বিক্রমপুরের ভাগ্যকুলের বিখ্যাত জমিদার যদুনাথ রায়ের বাড়িটিকে ড. হুমায়ুন আজাদ নাম দিয়েছিলেন ‘বিলের ধারে প্যারিশ শহর’।
আড়িয়ল বিলের দক্ষিণ দিকে তিনি ও তার ভাই প্রিয়নাথ রায় নির্মাণ করেছিলেন একই রকম দেখতে দুটি প্রাসাদ।
সেখানে তারা বিদ্যুৎ উৎপাদন করেছিলেন, ছিল সোয়ারেজ লাইন, বিশালাকৃতির দুটি দিঘি ছিল, বাড়িজুড়ে ছিল বহুরকমের ফুল ও ফলের গাছ। খাপড়াওয়ার্ড খ্যাত লেখক আব্দুস শহীদ তার ‘কারাস্মৃতি’ গ্রন্থে ফুল বাগানের বর্ণনা দিয়েছেন। এখনো বাহারী নাগলিঙ্গম, বিশালাকৃতির কাঠবাদাম, বোম্বে লিচু, সুমিষ্ট আম গাছ রয়েছে। অশোক গাছটিতে এখনো ফুল ফুটলে মনে হয় ভোরে সূর্য উকি দিয়েছে। পুকুর ছিল মাছে পরিপূর্ণ, আলাদাভাবে কূপে ছিল রঙিন মাছ। বাড়ি থেকে পদ্মা পর্যন্ত ছিল পাকা রাস্তা।
এখানে এখন নির্মিত হয়েছে ‘বিক্রমপুর জাদুঘর’। জাদুঘরের ছাঁদে দাঁড়ালে সাড়ে তের একরের বাড়িটিকে মনে হয় অরণ্য। যে গাছটির শুধু কাণ্ডের ছবি তোলা সম্ভব হয়েছে সেটিই কাঠ বাদাম বা জংলি বাদাম গাছ।
যদুনাথ রায় বাংলাদেশ ছেড়ে যেতে চাননি। আত্মীয়-স্বজনের অনবরত চাপ ছিল। পরবর্তীতে সরকারের উপর চাপ তৈরি করায় ১৯৬৫ সালের যুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী যদুনাথ রায়কে জোরজবস্তি ভাগ্যকুল স্টীমার ঘাট থেকে স্টীমারে তুলে দেয়।
তিনি নদীর পাড়ে নেমে সারা শরীরে পলি মেখে অশ্রুসজল বিদায় নেন। এরপর তিনি বেশিদিন বাঁচেন নি।