১১ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
মঙ্গলবার | বিকাল ৩:৩৩
ইউপি চেয়ারম্যান সুমন হ.ত্যা.কা.ণ্ড: গুলি করে প্রাইভেটকারে করে পদ্মা সেতু পার হন নুর মোহাম্মদ
খবরটি শেয়ার করুন:

মুন্সিগঞ্জ, ১০ জুলাই ২০২৪, নিজস্ব প্রতিনিধি (আমার বিক্রমপুর)

মুন্সিগঞ্জের টংগিবাড়ীতে পুলিশের উপস্থিতিতে পাচগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সুমন হাওলাদারকে গুলি করে হত্যা মামলার প্রধান আসামি নুর মোহাম্মদকে ৩ দিনেও গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। দেশের সম্ভাব্য সকল জায়গায় অভিযান চালিয়েও ওই আসামির কুলকিনারা পাচ্ছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এমনকি আসামি দেশের অভ্যন্তরে রয়েছে না বিদেশে পালিয়ে গেছে সে তথ্যও নেই পুলিশের কাছে।

এ নিয়ে ক্ষুব্ধ নিহতের স্বজন ও এলাকাবাসী। পুলিশের উপস্থিতিতে গুলি করে অপরাধী পালিয়ে গেল কিভাবে সে প্রশ্ন উঠেছে উপজেলার শীর্ষ জনপ্রতিনিধিসহ স্বজন-এলাকাবাসীর মাঝে।

সোমবার বাদ যোহর পাঁচগাও আলহাজ্ব ওয়াহেদ আলী দেওয়ান উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে সুমন হাওলাদারের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে পুলিশের উপস্থিতি থাকা সত্ত্বেও কিভাবে গুলি করে অপরাধী পালিয়ে যায় সে প্রশ্ন তোলেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান কাজী ওয়াহিদসহ অন্যরা।

পরে সেখানে উপস্থিত টংগিবাড়ী থানার ওসি মোল্লা সোহেব আলী বক্তব্য দিতে গিয়ে বলেন, ‘যেহেতু আমি প্রতিনিধিত্ব করি ব্যর্থতা আসলে আমারই। আমি এটি স্বীকার করি। তবে, আপনাদের সবাইকে কথা দিয়ে যাচ্ছি বাংলার বুকে ও যেখানেই থাকুক না কেন- ইতিমধ্যে আরও একজন নারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ওর পরিবারসহ ওর শাখা-প্রশাখা যেখানে রয়েছে, আমরা দেখিয়ে দিতে চাচ্ছি- যে এসমস্ত কাজ করে কেউ যাতে পার পেতে না পারে। আপনারা প্রত্যেকে যদি আমাকে সহযোগিতা করেন ও বাংলাদেশ পার হয়ে যেতে পারবে না। আর বাংলাদেশ যদি পার না হয় ও যেখানে থাকুক না কেন তাকে আইনের আওতায় আনার জন্য সক্ষমতা আমার রয়েছে বলে আমি মনে করি। আপনারা ধৈর্য হারাবেন না, আমার প্রতি আস্থা রাখেন।’

সোমবার রাতে (৮ জুলাই) টংগিবাড়ী থানায় সুমন হত্যার ঘটনায় ৭ জনের নামোল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ২-৩ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন নিহতের ছোট ভাই পুলিশ সদস্য এইচ এম ইমন হাওলাদার।

তিনি বলেন, ‘২ দিনেও প্রধান আসামিকে গ্রেপ্তার করতে না পারা হতাশাব্যঞ্জক। ঘটনার সময় পুলিশ উপস্থিত থাকলেও তারা অপরাধীকে ধরেনি। এমনকি ধরার চেষ্টাও করেনি। অথচ সে প্রকাশ্যে গুলি করে সবার সামনে দিয়ে গিয়ে প্রাইভেটকার ভাড়া করে পালিয়ে গেছে। বোঝাই যাচ্ছে পুলিশ চেষ্টা করলে অপরাধীকে ধরতে পারতো। তাদের কাছে যথেষ্ট সময় ছিলো।’

নিহত ইউপি চেয়ারম্যান সুমন হাওলাদারের স্ত্রী এলাছ বেগম বলেন, ‘আমার ছেলে-মেয়েরা সারাক্ষণ জিজ্ঞাসা করছে বাবা কোথায়, বাবা কেন অ্যাম্বুলেন্সে শুয়ে আছে কখন বাড়ি ফিরবে। ওদের উত্তর দেয়ার মত কোন ভাষা আমার জানা নেই।’

নিহত এইচ এম সুমন হাওলাদার পাঁচগাও গ্রামের পিয়ার হোসেন হাওলাদারের পুত্র। ২০২৩ সালের মার্চে নৌকা প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দীতা করে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন তিনি। সুমন ৩ বছর বয়সী ছেলে সালমান সাদি ও ৫ বছর বয়সী মেয়ে জান্নাতুল সেজদার জনক।

জানা গেছে, ইউপি চেয়ারম্যান সুমন হত্যা মামলায় পলাতক নুর মোহাম্মদ হাওলাদারকে প্রধান আসামি ও আটক ৩ জনসহ পলাতক নুর আহম্মেদ হাওলাদার ওরফে ভোলা ও ইউনিয়নটির সাবেক চেয়ারম্যান মিলেনুর রহমান মিলেনকে আসামি করা হয়েছে।

গ্রেপ্তারের পর কারাগারে রয়েছেন, পাঁচগাও এলাকার কাওসার হাওলাদার (৪৭), শেখ নুর হাওলাদার (৫৫) ও নুর হোসেন (৫০)। আজ বুধবার (১০ জুলাই) আদালতে তাদের রিমাণ্ড শুনানী রয়েছে।

গেল রোববার (৭ জুলাই) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পাঁচগাও আলহাজ্ব ওয়াহেদ আলী দেওয়ান উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ইউপি চেয়ারম্যান সুমন হাওলাদারকে গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে। দুপুর পৌনে ২ টার দিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মারা যান তিনি। পরে সুমনের মরদেহ টংগিবাড়ী থানায় পুলিশ হেফাজতে নিয়ে আসা হয়। প্রায় দেড় ঘন্টা পর বিকাল সাড়ে ৩ টার দিকে মরদেহের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরির সময় হৃদস্পন্দনের অস্তিত্ব রয়েছে এমনটা দাবি উঠলে পুলিশ তৎক্ষণাৎ মরদেহটি মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে দ্বিতীয় দফায় পরীক্ষা-নিরিক্ষা শেষে ইউপি চেয়ারম্যান সুমন হাওলাদারকে মৃত ঘোষণা করা হয়।

সোমবার বাদ যোহর পাঁচগাও আলহাজ্ব ওয়াহেদ আলী দেওয়ান উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে উপজেলা ইউএনও, ওসি, চেয়ারম্যানসহ অসংখ্য নেতা-কর্মী, সমর্থক এবং স্থানীয় জনতার উপস্থিতিতে জানাজা শেষে সুমন হাওলাদারের মরদেহ সামাজিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।

জানতে চাইলে মুন্সীগঞ্জ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) মোহাম্মদ বদিউজ্জামান বলেন,  ‘আমরা সর্বাত্মকভাবে চেষ্টা করছি প্রধান আসামি নুর মোহাম্মদকে গ্রেপ্তারের। যাতে দেশ ছেড়ে পালাতে না পারেন সেই ব্যবস্থাও নেয়া হয়েছে। তবে, বর্তমানে সে দেশে আছে না বিদেশে চলে গেছে সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য আমাদের কাছে নেই।’

error: দুঃখিত!