াটে সন্ত্রাসীদের দিয়ে একের পর এক হামলা চালায়। এলাকায় পুলিশ গেলে এই বাহিনীর সদস্যরা চৈতারচর এবং ছোট আমঘাটা গ্রামে আশ্রয় নেয়। এই ককটেল বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে থানায় দুটি বিস্ফোরক মামলা চলমান আছে। মামলাগুলো হলো ৮(৫)২০২০ এবং ১২(৪)২০২০। উক্ত মামলার আসামীরা এলাকায় প্রকাশ্যে ককটেল বিস্ফোরন ও ককটেল তৈরী করেই চলছে।
দিনের পর দিন তারা ককটেল তৈরী এবং বিস্ফোরন ঘটালেও পুলিশ আজও তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে পারেনি। এতে করে করোনার আতংকের মধ্যে গ্রামের মানুষগুলো হামলার আতংক নিয়ে দিন পার করছেন।
স্থানীয়রা আরো জানান, তুচ্ছ ঘটনার বিষয়টি দিন দিন ব্যাপক হচ্ছে শুধুমাত্র একজন প্রভাবশালী নেতার ইন্দনে। প্রভাবশালী ওই নেতা ইচ্ছা করলেই এ ঘটনার বিষয়টি মিমাংশা করতে পারে। কিন্তু সে মিমাংশা না করে দিন দিন ঘটনাটিকে জটিল এবং পরিস্থিতি উত্তপ্ত করে রাজনৈতিক ফায়দা লুটার চেষ্টা করছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজর এড়িয়ে হামলাকারীরা পাশ্ববর্তী মোল্লাকান্দি ইউনিয়নের চৈতারচর, আমঘাটা, চরডুমুরিয়া অবস্থান করে। বর্তমানে হামলাকারীরা মহেশপুর গ্রামে অবস্থান করছে।
সেখানে ক্যাডার ইউসুফ হাসান এর লোকজন তাদেরকে আশ্রয় দিচ্ছে। সেখান থেকে রাতের আঁধারে নদীতে থাঁকা সাঁকো পাড়ি দিয়ে প্রতিপক্ষকে লক্ষ করে উসকানিমূলক আচরন এবং ফাঁকা জায়গায় ককটেল নিক্ষেপ করে আতংক ছড়ায়। পুলিশ খাসকান্দি এলাকায় অবস্থান করলে তারা ঢুকে পড়ে মহেশপুর গ্রামে। সেখানে তারা অবস্থান করে আবার পুলিশ চলে গেলে কৌশলে হামলা চালানোর চেষ্টা চালায়।
এ বিষয়ে জানতে চেয়ে আহাম্মদ হাওলাদারকে ফোন করলে তিনি বলেন, প্রতিপক্ষরা আমাকে এবং আমার লোকজনদের হামলা করেছে এবং আমার লোকজনের বাড়ী ঘরে ভাংচুর করেছে।
আপনিসহ আপনার গ্রুপের নামে দুটি মামলা আছে তারপরও কেন এসব করেন? আপনার লোক রমজান বেপারীকে দেখেছি বালতি ভর্তি ককটেল নিয়ে হামলা চালাতে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ওরা আগে হামলা করেছে আমরা গ্রাম থেকে চলে গেছি। রমজানের হাতে ককটেল এটা মনে হয় কয়েকদিন আগের ছবি।
ককটেল বিস্ফোরন তো ১৫ দিন ধরেই হচ্ছে? এ সময় তিনি বলেন রমজান হামলার সময় ছিলো কিনা ওইটা আমার জানা নেই।
বিস্ফোরক মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এস আই ইব্রাহিম বলেন, পুলিশের একাধিক টিম প্রতিদিন এলাকায় টহল দিচ্ছে। হামলার সাথে জড়িত দুইজনকে আটক করা হয়েছে। বাকী আসামীদের আইনের আওতায় আনার জন্য আমাদের চেষ্টা অব্যাহত আছে।